চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কোন ওয়ার্ডে কে বিদ্রোহী প্রার্থী

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কোন ওয়ার্ডে কে বিদ্রোহী প্রার্থী
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কোন ওয়ার্ডে কে বিদ্রোহী প্রার্থী

নিজস্ব প্রতিবেদক ।।

সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৪১ সাধারণ ওয়ার্ডের মধ্যে ৩৪ ওয়ার্ডেই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সক্রিয় রয়েছেন। এরমধ্যে ১৭ ওয়ার্ডে রয়েছে বিদ্রোহী প্রার্থীদের শক্ত অবস্থান।

বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা এবং পুলিশের পক্ষ থেকে এই ওয়ার্ডগুলোকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এরমধ্যে দুটি ওয়ার্ডে দুর্বল বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় অনেকটা টেনশনমুক্ত আছেন দলীয় প্রার্থী।

১৫টি ওয়ার্ড অপেক্ষাকৃত কম ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টে উঠে এসেছে। ৪১ ওয়ার্ডের মধ্যে একক প্রার্থী রয়েছেন ৬ ওয়ার্ডে। ১৮ নং ওয়ার্ডে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। মূলত ভোটের মাঠে আওয়ামী লীগই আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ১নং দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছেন গাজী মোহাম্মদ শফিউল আজিম। বিদ্রোহী প্রার্র্থী হিসেবে মাঠে আছেন সাবেক কাউন্সিলর তৌফিক আহমদ চৌধুরী, আহমদ নূর, কাজল নাথ। দলের চার প্রার্থীকে নিয়ে বেকায়দায় রয়েছেন দলীয় নেতাকর্মীরা।

২নং জালালবাদ ওয়ার্ডে দলীয় কাউন্সিলর প্রার্থী মোহাম্মদ ইব্রাহিমের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাঠে আছেন সাবেক কাউন্সিলর মো. সাহেদ ইকবাল (বাবু)। সাহেদ ইকবাল বাবু এই ওয়ার্ডের খুবই জনপ্রিয় কাউন্সিলর ছিলেন। এই ওয়ার্ডেও আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থীর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।

সবচেয়ে বেশি বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে ৩নং পাঁচলাইশ ওয়ার্ডে। এই ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী সাবেক কাউন্সিলর কফিল উদ্দিন খান। তার সঙ্গে রয়েছেন আট বিদ্রোহী প্রার্থী। বিদ্রোহী প্রার্থীর মধ্যে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন মো. শফিকুল ইসলাম, মো. ইলিয়াছ আহমদ লেদু, মো. ইকবাল, মো. মোরশেদ হোসেন, মো. আবুল কালামসহ কয়েকজন। দলীয় প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে।

অপরদিকে ৪নং চান্দগাঁও ওয়ার্ডে ৮জন প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রয়েছেন ৬জন। দলের প্রার্থী সাবেক কাউন্সিলর মো. সাইফুদ্দিন খালেদ সাইফু ছাড়াও বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন জাহেদ গিয়াস উদ্দীন আহমেদ, নাছির উদ্দিন, মো. আনিসুর রহমান, মো. এসরারুর হক ও মো.সাইফুল্লাহ খান।

৫নং মোহরা ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোহাম্মদ কাজী নুরুল আমিন (মামুন)। বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রচারণায় সক্রিয়ভাবে মাঠে রয়েছেন আইয়ুব আলী চৌধুরী ও মো. ইব্রাহিম হোসেন।

৭নং পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী সাবেক কাউন্সিলর মো. মোবারক আলী। তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী মো. এয়াকুব মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।

৮নং শুলকবহর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবেক কাউন্সিলর মো. মোরশেদ আলমের সঙ্গে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন যুবলীগের মোহাম্মদ মহসীন ও মো. আবুল হাসান সুমন।

৯নং উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী নুরুল আবছার মিয়া। এই ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের অপর প্রার্থী, সাবেক কাউন্সিলর মো. জহুরুল আলম জসিমও নির্বাচনী মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

১০ নং উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সাবেক কাউন্সিলর নেছার উদ্দিন আহমেদ। বিদ্রোহী প্রার্থী আছেন যুবলীগের মনোয়ারুল আলম চৌধুরী।

১১নং দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ডে দলীয় প্রার্থী অধ্যাপক মো. ইসমাইল। সক্রিয় আছেন বিদ্রোহী প্রার্থী মোর্শেদ আকতার চৌধুরী, যুবলীগের সহ-সভাপতি খন্দকার এনামুল হক ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য মো. নুরুল হুদা চৌধুরী।

১২নং সরাইপাড়া ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. নুরুল আমিন। মাঠে আছেন বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক কাউন্সিলর মো. সাবের আহম্মেদ ও সাবেক কাউন্সিলর মো. আসলাম হোসেন।

১৩নং পাহাড়তলী ওয়ার্ডে প্রার্থী নগর যুবলীগের মো. ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরী। মাঠে আছে দলের মো. মাহামুদুর রহমান ও কাজী অতনু জামান।

১৪নং লালখান বাজার ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী আবুল হাসনাত মো. বেলালের প্রতিপক্ষ হচ্ছেন বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক কাউন্সিলর এফ কবির মানিক (আবুল ফজল করিম আহমেদ)।

১৬নং চকবাজার ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবেক কাউন্সিলর সৈয়দ গোলাম হায়দার মিন্টুর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসাইন।

১৭নং পশ্চিম বাকলিয়া ওয়ার্ডে আ. লীগ প্রার্থী মোহাম্মদ শহিদুল আলম। বিদ্রোহী প্রার্থী আছেন শোয়েব খালেদ।

১৮ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

১৯নং দক্ষিণ বাকলিয়া ওয়ার্ডে আ. লীগ প্রার্থী মো. নুরুল আলম। কাগজপত্রে দলের একাধিক প্রার্থী থাকলেও অনেকটা নীরব রয়েছেন।

২০নং দেওয়ান বাজার ওয়ার্ডে দলীয় প্রার্থী সাবেক কাউন্সিলর চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী। বিদ্রোহী প্রার্থী রফিকুল আলম বাপ্পী।

২২নং এনায়েত বাজার ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী হিসেবে সুবিধাজনক স্থানে রয়েছেন মোহাম্মদ সলিম উল্লাহ।

২৪নং উত্তর আগ্রাবাদ ওয়ার্ডে দলীয় প্রার্থী সাবেক কাউন্সিলর নাজমুল হক। বিদ্রোহী প্রার্থী আছেন মো. জাবেদ নজরুল ইসলাম, মো. রকিবুল আমিন, মো. রাশেদুল ইসলাম।

২৫ রামপুরা ওয়ার্ডে আ. লীগ প্রার্থী আবদুস সবুর লিটন। বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক কাউন্সিলর এস এম এরশাদ উল্লাহ দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।

২৬নং উত্তর হালিশহর ওয়ার্ডে আ. লীগ প্রাথী মোহাম্মদ হোসেন। বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন দলের মো ইলিয়াছ, মো. নাঈম উদ্দিন, মো. ইমতিয়াজ সবুজ।

২৭নং দক্ষিণ আগ্রাবাদ ওয়ার্ডে আ. লীগ প্রার্থী মো. শেখ জাফরুল হায়দার চৌধুরী। বিদ্রোহী প্রার্থী আছেন দলের সাবেক কাউন্সিলর এইচ এম সোহেল।

২৮নং পাঠানটুলী ওয়ার্ডে আ. লীগ প্রার্থী মো. নজরুল ইসলাম বাহাদুরের সাথে মাঠে আছেন সাবেক কাউন্সিলর মো. আব্দুল কাদের। বর্তমানে তিনি নির্বাচনী একটি সহিংসতার ঘটনায় কারাগারে রয়েছেন।

২৯নং পশ্চিম মাদারবাড়ি ওয়ার্ডে আ. লীগ প্রার্থী গোলাম মোহাম্মদ জোবায়ের। বিদ্রোহী হিসাবে মাঠে রয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, মো. আজিজ উর রশিদ।

৩০ নং পূর্ব মাদারবাড়ি ওয়ার্ডে আ. লীগ প্রার্থী আতাউল্লাহ চৌধুরী। বিদ্রোহী প্রার্থী আছেন চৌধুরী জহির উদ্দিন মোহাম্মদ বাবর।

৩১নং আলকরণ ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ থেকে সমর্থন পেয়েছেন মো. আব্দুস সালাম মাসুম। এই ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর তারেক সোলায়মান সেলিম মারা যাওয়ায় সাধারণ ওয়ার্ডের নির্বাচন স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন।

৩২নং আন্দরকিল্লা ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী জহর লাল হাজারীর সঙ্গে দুই বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। এরা হলেন নোমান লিটন এবং সুজিত সরকার।

৩৩নং ফিরিঙ্গীবাজার ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন। এই ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের অপর প্রার্থী সাবেক কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লবও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

৩৪নং পাথরঘাটা ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পুলক খাস্তগীর। বিদ্রোহী হিসেবে মাঠে আছেন মোহাম্মদ দিদারুল আলম, বিজয় কৃষ্ণ দাশ ও অনুপ বিশ্বাস।

৩৬নং গোসাইলডাঙ্গা ওয়ার্ডে দলের প্রার্থী হাজী জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তার সাথে বিদ্রোহী হিসেবে আছেন আওয়ামী লীগ নেতা মো. মোর্শেদ আলী।

৩৭নং উত্তর মধ্যম হালিশহর ওয়ার্ডে দলীয় কাউন্সিলর প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে নতুন তফসিল ঘোষণা করা হয়। এতে দলের একাধিক প্রার্থী রয়েছেন।

৩৮নং দক্ষিণ মধ্যম হালিশহর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের দলীয় সমর্থন পেয়েছেন গোলাম মোহাম্মদ চৌধুরী। বিদ্রোহী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মোহাম্মদ হাসান মুরাদ।

৪০নং উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী আব্দুল বারেক। তার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন বিদ্রোহী হিসেবে মো. ফরিদুল আলম, সাবেক কাউন্সিলর নাছির উদ্দিন আহমদ।

এদিকে নগরীর ৪১নং দক্ষিণ পতেঙ্গা ওয়ার্ডে দলীয় কাউন্সিলর পদে মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক কাউন্সিলর ছালেহ আহম্মদ চৌধুরী। এই ওয়ার্ডে বিদ্রোহী প্রার্থী মোহাম্মদ আলমগীর, মো. মঞ্জুর আলম, নুরুল আবছার, মো. রফিকও মাঠে আছেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সাথে আরও চারজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।