গণমাধ্যমে মতামত প্রচারে যারা বাধা দেবেন তাদের জন্য এই ভিসা নিষেধাজ্ঞা : রাষ্ট্রদূত হাস

গণমাধ্যমে মতামত প্রচারে যারা বাধা দেবেন তাদের জন্য এই ভিসা নিষেধাজ্ঞা : রাষ্ট্রদূত হাস
বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস।

পোস্টকার্ড ডেস্ক ।।

যেসব বাংলাদেশি গণমাধ্যমকে তাদের মতামত প্রচার করা থেকে বিরত রাখার পদক্ষেপ নেবেন, তাদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি প্রযোজ্য হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূত পিটার হাস।

এই সময় তিনি গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, সাংবাদিক ও সংবাদ সংস্থাগুলোর অধিকার রক্ষায় তার সরকারের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন ।

সম্প্রতি চ্যানেল২৪-এর সঙ্গে সাক্ষাৎকারে পিটার হাস বলেছিলেন, গণমাধ্যমও মার্কিন ভিসা নীতির আওতায় আসতে পারে। এবিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে চিঠি দেন সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ও ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম। চিঠিতে রাষ্ট্রদূতের এমন মন্তব্যের ব্যাখ্যা চান তিনি।

পিটার হাস এই চিঠির জবাবে বলেছেন, তারা (যুক্তরাষ্ট্র) গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে সমর্থন করেন, 'এতে যুক্তরাষ্ট্রসহ যেকোনো সরকারের বিষয়ে সমালোচনামূলক মতপ্রকাশের অধিকারের বিষয়টিও রয়েছে। আমাদের নীতির যেকোনো অংশের ওপর জনসাধারণের প্রতিফলনকেও আমরা স্বাগত জানাই।'

এসময় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনকে উদ্ধৃত করে পিটার হাস বলেন, 'অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব ভোটার, রাজনৈতিক দল, সরকার, নিরাপত্তা বাহিনী, সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যমসহ'- সকলের। এসব প্রতিষ্ঠানকে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় তাদের নিজ নিজ ভূমিকা পালনের সুযোগ দিতে হবে। অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের বক্তব্যে এটা স্পষ্ট যে, ভিসা নীতি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ণ করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রতীয়মান হয় এমন যেকোনো বাংলাদেশির জন্য প্রযোজ্য। মিডিয়াকে কেউ তাদের মতামত প্রচার করা থেকে বিরত রাখার পদক্ষেপ নিলে তার ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য হবে।'

পিটার হাসের চ্যানেল-২৪ এ দেওয়া সাক্ষাৎকারের পরিপ্রেক্ষিতে মাহফুজ আনাম গত ২৭ সেপ্টেম্বর ইমেইলে তাকে চিঠি দেন। সেখানে তিনি বলেন, মিডিয়ার ভিসা সংক্রান্ত বিধিনিষেধের ব্যাপারে উল্লিখিত মন্তব্য নিয়ে তার মনে ও সম্পাদক পরিষদের সদস্যদের মনে কিছু প্রশ্ন জেগেছে, এজন্যই তিনি চিঠিটি লিখছেন।

তিনি বলেন, 'সত্যি বলতে এই মন্তব্যটি আমাদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করেছে। তাই আমরা বিষয়টি স্পষ্ট করার জন্য অনুরোধ করছি।'

যুক্তরাষ্ট্র সরকার ও দেশটির রাষ্ট্রদূত ব্যক্তিগতভাবে সবসময় মুক্ত ও স্বাধীন গণমাধ্যমের পক্ষে অটল ছিলেন উল্লেখ করে মাহফুজ আনাম বলেন, তাই এ মন্তব্য তাদের অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে।

ভিসা বিধিনিষেধ নির্বাচন সংক্রান্ত কর্মকাণ্ডের বাইরে অন্য কিছুর ওপর ভিত্তি করে নয়, রাষ্ট্রদূতের এমন মন্তব্য উল্লেখ করে মাহফুজ আনাম লিখেছেন, 'মিডিয়ার কাজ হলো লেখা কিংবা সম্প্রচার করা। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, একজন সাংবাদিক যা লেখেন বা সম্প্রচার করেন তার ওপর ভিত্তি করে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে কিনা? যদি তাই হয়, তাহলে এটি কি বাকস্বাধীনতা ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার আওতায় আসে না? মিডিয়ার ক্ষেত্রে এটি কীভাবে ব্যবহার করা হবে? এখানে কোন বিষয়গুলো বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে?'

সম্পাদক পরিষদের সভাপতি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের প্রথম সংশোধনী ব্যক্তিগতভাবে এবং বাংলাদেশের গণমাধ্যমের জন্য সবসময় অনুপ্রেরণা ও অনুকরণের উৎস হিসেবে কাজ করেছে। সেক্ষেত্রে ভিসা নীতি গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হলে প্রথম সংশোধনীর মূল্যবোধ কীভাবে প্রতিফলিত হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।

চিঠির উত্তরে পিটার হাস লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্র গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখবে এবং যারা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ণ করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে কথা বলবে এবং তাদের জন্য মার্কিন ভিসা নীতি প্রয়োগ করবে।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;