কাল বিশ্ববাসী দেখবে এক ভিন্ন সূর্যগ্রহণ, সূর্যগ্রহণের সময় নামাজ আদায় সুন্নত

কাল বিশ্ববাসী দেখবে এক ভিন্ন সূর্যগ্রহণ, সূর্যগ্রহণের সময় নামাজ আদায় সুন্নত

নিউজ ডেস্ক ।।

বিশ্ববাসী এক ভিন্ন সূর্যগ্রহণ দেখবে ২৬ ডিসেম্বর, বৃহস্পতিবার । এমন গ্রহণ শেষবার পৃথিবীর মানুষ দেখেছিলো ১৭২ বছর আগে।

এবারের গ্রহণের সময় সূর্যের চারপাশে থাকবে আগুনের বলয়। বিজ্ঞানীরা যাকে বলেন ‘রিং অব ফায়ার’। তাই এ গ্রহণ দেখার জন্য অনেকে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কেউ বিশেষ চশমা কিনে রাখছেন।

প্রায়ই দেখা যায়, বিশ্ববাসী বেশ আনন্দ, উৎসাহ ও কৌতূহল নিয়ে সূর্যগ্রহণ এবং চন্দ্রগ্রহণ প্রত্যক্ষ করেন। এ উপলক্ষে নানা আয়োজনও হয়। অনেকের মাঝে উৎসবের আমেজ লক্ষ্য করা যায়।

ঢাকায় সূর্যগ্রহণটি শুরু হবে সকাল ৯টা ১ মিনিট ১৬ সেকেন্ডে। ১০টা ২৮ মিনিট ৯ সেকেন্ডের সময়ে সর্বোচ্চ সূর্যগ্রহণ হবে। ওই সময় সূর্য সবচেয়ে বেশি ঢাকা পড়বে চাঁদের আড়ালে এবং সূর্যকে একটি অগ্নিবলয়ের মতো দেখাবে। সর্বোচ্চ দুপুর ১২টা ৮ মিনিট ২৫ সেকেন্ড পর্যন্ত চলবে।

সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণের সময়টি অনেকের কাছে আনন্দের হলেও ইসলাম এ সময়টিকে ভিন্নভাবে দেখে। সূর্যগ্রহণকালে পৃথিবীতে একটি ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়। গ্রহণকালে পশুপাখিদের মধ্যে ভীতির ভাব পরিলক্ষিত হয়।

নবী করিম (সা.)-এর জীবদ্দশায় সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণের ঘটনা ঘটেছে। সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণের সময় নবী করিম (সা.)-এর চেহারা ভয়ে বিবর্ণ হয়ে যেতো। তখন তিনি সাহাবিদের নিয়ে জামাতে নামাজ পড়তেন, আল্লাহতায়ালার দরবারে কান্নাকাটি করতেন; ক্ষমা প্রার্থনা করতেন।

এ বিষয়ে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা.) সেজদা করলেন এবং দীর্ঘ করলেন সেজদা। অতঃপর নামাজ থেকে অবসর গ্রহণ করলেন আর তখন সূর্য আলোকিত হয়ে গেছে। এরপর তিনি লোকদের উদ্দেশে খুতবা দিলেন এবং প্রথমে আল্লাহর প্রশংসা ও প্রশস্তি বর্ণনা করলেন। অতঃপর বললেন, সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর নিদর্শনাবলীর মধ্যে দু’টি নিদর্শন। তারা কারও মৃত্যু ও জীবনের কারণে গ্রহণগ্রস্ত হয় না। যখন তোমরা গ্রহণ দেখবে আল্লাহর নিকট দোয়া করবে এবং তার মহিমা ঘোষণা করবে, নামাজ পড়বে এবং দান-খয়রাত করবে।

অতঃপর রাসূল (সা.) বললেন, হে মুহাম্মদের উম্মতগণ! আল্লাহর কসম, আল্লাহ অপেক্ষা অধিক ঘৃণাকারী আর কেউ নেই। তিনি ঘৃণা করেন যে, তার কোনো বান্দা অথবা বান্দি ব্যাভিচার করবে। হে মুহাম্মদের উম্মতগণ! আল্লাহর কসম, যদি তোমরা জানতে যা আমি জানি, তাহলে তোমরা নিশ্চয় কম হাসতে এবং অধিক কাঁদতে।’ –সহিহ বোখারি: ১০৫২

দশম হিজরিতে যখন মদিনায় সূর্যগ্রহণ হয়, তখন নবী করিম (সা.) ঘোষণা দিয়ে লোকদের নামাজের জন্য সমবেত করেন। দীর্ঘ সময় নিয়ে ইমামতি করেন। ওই নামাজের কিয়াম, রুকু, সিজদা ইত্যাদি সাধারণ নামাজের চেয়ে অনেক দীর্ঘ ছিলো।

সূর্যগ্রহণের সময় নবী করিম (সা.)-এর এ আমল সম্পর্কে জেনে ইহুদি ও কাফেররা নানা ধরনের বিদ্রুপ করলো। তারা বললো, এ সময় এটা করার কী যৌক্তিকতা আছে? সূর্যগ্রহণের সময় চন্দ্রটি পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে চলে আসে বলে সূর্যগ্রহণ হয়, ব্যাস এতটুকুই! এখানে কান্নাকাটি করার কী আছে? কিন্তু ওই সময়টি যে সত্যিকারার্থে একটি বিপদসঙ্কুল- তা হাল সময়ের বিজ্ঞানীদের গবেষণায় প্রমাণিত। যারা আধুনিক সৌরবিজ্ঞান সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন তাদের কাছে বিষয়টি স্পষ্ট।

বিজ্ঞানীদের মতে, মঙ্গল ও বৃহস্পতি গ্রহ দু’টি কক্ষপথের মধ্যবলয়ে রয়েছে এস্টিরয়েড (Asteroid), মিটিওরিট (Meteorite) ও উল্কাপিন্ড প্রভৃতি ভাসমান পাথরের এক সুবিশাল বেল্ট। এগুলোকে এককথায় গ্রহানুপুঞ্জ বলা হয়। যেকোনো সময় এ বেল্ট থেকে কোনো পাথর নিক্ষিপ্ত হয়ে পৃথিবীর বুকে আঘাত হানতে পারে।

বিজ্ঞানীরা বলেন, সূর্য অথবা চন্দ্রগ্রহণের সময় ঝুলন্ত পাথরগুলো পৃথিবীতে ছুটে এসে আঘাত হানার আশংকা বেশি থাকে। কারণ হচ্ছে, এ সময় সূর্য, চন্দ্র ও পৃথিবী একই সমান্তরালে, একই অক্ষ বরাবর থাকে। ফলে তিনটির মধ্যাকর্ষণ শক্তি একত্রিত হয়ে ত্রিশক্তিতে রূপান্তরিত হয়। এমন মুহূর্তে যদি কোনো পাথর বেল্ট থেকে নিক্ষিপ্ত হয়, তখন এই ত্রিশক্তির আকর্ষণের ফলে সেই পাথর প্রচণ্ড শক্তিতে, প্রবলবেগে পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসবে। এ প্রচণ্ড শক্তি নিয়ে আসা পাথরটিকে প্রতিহত করা তখন পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের পক্ষে অসম্ভব। ফলে পৃথিবীর একমাত্র পরিণতি ধ্বংস। যে মানুষ মহাশূন্যের এ তত্ত্ব জানে, তার তো শঙ্কিত হবারই কথা। নবী করিম (সা.) এ বিষয়ে জানতেন বলেই সূর্য বা চন্দ্রগ্রহণের সময় আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করতেন, নামাজ পড়তেন।

এ দৃষ্টিকোণ থেকে বলা চলে, সূর্য বা চন্দ্রগ্রহণের সময় নবী করিম (সা.)-এর সেজদাবনত হওয়া, সৃষ্টিকূলের জন্য ক্ষমা চাওয়ার আমল ছিলো যুক্তিসঙ্গত। তাই আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, এই সঙ্কটময় সময়কে উৎসবের মুহূর্ত না বানিয়ে নামাজের মধ্যে কাটান, আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করুন।

আরবিতে সূর্যগ্রহণকে ‘কুসুফ’ বলা হয়, আর সূর্যগ্রহণের নামাজকে ‘নামাজে কুসুফ’ বলা হয়। এ নামাজ দুই রাকাত এবং তা সুন্নত। এটি জামাতের সঙ্গে আদায় করতে হয়। এ নামাজে আজান-ইকামত নেই। সালাতুল কুসুফের জামাতে শরিক হওয়ার জন্য লোকদের আহ্বান করা যাবে।

সূর্যগ্রহণের নামাজে সূরা ফাতেহার পর বড় বড় সূরা পড়বে এবং কেরাত আস্তে পড়বে। রুকু, সেজদা অনেক লম্বা করে আদায় করা সুন্নত। নামাজের পর ইমাম দোয়ায় মশগুল হয়ে যাবেন আর সব মুক্তাদি আমিন আমিন বলবেন। এভাবে সূর্য প্রকাশ না পাওয়া পর্যন্ত দোয়া করতে থাকবে। -ফাতাওয়া রহিমিয়া: ১/২২৬