সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য জঙ্গল সলিমপুর ও জঙ্গল লতিফপুর, জমি চেয়েছে ১১ প্রতিষ্ঠান 

সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য জঙ্গল সলিমপুর ও জঙ্গল লতিফপুর, জমি চেয়েছে ১১ প্রতিষ্ঠান 
সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য জঙ্গল সলিমপুর ও জঙ্গল লতিফপুর, জমি চেয়েছে ১১ প্রতিষ্ঠান 

বিশেষ প্রতিবেদক ।।

সরকারি পাহাড় কেটে গড়ে উঠেছে বিশাল অবৈধ সাম্রাজ্য জঙ্গল সলিমপুর। তিন হাজার একরেরও বেশি জায়গা দখল করে এ সাম্রাজ্য গড়ে তোলা হয়েছে। সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত। এ রাজ্যে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রবেশও অনেকটা চ্যালেঞ্জ ছিল। সন্ত্রাসীদের সেই অভয়ারণ্যে ১১টি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার মহাপরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।

শনিবার জঙ্গল সলিমপুর নিয়ে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন সংক্রান্ত সরকারি বিভিন্ন প্রত্যাশী সংস্থাগুলোর সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ও সরকারের বিভিন্ন সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তারা এ বিষয়ে মতামত তুলে ধরেন।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, জঙ্গল সলিমপুর ও জঙ্গল লতিফপুরসহ আশেপাশের সরকারি খাস জমি দখল করে বিশাল অবৈধ সাম্রাজ্য গড়ে তোলা হয়েছে। ১৫টি সমবায় সমিতির নামে এ রাজ্য গড়ে তোলা হয়েছে। ১৩টি সমবায় সমিতি নিয়ন্ত্রণ করছে এ জঙ্গল সলিমপুর। এসব সমিতির অধীনে আলাদা আলাদা সমাজ রয়েছে। সমাজপতিও রয়েছে। সমাজপতিরা একেক জন মাফিয়া ডন। আবার তাদের নিয়ন্ত্রণ করে ওই রাজ্যের শীর্ষ সন্ত্রাসী গ্রুপ। এক সময়ে আক্কাস ও মশিউর বাহিনী এ রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করেছিল। আক্কাস ক্রসফায়ারে নিহত হয়। মশিউর ও ইলিয়াছ বর্তমানে কারাগারে রয়েছে।

জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহম্মদ নাজমুল আহসান বলেন, এখানে সবুজায়ন পাহাড় ছিল। মানুষের বসতি ছিল না। ২০০০ সালের পর থেকে বিভিন্ন স্থান থেকে অপরাধীরা এখানে আশ্রয় নেয়। তাদের নেতৃত্বে পাহাড় কেটে বসতি গড়ে তোলা হয়। প্রায় ৪শ একর পাহাড় কেটে ন্যাড়া করে ফেলা হয়েছে। বর্তমানে ২৪ হাজার পরিবারের লক্ষাধিক লোকের বসবাস রয়েছে।

তিনি বলেন, জঙ্গল সলিমপুর দেশের অভ্যন্তরে আরেক সাম্রাজ্য। আলীনগরে প্রবেশ করতে পরিচয়পত্র দেখাতে হয়। কোন এন্ড্রয়েট মোবাইল নেওয়া যায় না। প্রবেশমুখে সোর্স থাকে। অপরিচিত লোক ঢুকলে ভেতরের লোকজনদের জানিয়ে দেওয়া হয়। পরে ভেতরে থাকা লোকজন মহিলাদের অগ্রভাগে দিয়ে ভেতরে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে। ২০১৭ সালে এবং ২০১৯ সালে উচ্ছেদে গেলে বাধার মুখে পড়ে প্রশাসন। এমনকি ১৪ মে প্রধানমন্ত্রী মুখ্যসচিবের সলিমপুর পরিদর্শনের সময় একইভাবে মহিলাদের দিয়ে মানববন্ধন সৃষ্টি করা হয়। এখানে ২০০৭ সালের পর থেকে বেশি দখল হয়েছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পালিয়ে আসা চিহ্নিত আসামিদের অবস্থান রয়েছে। তাদের অনেকের বিরুদ্ধে ৪-৫টি করে খুনের মামলাও রয়েছে।

এই জঙ্গল সলিমপুরে সন্ত্রাসী ও অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের স্থাপনা নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ম্যরোধ করতে র‌্যাব-পুলিশকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব। তাঁর নির্দেশের পর র‌্যাব’র দ্রুততম সময়ে অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করার প্রতিশ্রুতি দেন র‌্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. ইউসুফ। জঙ্গল সলিমপুরের পুলিশ ক্যাম্পও জনবল বাড়িয়ে পরিধি বাড়ানোর আশ্বাস দিয়েছে পুলিশ প্রশাসনও।

জমি বরাদ্দ চেয়ে জেলা প্রশাসনে কাছে চিঠি দিয়েছে ১১ প্রতিষ্ঠান : স্পোর্টস ভিলেজ, হাট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল, সাফারি পার্ক, ইকো পার্কসহ বিনোদনকেন্দ্র, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার, উচ্চক্ষমতার বেতার সম্প্রচারকেন্দ্র, পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির কার্যালয় ও প্রশিক্ষণ, কাস্টমস ডাম্পিং হাউস, সবুজ শিল্প এলাকা, চট্টগ্রাম সেনানিবাস ও বিএমএ এবং আনসার ভিডিপি প্রশিক্ষণকেন্দ্র, ভূমিহীনদের পুনর্বাসন, এসব প্রত্যাশী সংস্থাগুলো ইতিমধ্যেই জায়গা বরাদ্দ চেয়ে জেলা প্রশাসনে কাছে চিঠি দিয়েছে ।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;