সীতাকুণ্ডের মুক্তিযুদ্ধের বধ্যভূমি স্বাধীনতার ৪৮ বছরে পরও অবহেলিত,গড়ে উঠেছে ফিলিং স্টেশন

সীতাকুণ্ডের মুক্তিযুদ্ধের বধ্যভূমি স্বাধীনতার ৪৮ বছরে পরও অবহেলিত,গড়ে উঠেছে ফিলিং স্টেশন
সীতাকুণ্ডের মুক্তিযুদ্ধের বধ্যভূমি স্বাধীনতার ৪৮ বছরে পরও অবহেলিত,গড়ে উঠেছে ফিলিং স্টেশন

বিশেষ প্রতিতবেদক।।

মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনী এদেশের নিরীহ জনসাধারণসহ মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে নিয়ে নির্বিচারে হত্যা করেছে। এর মধ্যে অনেকের লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে। আবার অনেককে বিভিন্ন স্থানে মাটিচাপা দেয়া হয়েছে। বীর সেনানীদের সেই গণকবরগুলো আজও অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে।

কোথাও কোথাও সেই গণকবরগুলো চিহ্নিতই করা হয়নি। এতে নির্মমতার স্মৃতিচিহ্ন গায়েব হয়ে যাচ্ছে। বধ্যভূমির চিহ্নিত ও সংস্কারের দাবি উঠলেও অবহেলায় পড়ে রয়েছে নির্মমতার স্মৃতি চিহ্নগুলো।

দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বধ্যভূমিগুলো সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। তার মধ্যে ৩৫টি প্রকল্প বানিয়ে ২০০৪ থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে ওই বধ্যভূমিগুলোতে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়েছিল। কিন্তু মহান স্বাধীনতার ৪৮ বছরেও রক্ষণা-বেক্ষণ নাই সীতাকুণ্ডের মুক্তিযুদ্ধের বধ্যভূমির।

বছরের পর বছর ধরে স্থাপনা চিহ্নিত শহীদদের স্বরণ করা হলেও অন্তরালে থেকে গেছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকা বধ্যভূমিগুলো। স্বাধীনতার দীর্ঘ বছর পার হতে চললেও নেয়া হয়নি বধ্যভূমিতে স্মৃতিচিহ্ন তৈরির উদ্যোগ। ফলে অযত্ন-অবহেলায় বিলীন হতে চলেছে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা বধ্যভূমিগুলো। স্বাধীনতা যুদ্ধে সীতাকুণ্ডে শহীদ হন ১৯ জন মুক্তিযোদ্ধা।

এছাড়া যুদ্ধকালীন সময়ে গন শহীদ হয়েছিলেন ১৬০ সাধারণ মানুষ। এসব শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের ১টি স্মৃতিস্তম্ভ শহীদ মিনার থাকলেও অধিকাংশ মুক্তিযোদ্ধা পড়ে রয়েছে পরিত্যক্ত বধ্যভূমিতে।

উপজেলার নানা অজানা স্থানে অসংখ্য নাম না জানা মুক্তিযোদ্ধাদের বধ্যভূমি থাকলেও সরকারিভাবে নথিভুক্ত রয়েছে গুটি কয়েক বধ্যভূমির নাম। যেসব বধ্যভূমির নাম উপজেলা মুক্তিযাদ্ধা সংসদ কার্যালয়ে রেজিস্ট্রিভুক্ত রয়েছে- সীতাকুণ্ড রেল স্টেশন বধ্যভূমি, চন্দ্রনাথ ধাম বধ্যভূমি, সোনাইছড়ি ইউনিয়নের পাক্কার মসজিদ বধ্যভূমি, লালবেগ সিএনসি স্টেশন বধ্যভূমি, হাটহাজারী লিং রোড বধ্যভূমি, সলিমপুরের ফকিরহাট ওভারব্রীজের নিচে।

রেজিস্ট্রিভুক্ত বধ্যভূমির কিছুর স্মৃতি চিহ্ন থাকলেও অধিকাংশই হয়ে পড়েছে অরক্ষিত। ফলে রক্ষণাবেক্ষণ ও তদারকি অভাবে দিনে দিনে মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিচিহ্ন বধ্যভূমিগুলো বিলীন হওয়ার পথে। তাছাড়া স্মৃতিচিহ্ন না থাকার কারণে অধিকাংশ বধ্যভূমি অরক্ষিত হয়ে পড়ায় সে সব জায়গায় স্থাপনা গড়ে তুলেছে দখলদাররা। কিছু বধ্যভূমির স্মৃতিচিহ্ন থাকার পরও দখলে নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে স্থাপনা।

সোনাইছড়ি ইউনিয়নের লালবেগ এলাকায় মহাসড়ক সংলগ্ন বধ্যভূমিটি দখল করে গড়ে তোলা চট্টলা সিএনজি ফিলিং স্টেশন। একইভাবে পৌরসভার রেল লাইন সংলগ্ন বধ্যভূমিটি বেদখল হয়ে গড়ে উঠেছে একাধিক স্থাপনা। এভাবে একর পর এক শহীদদের বধ্যভূমিগুলো বিলীন হওয়ায় বহু লোক স্বাধীনতার সময় হারানো পরিবারের সদস্যদের স্মৃতি চিহ্নটুকু হারিয়ে ফেলছেন।

তাছাড়া যেসব স্থাপনা সমূহের স্মৃতি চিহ্ন রয়েছে সঠিক সংরক্ষণের অভাবে তাও হারিয়ে যাওয়ার পথে। এছাড়া যেসব বধ্যভূমির স্মৃতিচিহ্ন নেই সেসব বধ্যভূমি দখল করে গড়ে উঠেছে স্থাপনা।

মুক্তিযোদ্ধা সংসদসহ উপজেলা প্রশাসনের স্থাপনাসমূহ রক্ষণা-বেক্ষণের উদ্যোগ নিয়েও তা বারবার পিছিয়ে গেছে বলে জানান উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদদের কমান্ডার মো.আলিম উল্লা।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন রায় বলেন, বিষয়টি নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা এগিয়ে আসলে প্রশাসনের কিছু করার থাকে। তবে এর মধ্যে চন্দ্রনাথ ধামের বধ্যভূমির স্মৃতিচিহ্ন তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ধীরে ধীরে বাকি বধ্যভূমির সংরক্ষনের কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।