করোনা ভাইরাসে চট্টগ্রামে আক্রান্ত ১৩ সাংবাদিক

করোনা ভাইরাসে চট্টগ্রামে আক্রান্ত ১৩ সাংবাদিক

প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের মধ্যে স্বাস্থ্যকর্মী, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে কাজ করছেন গণমাধ্যমকর্মীরা। প্রতিনিয়ত স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে মাঠে কাজ করছেন তারা। এতে গণমাধ্যমেও পড়েছে করোনার থাবা।

মঙ্গলবার (২৬ মে) রাত পর্যন্ত জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী পত্রিকা, টেলিভিশন, নিউজ অ্যাজেন্সি এবং অনলাইন পোর্টালে কর্মরত চট্টগ্রামের ১৩ জন সাংবাদিক করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।

আক্রান্তদের মধ্যে রয়েছেন সিনিয়র সাংবাদিক চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও চ্যানেল আই এর ব্যুরো প্রধান চৌধুরী ফরিদও।

বার্তা সংস্থা ইউএনবির চট্টগ্রাম প্রতিনিধি, চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের একজন প্রতিবেদক ও একজন ক্যামেরপারসন, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের একজন প্রতিবেদক ও দুইজন ক্যামেরাপারসন, যমুনা টেলিভিশনের একজন প্রতিবেদক এবং সময় টেলিভিশনের একজন প্রতিবেদক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।

প্রিন্ট মিডিয়ার মধ্যে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক পত্রিকা দৈনিক পূর্বকোণের একজন প্রতিবেদক, দৈনিক কর্ণফুলীর একজন প্রতিবেদক, দেশ রূপান্তর পত্রিকার একজন ফটো সাংবাদিক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের তালিকায় রয়েছেন চট্টগ্রাম ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল সিভয়েস এর একজন প্রতিবেদকও।

এদের মধ্যে একজন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। চারজন চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলেও দ্বিতীয়বার নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ না আসা পর্যন্ত এখনই ছাড়পত্র পাচ্ছেন না। অন্যরা নিজ বাসায় আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

চট্টগ্রামে কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সাংবাদিক নেতারা। গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য প্রেস ক্লাবে নমুনা পরীক্ষা চালু, আইসোলেশন সেন্টার প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা তুলে ধরে তারা বলছেন, সরকারের পাশাপাশি মালিক পক্ষকেও গণমাধ্যমকর্মীদের পাশে দাঁড়াতে হবে।

চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি আলহাজ্ব আলী আব্বাস বলেন, গণমাধ্যমকর্মীদের সুবিধার জন্য প্রেস ক্লাব ও সাংবাদিক ইউনিয়ন যৌথভাবে উদ্যোগ নিয়ে তাদের জন্য প্রেস ক্লাবে আলাদা নমুনা সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে। এতে যারা আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের দ্রুত শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে।

তিনি বলেন, এনজিও সংস্থা ব্র্যাকের সহায়তায় করোনার নমুনা সংগ্রহের জন্য চট্টগ্রামে যে ১২টি বুথ বসানো হচ্ছে তার মধ্যে একটি বুথ প্রেস ক্লাবে বসানো হবে। সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের সহযোগিতায় সাংবাদিকদের নমুনা পরীক্ষার সুবিধার্থে এ ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এছাড়াও গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য আলাদা একটি আইসোলেশন সেন্টার তৈরির বিষয়ে আমরা কাজ করছি।

বিএফইউজের সহ-সভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরী জানান, সাধারণ মানুষের কাছে সংবাদ পৌঁছে দিতে গণমাধ্যমকর্মীদের বসে থাকার কোনো সুযোগ নেই। গণমাধ্যমকর্মীরা প্রথম থেকেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন। তাই আমি মনে করি তথ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে চট্টগ্রামে গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য একটি পৃথক আইসোলেশন সেন্টার থাকা প্রয়োজন।

চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, গণমাধ্যমকর্মীরা যাতে নিজেকে সুরক্ষিত রেখে দায়িত্ব পালন করতে পারেন তা নিয়ে প্রথম থেকেই আমরা সচেতন ছিলাম। প্রেস ক্লাব ও সাংবাদিক ইউনিয়নের যৌথ উদ্যোগে এবং স্বাস্থ্য বিভাগের সহযোগিতায় প্রেস ক্লাবেই নমুনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ম. শামসুল ইসলাম বলেন, তথ্য প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে হলে গণমাধ্যমকর্মীদের সুরক্ষিত রাখা জরুরি। তাই সাংবাদিকদের সর্বাত্মক সহযোগিতার চেষ্টা করছি আমরা।

টিভি জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নাছির উদ্দিন তোতা বলেন, যেহেতু এটি একটি অদৃশ্য বিষয়, তাই এটিকে কোনো ভাবেই এড়িয়ে যাওয়া যাচ্ছে না। তাই আমাদের বিকল্প ব্যবস্থা চিন্তা করতে হবে। যাতে নিজেকে সুরক্ষিত রাখা যায়।

চট্টগ্রামের সাংবাদিক নেতারা গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য একটি পৃথক আইসোলেশন সেন্টার তৈরির ব্যাপারে একমত পোষণ করেন এবং এ নিয়ে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছেন ।