আয়নী,আয়াত আর বর্ষারা কেন অনিরাপদ?

আয়নী,আয়াত আর বর্ষারা কেন অনিরাপদ?
আয়নী,আয়াত আর বর্ষারা কেন অনিরাপদ?

বিশেষ প্রতিবেদক ।।

গত ২১ মার্চ, ২০২৩ পাহাড়তলী থেকে নিখোঁজ হয় শিশু আবিদা সুলতানা আয়নী। শিশু আবিদা সুলতানা আয়নী নগরীর পাহাড়তলী কাজীর দীঘি সাগরিকার একটি বিদ্যালয়ে ৪র্থ শ্রেণির ছাত্রী। নিখোঁজের আট দিন পর অর্থাৎ আজ ২৯ মার্চ, বুধবার ভোরে পাহাড়তলীর মুরগি ফার্ম আলম তারার পুকুর পাড় এলাকার ডোবা থেকে শিশুটির গলিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন।

এ ঘটনায় মোহাম্মদ রুবেল নামের স্থানীয় এক তরকারি বিক্রেতাকে আটক করেছে পুলিশ । পুলিশের ধারণা শিশুটিকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। তার মা-বাবা জানায়, গত ২১ মার্চ স্কুলের যাওয়ার পথে তাকে বিড়ালছানা দেওয়ার লোভ দেখিয়ে স্থানীয় তরকারি বিক্রেতা মো. রুবেল অপহরণ করে নিয়ে যায়।

এর আগে গত বছর ২০২২ এর ১৫ নভেম্বর বিকেলে নিখোঁজ হয় ছোট্ট শিশু আয়াত। ওই বছর ৩০ নভেম্বর (বুধবার) দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর আকমল আলী রোডের শেষ প্রান্তে একটি খালের স্লুইচগেট থেকে আয়াতের বিচ্ছিন্ন দুই পায়ের অংশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ১০ দিন পর পিবিআই আবির আলী নামে এক যুবককে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর আবীর জানায়, আয়াতকে শ্বাসরোধ করে খুন করে মরদেহ কেটে ছয় টুকরো করে আবির। এরপর সেগুলো সাগরে ভাসিয়ে দেয়।

অন্যদিকে একই বছর ২৪ অক্টোবর, ২০২২ নিখোঁজ হয় ছোট্ট শিশু মারজানা হক। নগরীর কুসুম কুমারী বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে পড়ত সে। নিখোঁজের তিন দিন পর অর্থাৎ ২৭ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার বিকেলে নগরীর কোতোয়ালির জামাল খানের একটি নালা থেকে শিশুটির বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে এ ঘটনায় গ্রেফতার হন লক্ষণ দাশ নামের এক মুদি দোকানের কর্মচারী। গ্রেফতারের পর লক্ষণ জানায় মারজানাকে ১শ’ টাকার লোভ দেখিয়ে গোডাউনের ভেতর নিয়ে যায়। গোডাউনে নিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। ধর্ষণের পর রক্তাক্ত জখম হলে ভয়ে ওই শিশুকে মুখ ও নাক চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে খুন করে। পরে গোডাউনে থাকা টিসিবির সীলযুক্ত প্লাস্টিকের ওই বস্তা ভরে গোডাউনের ডান পাশে দেওয়ালের উপর দিয়ে নালায় ফেলে দেয়। এর কিছুক্ষণ পর ওই শিশুর কাপড় চোপড় আরেকটি বস্তায় ভরে একইভাবে নালায় ফেলে দেয়।

সবকটি ঘটনা চট্টগ্রাম নগরীর। দেশের ৬৪ জেলায় এসব ঘটনা অহরহ ঘটছে। যে কটি মিডিয়ায় প্রকাশ পাচ্ছে তা জানতে পারছি আমরা । বাকিসব আমরা জানতে পারছিনা ।

এই সমাজের প্রতিটা পদে পদে কতোটা অধঃপতন হলে এ ধরনের কর্মকাণ্ড ঘটে। নিস্পাপ এ শিশুগুলোর দোষ কোথায়? কেন তাদের মরতে হচ্ছে ? এ শিশুগুলো কোথায় নিরাপদ ?

আমাদের আশপাশেই রয়েছে এসব হায়েনা চোখ। এসব চোখ যতদিন উপড়ে ফেলা যাবেনা ততদিন এসব কর্মকাণ্ড চলবে। তাতে একের পর এক খালি হবে বাবা-মার বুক। একটা সন্তানের পেছনে কতখানি শ্রম মা-বাবাসহ আশপাশের মানুষ দেন তা সবাই জানেন। কিন্তু সামান্য কুকের্মর বলি হচ্ছে আমাদের শিশুগুলো। আর কোনো মায়ের বুক খালি হোক আমরা তা চাই না। সেজন্য প্রশাসনকে কঠোর ভূমিকা নিতে হবে।

আমাদের থাকতে হবে সচেতন। আমাদের চারপাশে এসব হায়েনাকে দেখে রাখতে হবে। তবেই আমাদের কোমল শিশুগুলো  জন্য স্বাধীন পরিবেশ তৈরি হবে। দেশে শিশুরা শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতন, শোষণ ও অবহেলার শিকার। এই পরিস্থিতিতে শিশুদের বিকাশ ব্যাহত হয়, যা শিশু অধিকারের লঙ্ঘন।

খালেদ / পোস্টকার্ড;