চট্টগ্রাম ফুটবল রেফারি সমিতির কার্যালয় সিলগালা, সিসিটিভি ফুটেজ জব্দ

দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে চায় তদন্ত কমিটি

চট্টগ্রাম ফুটবল রেফারি সমিতির কার্যালয় সিলগালা, সিসিটিভি ফুটেজ জব্দ
চট্টগ্রাম ফুটবল রেফারি সমিতির কার্যালয় সিলগালা, সিসিটিভি ফুটেজ জব্দ

ক্রীড়া ডেস্ক ।।

দুই বছর আগে সারা দেশে ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানের পর চট্টগ্রামেও থেমে যায় জুয়ার আসর। এমনকি চট্টগ্রামের যে ক্লাবগুলোতে জুয়া খেলা হতো, তাও বন্ধ রয়েছে। কিন্তু এসবের মধ্যেই স্টেডিয়াম এলাকায় নীরবে জুয়ার আসর চালিয়ে গেছে চট্টগ্রাম ফুটবল রেফারি সমিতি। 

বিভিন্ন সুত্রে জানা যায়, উপরে-নিচে পাহারা বসিয়ে কৌশলে জুয়াড়িদের ভেতরে ঢুকানো হতো। কেউ সামনের দরজা দিয়ে, আর কেউ পেছনের দরজা দিয়ে সেখানে ঢুকতো। কার্যালয়ের উপরে গ্যালারিতে পাহারায় থাকতো কেউ কেউ। আবার সামনের রাস্তা এবং অফিসের মূল ফটক থাকতো নজরদারিতে। কিন্তু এতকিছুর পরও শেষ রক্ষা হয়নি। ধরা পড়তে হলো জুয়াড়িদের। এদিকে এ ঘটনায় গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে রেফারি সমিতির কার্যালয়টি সিলগালা করে দেওয়া হয়। অফিস থেকে জব্দ করা হয় সিসিটিভি ফুটেজের হার্ড ডিস্ক।

এ ঘটনায় গঠিত ৯ সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রধান ও সিজেকেএস’র সহ-সভাপতি হাফিজুর রহমান জানান, তারা বেশ কয়েকটি বিষয় ধরে তদন্ত কাজ পরিচালনা করতে চান। কতদিন ধরে জুয়া খেলা চলছিল, মূল হোতা কে, জুয়ার অর্থ কোথায় গেছে, পাশাপাশি ফুটবল একাডেমি গঠন করে কত টাকা পাওয়া গেছে এবং সে টাকা কোথায় ব্যবহৃত হয়েছে-তা নিয়ে তদন্ত কাজ চলবে। এছাড়া দোষীদের কি শাস্তি দেওয়া যায় সে বিষয়ে সুপারিশ করার পাশাপাশি তদন্ত কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত কার্যালয়টি বন্ধ থাকবে বলে জানান তিনি।

তাছাড়া মঙ্গলবার পুলিশি অভিযানের পর রেফারি সমিতির অপকর্ম নিয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছেন অনেকেই। দীর্ঘদিন ধরে সমিতির সভাপতি ছিলেন সিএমপির একজন উপ পুলিশ কমিশনার। কিন্তু ২০১৫ সালে হঠাৎ করে সিজেকেএস সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনকে সমিতির সভাপতি করা হয়। তখন থেকে সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল হান্নান মিরন বিভিন্ন সময় টুর্নামেন্ট আয়োজন, কনসার্টের নামে মাঠ ভাড়া, জুয়ার আসর, সর্বশেষ ফুটবল একাডেমি করার মাধ্যমে বিশাল অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

অন্যদিকে যেসব রেফারিরা প্রতিবাদ করতেন তাদের কৌশলে বের করে দিয়ে নিজের রাজত্ব কায়েম করেন মিরন। বের করে দেওয়া রেফারিদের অনেকের ফিফায় কাজ করার সুযোগ ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা ক্যারিয়ারের লাগাম টানতে বাধ্য হয়। তদন্ত কমিটির প্রধান হাফিজুর রহমান জানান, তারা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করবেন।

গতকাল তদন্ত কমিটির কয়েকজন কর্মকর্তা গিয়েছিলেন সমিতির কার্যালয়ে। সমিতির সাজসজ্জা দেখে তাদের চোখ কপালে উঠার উপক্রম। তাদের একজন জানালেন, খোদ জেলা ক্রীড়া সংস্থার কার্যালয়ও এত সজ্জিত নয়। রেফারি সমিতির কার্যালয়ের দুই পাশে আরো দুটি কার্যালয় আছে। একটি বিজয় মেলা পরিষদের অন্যটি ক্রিকেট আম্পায়ার এন্ড স্কোরার এসোসিয়েশনের কার্যালয়। অথচ এই দুটি কার্যালয় সারা বছর এতটা জমজমাট থাকে না যতটা থাকে রেফারি সমিতির কার্যালয়। শুধু তাই নয়, গত তিন-চার বছর ধরে রেফারি সমিতির কার্যালয়ের দরজা কেউ খোলা দেখেনি। সারাক্ষণই তা বন্ধ থাকতো বলে জানিয়েছে প্রত্যক্ষদর্শীরা।

এদিকে গতকাল জেলা ক্রীড়া সংস্থার এক কর্মচারী আক্ষেপ করে বলেন, সিজেকেএস’র যে সব কর্মচারী স্টেডিয়াম এলাকায় থাকতো তাদের অন্যত্র সরিয়ে দিয়েছে সংস্থা। অথচ এই সমিতির কার্যালয়ে সারা বছরই অন্তত ১৫ থেকে ২০ জন রেফারি রাত্রিযাপন করতো। অথচ জেলা ক্রীড়া সংস্থা সেসব দেখেও দেখেনি।

এছাড়া কোনো কোনো রেফারি জুয়াড়িদের সাথে মিলে রাতে মদের আসর বসাতো বলেও অভিযোগ করেছে স্টেডিয়ামের একাধিক কর্মচারী। ২০১৭ সালের ১১ অক্টোবর সীমান্ত সেন নামে এক লোক রেফারি সমিতির জুয়ার বোর্ড ইজারা নেয়। দেড় বছর সে বোর্ড সীমান্ত সেন পরিচালনা করতেন। সীমান্ত সেনের বড় ভাই কৃষ্ণ কমল সেন জানান, তারা যখন বোর্ড চালাতেন, তখন প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ জন জুয়াড়ি খেলায় অংশ নিত। পরে তাদের সাথে ঝামেলা সৃষ্টি হওয়ায় জুয়া বন্ধ হয়ে গেছে বলা হলেও প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ জন সেখানে জুয়া খেলতে যেতো। উল্লেখ্য, মঙ্গলবার সেখান থেকে ১৯ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতদের আদালতে হাজির করা হলে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহনাজ রহমান তাদের জামিন মঞ্জুর করেন।

সুত্র. আজাদী