চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে আ.লীগের বাদপড়া কাউন্সিলরদের অধিকাংশই নির্বাচন করছেন

চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে আ.লীগের বাদপড়া কাউন্সিলরদের অধিকাংশই নির্বাচন করছেন

নিজস্ব প্রতিবেদক ।।

ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মধ্যে আসন্ন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) নির্বাচনকে সামনে রেখে বিদ্রোহ মনোভাবের সৃষ্টি হয়েছে। সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে কৌশলগত কারণে একাট্টা থাকলেও কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে মস্ত বড় ভুল রয়েছে- এমন অভিযোগ তুলে নির্বাচনে থাকার ঘোষণা দিচ্ছেন অনেকে।

পুরাতনকে অবসরে দিয়ে নতুনকে সুযোগ করে দেয়ার ভালো উদ্যোগে কিছু এমন কিছু ব্যক্তি দলীয় সমর্থন পেয়েছেন যাদের অনেকের বিরুদ্ধে রয়েছে পতিতা ব্যবসা, মাদক ব্যবসা ও পৃষ্ঠপোষকতা, বিভিন্ন অপরাধ চক্র পরিচালনা এবং কিশোর গ্যাং পরিচালনাসহ নানান সামাজিক অপরাধে যুক্ত কিছু ব্যক্তি দলীয় সমর্থন পেয়েছে চলে তৃণমূল নেতা-কর্মীরা অভিযোগ করেছেন। তাদের অভিযোগ, এলাকার উন্নয়নে যে কখনো ছিল না, এলাকায় যার বিচরণ নেই কিংবা নেতা-কর্মীবান্ধব নয়- এমন ব্যক্তিরা মনোনয়ন পাওয়ায় তাদের মধ্যে ক্ষোভ, হতাশা ও বিদ্রোহ মনোভাবের সৃষ্টি হয়েছে যা ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ্য মাধ্যমগুলোতে ভাইরাল।

তৃণমূল নেতা-কর্মীদের এই মনোভাবের চাপে শেষ পর্যন্ত চসিক নির্বাচনে মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন অনেকেই। অনেকেই আবার আরো কয়েকদিন সময় নিচ্ছেন। আবার অনেকেই নিজে বিদ্রোহ না করলেও অন্য আরেকজনকে প্রার্থী করে মাঠ দখলে রাখার পরিকল্পনা এগিয়েছেন।

বাদ পড়া কাউন্সিলরদের মধ্যে আছেন ১ নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ডে তৌফিক আহমদ চৌধুরী, ২ নম্বর জালালাবাদ ওয়ার্ডে মো. সাহেদ ইকবাল (বাবু), ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডে মো. জহুল আলম জসিম, ১১ নম্বর দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ডে মোরশেদ আকতার চৌধুরী, ১২ নম্বর সরাইপাড়া ওয়ার্ডে মো. সাবের আহম্মেদ, ১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ডে মোহাম্মদ হোসেন হিরণ, ১৪ নম্বর লালখান বাজার ওয়ার্ডে আবুল ফজল কবির আহমদ (মানিক), ২৫ নম্বর রামপুর ওয়ার্ডে এস এম এরশাদ উল্লাহ, ২৭ নম্বর দক্ষিণ আগ্রাবাদ ওয়ার্ডে এইচ এম সোহেল, ২৮ নম্বর পাঠানটুলি ওয়ার্ডে মো. আবদুল কাদের, ৩০ নম্বর পূর্ব মাদারবাড়ি ওয়ার্ডে মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী, ৩১ নম্বর আলকরণ ওয়ার্ডে তারেক সোলেমান সেলিম, ৩৩ নম্বর ফিরিঙ্গি বাজার ওয়ার্ডে হাসান মুরাদ, ৪০ নম্বর উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ডে হাজী মো. জয়নাল আবেদীন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চসিকের বাদ পড়া বর্তমান কাউন্সিলরদের মধ্যে ২-১ জন ছাড়া বাকী সবাই আসন্ন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন। এরবাইরেও বেশকিছু ওয়ার্ডে নতুন প্রার্থীদের কেউ কেউ দলের বাইরে স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিতে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

জানা গেছে, আগামি ২৭ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কমিশনে নির্বাচন করতে ইচ্ছুক কাউন্সিলর ও মেয়র প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমাদানের শেষ সময়। হাতে আরো এক সপ্তাহ সময় থাকায় অনেকেই ধীরে চলো নীতিতে কাজ করছেন। চসিকের বর্তমান কাউন্সিলর দক্ষিণ কাট্টলীর মোরশেদ আকতার চৌধুরীসহ একাধিক কাউন্সিলর ইতোমধ্যে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন নাগরিক কমিটির ব্যানারে। এছাড়াও ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিম, ১০ নম্বর উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডে মনোয়ার উল আলম নোবেল, ১২ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর সাবের আহম্মদ, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে দলটির একাধিকপ্রার্থী, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর কবির আহমেদ মানিক ও নতুন প্রার্থী দিদারুল আলম মাসুমসহ ৪১ ওয়ার্ডের সবক’টিতে এবার বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে বেগ পেতে হবে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকে।

এছাড়াও চসিকের ৮ নম্বর শুলকবহর, ১৪ নম্বর লালখান বাজার ও ১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ডে সীমানা ও ভোটার সংক্রান্ত বড় ধরণের সমস্যা রয়েছে যা কোনোভাবেই এড়াতে পারবে না খোঁদ নির্বাচন কমিশন। সেক্ষেত্রে এই তিন ওয়ার্ডে মেয়র নির্বাচন হলেও স্থগিত হতে পারে কাউন্সিলর নির্বাচন।  এছাড়াও রয়েছে নানাবিধ চ্যালেঞ্জ।

অন্যদিকে বাদ পড়া মহিলা কাউন্সিলররা হলেন জেসমিন পারভীন জেসী (৭ ও ৮), আবিদা আজাদ (৯, ১০, ১৩), আনজুমান আরা বেগম (১৬, ২০, ৩২), ফারহানা জাবেদ (১২, ২৩, ২৪), ফেরদৌসি আকবর (২৮, ২৯, ৩৬)। তাদের মধ্যে আবিদা আজাদসহ বেশ কিছু নারী কাউন্সিলর বিদ্রোহ করতে পারেন বলে জানা গেছে।

তৃণমূল নেতাদের অভিমত- বহিষ্কারের যে হুমকি দেয়া হচ্ছে তা সাময়িক। নির্বাচনে জয় পেলে কিংবা হেরে গেলেও দলের প্রয়োজনে, তৃণমূলের দাবির মুখে তাদের ফিরিয়ে আনবে প্রাণপ্রিয় দল। কিন্তু নতুনের জোয়ারে যাতে কোনো অসৎ ব্যক্তি সরকারি ক্ষমতাকে ব্যবহার করে জনপ্রতিনিধি হতে না পারে সেদিকে নজর রাখা আমাদের পবিত্র দায়িত্ব।