আমরা আমাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে চাই : বানৌজা শের-ই-বাংলা’ নৌঘাঁটি উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী

আমরা আমাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে চাই : বানৌজা শের-ই-বাংলা’ নৌঘাঁটি উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী
আমরা আমাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে চাই : বানৌজা শের-ই-বাংলা’ নৌঘাঁটি উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী

আলমগীর হোসেন।।

কারো সঙ্গে কোন ধরণের যুদ্ধে জড়ানোর ইচ্ছে নেই জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের লক্ষ্য শুধুমাত্র আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা। আমরা আমাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে চাই। সরকার শুধুমাত্র দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য সশস্ত্র বাহিনীর সার্বিক উন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছে।

বুধবার (১২ জুলাই) পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় এভিয়েশন সুবিধা সম্বলিত অত্যাধুনিক ঘাঁটি ‘বানৌজা শের-ই-বাংলা’ এবং কয়েকটি যুদ্ধজাহাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনকালে (কমিশনিং) প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে প্রধান অতিথি হিসেবে ভিডিও টেলিকনফারেন্সের (ভিটিসি) মাধ্যমে ওই অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন। বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী কলাপাড়ার পায়রা বন্দর সংলগ্ন নতুন এ নৌ ঘাঁটির ঠিক উল্টোপাশেই পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র অবস্থিত। এ অঞ্চলের বেশ কিছু অতি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এবং প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সাগর-উপকূলীয় অঞ্চলের সার্বিক নিরাপত্তা ও সুরক্ষার জন্য এই নৌ ঘাঁটি চালু করা হলো। নতুন এই ঘাঁটিতে নবীন নাবিকদের প্রশিক্ষণ চলবে।

প্রধানমন্ত্রীর অনুমতিক্রমে নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম শাহীন ইকবাল নতুন এ ঘাঁটির অধিনায়ক কমডোর এম মহব্বত আলীর হাতে কমিশনিং ফরমান তুলে দেন। এসময় নৌবাহিনীর রীতি অনুযায়ী আনুষ্ঠানিকভাবে নামফলক উন্মোচন করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সাগর-উপকূলীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এভিয়েশন সুবিধা সম্বলিত নৌবাহিনীর আধুনিক ঘাঁটি ‘বানৌজা শের-ই-বাংলা’। পাশাপাশি পায়রা বন্দরসহ দেশি-বিদেশি জাহাজগুলোর সুরক্ষা নিশ্চিত করবে। একইসঙ্গে উপকূলীয় অঞ্চলে যে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগে দ্রুততম সময়ে সহযোগিতা প্রদান করবে এই নৌ ঘাঁটি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিবিধ সুবিধা সম্বলিত স্বয়ংসম্পূর্ণ বানৌজা শের-ই-বাংলা ঘাঁটির নির্মাণ এবং এক সঙ্গে ৮টি যুদ্ধজাহাজ নির্মাণ নৌবাহিনীর ইতিহাসে একটি স্মরণীয় ঘটনা। আশা করি, নতুন এই ঘাঁটি ও জাহাজসমূহের কমিশনিং সার্বিকভাবে নৌবাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে এবং বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে বিশ্বমানের নৌবাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে আমাদের পদক্ষেপ আরও একধাপ এগিয়ে যাবে।

তিনি বলেন, আমাদের নৌবাহিনী এখন অনেক সক্ষমতা অর্জন করেছে। ‌‘বায়ার’ (ক্রেতা) নৌবাহিনী থেকে এখন তারা ‘বিল্ডারে’ (তৈরিকারক) পরিণত হয়েছে। এতে করে খুলনা শিপইয়ার্ডে যুদ্ধজাহাজ নির্মাণে একদিকে যেমন বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হচ্ছে তেমনি বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের বিশাল সমুদ্রসীমা একসময় অরক্ষিত ছিল। জিয়াউর রহমান, এরশাদ বা খালেদা জিয়া কেউই এই ব্যাপারে কোন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। আমি ক্ষমতায় আসার পর প্রতিবেশী দুই দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেই আমরা বিশাল সমুদ্র সীমা অর্জন করেছি। আমাদের অর্জিত বিশাল সামুদ্রিক এলাকার সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং ব্লু- ইকোনমি কার্যক্রম সফলভাবে বাস্তবায়নে নৌবাহিনীর কর্মপরিধি ও গুরুত্ব বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ (বুধবার) বানৌজা শের-ই-বাংলা ঘাঁটি, ৪১ পিসিএস'র ৪টি যুদ্ধজাহাজ এবং ৪টি এলসিইউ আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করলো। এই ঘাঁটি এবং জাহাজসমূহ নিজ নিজ অপারেশনাল কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি পায়রা সমুদ্র বন্দরের সার্বিক নিরাপত্তায় বিশেষ ভূমিকা পালন করবে। বানৌজা শের-ই-বাংলা ঘাঁটি ও নবনির্মিত যুদ্ধজাহাজসমূহ নৌবাহিনীর সক্ষমতা বহুলাংশে বৃদ্ধি করবে বলে আমি বিশ্বাস করি। এছাড়াও দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ৪১ পিসিএস এর যুদ্ধজাহাজ এবং ৪টি এলসিইউ দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষাসহ উপকূলীয় অঞ্চলসমূহে মানবিক সহায়তা ও ত্রাণ পরিবহনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। বানৌজা শের-ই-বাংলা প্রকল্পের বাস্তবায়ন এবং আমাদের নিজস্ব শিপইয়ার্ডে যুদ্ধজাহাজ তৈরি নৌবাহিনীর অবকাঠামোগত উন্নয়নে আরও একটি নতুন মাইলফলক।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের  নৌবাহিনী আজ দেশের সীমানা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও বিস্তৃত। নৌবাহিনীর জাহাজ বিভিন্ন দেশে আন্তর্জাতিক মহড়ায় অংশ নিচ্ছে এবং নিজেরাও সফলভাবে মহড়ার আয়োজন করছে। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর যুদ্ধ জাহাজ ভূ-মধ্যসাগরে মাল্টিন্যাশনাল মেরিটাইম টাস্কফোর্সের আওতায় সফলভাবে নিয়োজিত থেকে সারাবিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছে। এছাড়া ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মত ‘ইন্টারন্যাশনাল ফ্লিট রিভিউ’ আয়োজনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করেছে।

নৌবাহিনীর নিজস্ব তত্ত্বাবধানে খুলনা শিপইয়ার্ডে পেট্রোল ক্রাফট স্কোয়াড্রোনের ৪টি যুদ্ধজাহাজ বানৌজা শহীদ দৌলত, শহীদ ফরিদ, শহীদ মহিবুল্লাহ ও শহীদ আখতার উদ্দিন এবং ৪টি ল্যান্ডিং ক্রাফট ইউটিলিটি (এলসিইউ) বানৌজা ডলফিন, তিমি, টুনা ও পেঙ্গুইন র কমিশনিং করা হয়েছে। এর আগে প্রধানমন্ত্রী ‘বানৌজা শের-ই-বাংলা’ ঘাঁটিতে ভিডিও টেলিকনফারেন্সে সংযুক্ত হলে নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম শাহিন ইকবাল তাকে স্বাগত জানান। এ সময় বানৌজা শের-ই-বাংলার একটি চৌকস দল প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার প্রদান করেন। এছাড়া অনুষ্ঠানের অন্যান্যদের মধ্যে সংসদ সদস্য, মুক্তিযোদ্ধা নৌ কমান্ডো, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিক, নৌ দফতরের পিএসও, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং ঊর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সময়ের আলো

খালেদ / পোস্টকার্ড ;