আওয়ামী লীগ প্রার্থী বদিউল আলম সীতাকুন্ড পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত

আওয়ামী লীগ প্রার্থী বদিউল আলম সীতাকুন্ড পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত
আ’লীগ প্রার্থী বদিউল আলম সীতাকুন্ড পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত

সীতাকুন্ড প্রতিনিধি ।। 

সীতাকুন্ড পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী (নৌকা) মুক্তিযোদ্ধা বদিউল আলম বিপুল ভোটে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। তার প্রাপ্ত ভোট ১০ হাজার ৭৯০। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি বিএনপির প্রার্থী (ধানের শীষ) মুক্তিযোদ্ধা আবুল মনছুর পেয়েছেন ৩ হাজার ৩০ ভোট। 

বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ, ধাওয়া, পাল্টা ধাওয়া এবং এক মেয়র প্রার্থীর নির্বাচন বর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে সীতাকুণ্ড পৌরসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ।

ভোটগ্রহণ শুরুর প্রথম দিকে ভোটার উপস্থিতি কিছুটা কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে ভোটার। সারাদিন উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটাধিকার প্রদান করেন ভোটাররা। এবারই প্রথমবারের মতো পৌরসভা নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে ভোটাররা যেমন নতুন উদ্দীপনায় ভোট দিয়েছেন, তেমনি অনেক স্থানে এই মেশিনে ভোট দিতে গিয়ে বিপাকে পড়েন ভোটাররা।

পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকায় বিষয়টি বুঝে উঠতে না পেরে অনেকেই ভোট দিতে অধিক সময় নিয়েছেন। এতে বাইরে লাইনে অপেক্ষা করে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে বাকি ভোটারদের। আবার অনেক কেন্দ্রে আঙ্গুলের ছাপ না মেলাতেও বিপাকে পড়েন ভোটাররা।

সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে বিরতিহীনভাবে চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করে ১৭টি কেন্দ্রের ৯৮টি বুথে ভোটগ্রহণ করা হয়।

সোমবার দিনভর অনুষ্ঠিত ভোট গ্রহণ শেষে ফলাফল গণনার পর বদিউল আলমকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। অন্যদিকে কাউন্সিলর পদে দুই জন নতুন মুখ ছাড়া বিজয়ী অন্য সবাই বর্তমান কাউন্সিলর।

এদিকে ফলাফল ঘোষণার পর থেকে বিভিন্ন স্থানে বিজয়ী প্রার্থীরা আনন্দ মিছিল, মিষ্টি মুখসহ নানাভাবে বিজয় উদযাপন করতে থাকেন। এতে পৌরসদর এলাকা সরগরম হয়ে উঠে। কয়েকটি কেন্দ্রে ভোটদানে বাধা, ইভিএম ভাঙচুর ও ভোট শেষে গোলাগুলির মতো কিছু ঘটনাও ঘটেছে ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সীতাকুণ্ড পৌরসভার নির্বাচনে মোট ১৩টি পদে পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন ৭৮ প্রার্থী। এখানে মোট ভোটার ৩৪৮১৩ জন। সোমবার ভোটগ্রহণ শেষে দেখা যায় নির্বাচনে ১৪২২৭ জন ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। তবে এর মধ্যে ৩৯টি ভোট বাতিল হয়েছে।

আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা বদিউল আলম নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন মোট ১০৮২৯ ভোট। এছাড়া তার প্রতিদ্বন্দ্বী ধানের শীষের প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল মুনছুর পেয়েছেন ৩০৭২ ভোট ও স্বতন্ত্র প্রার্থী জহিরুল ইসলাম মোবাইল প্রতীকে পেয়েছেন ২৮৭ ভোট।

এছাড়া কাউন্সিলর পদে বিজয়ীরা হলেন ১নং ওয়ার্ডে আ. লীগ প্রার্থী আনোয়ার ভূঁইয়া টেবিল ল্যাম্প প্রতীকে ৫৮৬ ভোট, ২ নম্বর ওয়ার্ডে আ’লীগ প্রার্থী বদিউল আলম জসীম উটপাখি প্রতীকে ৮১৮ ভোট (নতুন প্রার্থী) ৩ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির একেএম শামছুল আলম আজাদ টেবিল ল্যাম্প প্রতীকে ৬৯৫ ভোট, ৪ নম্বর ওয়ার্ডে আ.লীগের হারাধন চৌধুরী বাবু টেবিল ল্যাম্প প্রতীকে ১১৮১ ভোট, ৫ নম্বর ওয়ার্ডে আ. লীগ প্রার্থী শফিউল আলম চৌধুরী মুরাদ টেবিল ল্যাম্প প্রতীকে ৬৩১ ভোট, ৬ নম্বর ওয়ার্ডে আ. লীগ প্রার্থী দিদারুল আলম অ্যাপেলো গাজর প্রতীকে ৩৭২ ভোট, ৭ নম্বর ওয়ার্ডে আ. লীগ প্রার্থী ফজলে এলাহী পায়েল পাঞ্জাবি প্রতীকে ৭০৪ ভোট, ৮ নম্বর ওয়ার্ডে আ. লীগ প্রার্থী মোহাম্মদ মফিজুর রহমান পাঞ্জাবি প্রতীকে ২৪৭ ভোট ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে নির্বাচিত হয়েছেন আ. লীগ প্রার্থী জুলফিকার আলী মাসুদ শামীম টেবিল ল্যাম্প প্রতীকে ৫৪৯ ভোট। এছাড়া সংরক্ষিত মহিলা আসনে নির্বাচিতরা হলেন ১ নম্বর আসনে আনোয়ারা বেগম পেয়েছেন (আনারস) ১৬৯৯ ভোট, ২ নম্বর আসনে কামরুন-নাহার কাকলী (আনারস) ২৯২৩ ভোট, ৩ নম্বর আসনে খালেদা আক্তার (আনারস) পেয়েছেন ১৫১৩ ভোট।

সীতাকুণ্ড পৌরসভা নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও উপজেলা নির্বাচন অফিসার বুলবুল আহমেদ জানান, একটি অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে সোমবার।

সরেজমিনে গতকাল নির্বাচনী এলাকা ঘুরে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এদিন সকাল ৮টায় একযোগে ১৭টি ভোট কেন্দ্রের ৯৮টি বুথে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। সরেজমিনে পৌরসদরের সীতাকুণ্ড মহিলা কলেজ, বালিকা বিদ্যালয়, ডিগ্রি কলেজ, দত্তবাড়ি কেন্দ্র, ইয়াকুবনগর, পন্থিছিলাসহ বিভিন্ন কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে প্রত্যেকটি কেন্দ্রে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে ছিলো। আর এ কারণে শত শত নারী-পুরুষ বিনাবাধায় ভোট দিতে এসে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে থাকেন। দীর্ঘ লাইন ধরে ভোট দিয়েও খুশি ভোটাররা।

বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা ছাড়া ভোট সুষ্ঠু হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ধানের শীষের প্রার্থী আবুল মুনছুরের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট বিএনপি নেতা মাষ্টার জাকির হোসেন। এছাড়া বেশিরভাগ প্রার্থী এবং সাধারণ ভোটাররা দাবি করেছেন এমন একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দীর্ঘকাল পরে অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে নির্বাচন শেষে ৯নং ওয়ার্ডের শিবপুর কেন্দ্রে পরাজিত এক কাউন্সিলর প্রার্থী ছাত্রলীগ নেতা জাহেদ চৌধুরী ফারুক প্রতিপক্ষকে কেন্দ্র থেকে বের হতে বাধা দিলে তাকে ও তার সমর্থকদের হটাতে গুলি চালায় পুলিশ। এসময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে সেখানে প্রচুর র‌্যাব-বিজিবি ও পুলিশ সেখানে উপস্থিত হন। এসময় গুলিতে ফারুক আহত হন। পরে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিল্টন রায় ও পৌরসভা নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং অফিসার বুলবুল আহমদ বলেন, অতীতে সব নির্বাচনেই এর চেয়ে বেশি গন্ডগোল হয়েছিল। সে তুলনায় এবারের নির্বাচনকে একেবারেই সুষ্ঠু বলা চলে।

সিনিয়র আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার আতাউর রহমান বলেন, বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে।