১৫ আগস্ট হত্যাকান্ডে জিয়াউর রহমান জড়িত ছিল:শোক দিবসের আলোচনা সভায় শেখ হাসিনা

১৫ আগস্ট হত্যাকান্ডে জিয়াউর রহমান জড়িত ছিল:শোক দিবসের আলোচনা সভায় শেখ হাসিনা
১৫ আগস্ট হত্যাকান্ডে জিয়াউর রহমান জড়িত ছিল:শোক দিবসের আলোচনা সভায় শেখ হাসিনা

নিজস্ব প্রতিবেদক।।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের বিচার না করার ইনডেমনিটি দিয়েছে এবং তার স্ত্রী খালেদা জিয়া মানুষ হত্যা করা সন্ত্রাসীদের বিচার না করার ইনডেমনিটি দিয়েছে।

বঙ্গবন্ধুর ৪৫তম শাহাদাত বার্ষিকীতে আওয়ামী লীগের স্মরণসভায় ভিডিও কনফারেন্সে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমান পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের খুনের সঙ্গে জড়িত ছিল বলেই আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিটিকে ভিসা দেয়নি। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার আইন করে বন্ধ রেখেছে এবং পাকিস্তানি মদদদাতা আলবদর-রাজাকার-আলশামসদের মন্ত্রী-উপদেষ্টা করে রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছে। কর্নেল বেগ জিয়াউর রহমানকে চিঠিতে যে নতুন কাজ দেওয়ার কথা বলেছিল তা ১৫ আগস্টের এই হত্যাকান্ডের অ্যাসাইনমেন্ট কি না সে প্রশ্ন করেন শেখ হাসিনা।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৫তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করে আওয়ামী লীগ। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই আলোচনা সভায় যুক্ত হন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় শেখ হাসিনা বলেন, ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতিকে হত্যা করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে চিরতরে নস্যাৎ করে দেয় খুনিরা।

শেখ হাসিনা বলেন, মীরজাফরের মতোই খুনি মোশতাককে ক্ষমতা থেকে হটিয়ে ক্ষমতা হাতে নিয়েছিল জিয়াউর রহমান। খুনিদের বিচার বন্ধ করা, তাদের ব্যাংকক হয়ে লিবিয়া পাঠানোসহ সব কর্মকান্ড প্রমাণ করে জিয়াউর রহমান এই হত্যাকাÐের পরিকল্পনায় ছিল।

পঁচাত্তর-পরবর্তী স্মৃতিচারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, রাষ্ট্রপতির মেয়ে হয়েও তাদের নাম-পরিচয় গোপন করে নির্বাসিত জীবন কাটাতে হয়েছে। আর খুনিরা বিভিন্ন দূতাবাসে আরাম-আয়েসে জীবন কাটিয়েছে। খুনিদের বিচার না করার ইনডেমনিটি দিয়েছিল জিয়াউর রহমান আর সন্ত্রাসীদের ইনডেমনিটি দিয়েছিল তার স্ত্রী খালেদা জিয়া।

উচ্চ আদালত সামরিক শাসনামলের অর্ডিন্যান্স বাতিল করে দেশকে অশুভ শক্তির হাত থেকে রক্ষা করেছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষের মধ্যে আবার মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ফিরে এসেছে। এই হত্যাকান্ডে সেদিন কর্নেল ফারুক, কর্নেল রশিদ, মেজর হুদা, মেজর ডালিম, মেজর শাহরিয়ার, মেজর পাশা, সামরিক অফিসার এরা সবাই মাজেদ, মহিউদ্দিন, মোসলে উদ্দিন, রাশেদ, খায়রুজ্জামান সবাই এর মধ্যে জড়িত ছিল। কিন্তু এই সামরিক অফিসারদের কারা, কে মদদ দিয়েছিল, তাদের পেছনে কারা ছিল? আমার কেবিনেটের একজন মন্ত্রী তার উচ্চাভিলাষ আর সহযোগী জিয়াউর রহমান। যে একজন মেজর ছিল। জাতির পিতা তাকে প্রমোশন দিয়ে মেজর জেনারেল বানিয়েছিলেন। সে এর সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে জড়িত ছিল। সেটা স্পষ্ট পাওয়া যায় এই হত্যাকান্ডে পর বিবিসিতে কর্নেল ফারুক এবং কর্নেল রশিদ একটি ইন্টারভিউ দেয়। যেখানে তারা স্পষ্ট বলে যে, তাদের সঙ্গে জিয়াউর রহমান সম্পূর্ণভাবে জড়িত ছিল। তার মদদেই তারা এ ঘটনা ঘটাতে সক্ষম হয়েছিল এবং সেটা আরও প্রমাণ হয় বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর, রাষ্ট্রপতিকে হত্যার পর, সেখানে সংবিধান মানা হয়নি, ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নজরুল ইসলাম কিন্তু সেখানে রাষ্ট্রপতি হননি, রাষ্ট্রপতি ঘোষিত হলো খন্দকার মোশতাক। আর খন্দকার মোশতাক রাষ্ট্রপতি হয়েই জেনারেল জিয়াকে বানাল সেনাবাহিনীর প্রধান। জেনারেল জিয়া যদি এই ষড়যন্ত্রে মোশতাকের সঙ্গে সম্পৃক্ত না থাকবে তা হলে কেন মোশতাক তাকেই বেছে নেবে সেনাপ্রধান হিসেবে। তারপর খুনিদের সবধরনের মদদ দেওয়া, এটা তো জিয়াউর রহমানই দিয়েছে। এবং এখানেই তাদের শেষ না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মোশতাক, বেইমানরা কখনও ক্ষমতায় থাকতে পারে না। মীরজাফর পারেনি। মীরজাফরকে যারা ব্যবহার করেছে সিরাজউদ্দৌলাকে হত্যা করতে। মীরজাফর দু’মাসের বেশি ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। ঠিক মোশতাকও পারেনি। মোশতাককে হটিয়ে জিয়াউর রহমান নিজেকে নিজেই ঘোষণা দিয়েছিল রাষ্ট্রপতি হিসেবে। তিনি বলেন, এই খুনিরা যারা শুধু ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ডই  ঘটায়নি, ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে যারা হত্যাকান্ড ঘটায়। তাদেরকে বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া, তাদের রাজনৈতিক আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা। বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে জিয়াউর রহমান খুনিদের পুরস্কৃত করে।

ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, খুনিদের বিচার হবে না। ১৫ আগস্টের হত্যার বিচার হবে না। সেই ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করা হয়। তাদের বিচারের পথ বন্ধ করা হয়। তাদের বিচার করা যাবে না। আমরা যারা আপনজন হারিয়েছি আমাদের মামলা করার অধিকার ছিল না, বিচার করারও অধিকার ছিল না। পঁচাত্তরের পর আমি আর রেহানা বিদেশে ছিলাম। ঘাতকের নির্মম বুলেটে যারা আপনজন হারিয়েছিল অনেকে দেশে থাকতে পারেনি। এই হত্যার পর ওই পরশ-তাপসকে খুঁজে বেড়ানো হয়েছে। কারা কারা বেঁচে আছে তাদের খুঁজে বেড়ানো হয়েছে।

পঁচাত্তরের পরের সময়ের কথা তুলে ধরে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, সবাই গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল ভারতের মাটিতে। রিফিউজি হিসেবে আমাদের থাকতে হয়েছিল। এমনকি আমরা আমাদের নিজেদের নামটাও ব্যবহার করতে পারিনি। একদিকে আপনজন সব হারিয়েছি। একদিনের মধ্যে সব শেষ। তারপর রিফিউজি হিসেবে আমাদের থাকতে হয়েছে। আমরা যখন রিফিউজি হিসেবে থেকেছি বিদেশের মাটিতে অবস্থান করে আর ঘাতকের দল তখন বিভিন্ন দূতাবাসে রাষ্ট্রদূতের চাকরি পেয়ে বা দূতাবাসে বিভিন্ন সরকারি চাকরি পেয়ে তারা আরাম-আয়েসে জীবনযাপন করে তা আমাদের দেখতে হয়েছে। অথচ এই দেশ স্বাধীন করে গেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

শেখ হাসিনা বলেন, আশি সালে আমি লন্ডনে যাই। রেহানা তার আগেই লন্ডনে গিয়েছিল। আশি সালের ১৬ আগস্ট আমরা লন্ডনে এই হত্যার প্রতিবাদে সভা করি। তখন সেখানে স্যার টমাস উইলিয়াম কিউসি এমপি এবং নভেল লরেট শন ম্যাক ব্রাইট তাদেরকে নিয়ে একটা আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়। সেদিনই সেই তদন্ত কমিশনের ঘোষণা দেওয়া হয়। সেই তদন্ত কমিশনকে আমাদের প্রবাসী বাংলাদেশিদের সহযোগিতায় সেই তদন্ত কমিশনের প্রতিনিধি হিসেবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার তদন্তের জন্য পাঠানো হয়। ব্রিটিশ এমপি অনেকে তখন আমাদের সহযোগিতা করেন। তিনি যখন ভিসা চান, জিয়াউর রহমান তখন রাষ্ট্রপতি, জিয়াউর রহমান কিন্তু টমাস উইলিয়ামকে ভিসা দেয়নি। জিয়াউর রহমান কেন ভিসা দিল না। কেন তদন্ত করতে দিল না। এ প্রশ্নটা থেকে যায়। কারণ খুনের সঙ্গে জড়িত ছিল বলে সে ভয়ে ভীত ছিল। সে তদন্ত করতে দেয়নি।

খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসেছে ২০০১-এ। ১ অক্টোবরের নির্বাচন একটা প্রহসনের নির্বাচন। সেই নির্বাচনে ক্ষমতায় এসে যেভাবে মানুষ হত্যা শুরু করে। এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিংয়ের কথা আজকে সবাই বলেÑ সবাই ভুলে গেছে, যে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসার পর অপারেশন ক্লিন হার্টের নামে বহু মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, একে একে বিভিন্ন জায়গায় আমাদের যুবলীগের মাসুম খুলনায়, শেখ হেলালের আপন মামাতো ভাই। তাকে যেভাবে অত্যাচার নির্যাতন করেছিল যার ফলে সে মৃত্যুবরণ করেছিল। এ রকম শত শত লোককে হত্যা করে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অপারেশন ক্লিন হার্টের’ নামে যত্রতত্র যেখানে-সেখানে মানুষকে ধরে নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে যুবলীগের কর্মী যাকে যেখানে পেয়েছে নিয়ে হত্যা করেছে। আর সেই হত্যার বিচার হবে না। সেই হত্যার বিচার হবে না সেই ইনডেমনিটিও খালেদা জিয়া দিয়ে গেছে। তার স্বামী দিয়ে গেছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারীদের ইনডেমনিটি আর সে এসে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করে তাদের ইনডেমনিটি দিয়ে গেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের রিসার্চ সেন্টার দখল করে নেয়। ১৫টি কম্পিউটার, আমাদের বই, ৩০০ ফাইল, নগদ টাকা সব কিছু লুট করে সিল করে দেয়। যেন আমরা সেখানে বসে কাজ করতে না পারি। একটা রাজনৈতিক কর্মকাÐ চালানোর পথ পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছিল খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে। স্মরণসভায় প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে সংযুক্ত হলেও, দলের নেতারা ছিলেন আওয়ামী লীগের বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের অফিসে। স্বাগত বক্তব্য রাখেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।