সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপোর খালি কনটেইনারে অর্ধগলিত লাশ

সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপোর খালি কনটেইনারে অর্ধগলিত লাশ
সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপোর খালি কনটেইনারে অর্ধগলিত লাশ

পোস্টকার্ড ডেস্ক ।।

সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপোর অগ্নিকাণ্ডের পর চট্টগ্রাম বন্দরের সীমানা পেরিয়ে জাহাজে করে মালয়েশিয়া গেল দুটি খালি কন্টেইনার। যার একটিতে মিলেছে অর্ধগলিত লাশ। পরিচয় না মিললেও ওই ব্যক্তি কীভাবে কন্টেইনারে ঢুকলো তার কারণ খুঁজে পেতে তদন্তে নেমেছে চট্টগ্রাম ও মালয়েশিয়ার পেনাং বন্দর কর্তৃপক্ষ।

বিষয়টি স্বীকার করেছেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক। তিনি বলেন, গত ৬ অক্টোবর চট্টগ্রাম বন্দর থেকে মালয়েশিয়ার উদ্দেশে দুটি জাহাজ ছেড়ে গেছে। এর একটির কন্টেইনারে মরদেহ পাওয়ার বিষয়ে জানতে পেরেছি। বিষয়টি জানতে মালয়েশিয়ার পেনাং বন্দর কর্তৃপক্ষ তৎপর হয়েছে। এ বিষয়ে আমাদেরও কোনো গাফিলতি আছে কি না তা বিস্তারিত জানার চেষ্টা চলছে। তদন্ত সাপেক্ষে বিস্তারিত জানা যাবে। প্রয়োজন সাপেক্ষে বিশদ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান মো. ওমর ফারুক।   

এ বিষয়ে বিএম ডিপোর নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান স্মার্ট গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক ক্যাপ্টেন মইনুল আহসান বলেন, ডিপোতে আগুন লাগার ঘটনার পর থেকেই আমরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছি। আমরা দুবার কন্টেইনারটি তল্লাশি করেছি। তখন কন্টেইনারটি পুরাই খালি ছিল। এরপরও বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। 

তবে ডিপো থেকে কন্টেইনার বন্দরে ঢোকার সময় তল্লাশি করার নিয়ম রয়েছে। সেখানে কোনো গাফিলতি ছিল কি-না তা খতিয়ে দেখার বিষয় রয়েছে। যা চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নজরে এসেছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের পরিচালক (পরিবহন) এনামুল করিম জানান, সিনোকরের নিজস্ব জাহাজ সোয়াসদি আটলান্টিক গত ৬ অক্টোবর চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পেনাংয়ের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। সেটি ৯ অক্টোবর পেনাং পৌঁছায়। সেখানে কিছু কন্টেইনার নামিয়ে জাহাজটি ১০ অক্টোবর সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে চলে যায়। 

পরে পেনাং বন্দর থেকে খালি কন্টেইনারটি ১৪ অক্টোবর বের করার সময় গন্ধ বেরোলে সন্দেহ হয়। এরপর কন্টেইনারটি খুলে পেনাং বন্দর কর্তৃপক্ষ ওই ব্যক্তির গলিত মরদেহ পায়। এরপর মালয়েশিয়ার পুলিশ এসে লাশটি তদন্তের জন্য নিয়ে যায়। ওই কন্টেইনারটি দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক প্রতিষ্ঠান সিনোকরের মালিকানাধীন। 

প্রতিষ্ঠানটির বাংলাদেশি এজেন্ট গ্লোবলিঙ্ক অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মঈনুল হক চৌধুরী বলেন, সোমবার আমরা জানতে পেরেছি যে, ওই কন্টেইনারে একটি মরদেহ পাওয়া গেছে। এরপর জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি জেটির-৫ নম্বরে ভিড়েছে গত ৩ অক্টোবর। এরপর আমরা খোঁজ খবর নিই। 

তিনি বলেন, রফতানি পণ্য বোঝাই করে জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দর থেকে রওনা দেয় ৬ অক্টোবর। ৯ অক্টোবর নাগাদ সেটি সরাসরি পেনাং বন্দরে পৌঁছে। সেখানে কনটেইনার নামিয়ে জাহাজটি সিঙ্গাপুর হয়ে চীনের সাংহাই ও নিমবো বন্দরে চলে যায়। লাশের ময়নাতদন্ত হয়েছে। তবে নাম-পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি বলে জানতে পেরেছি। মালয়েশিয়ান পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বন্দরে কন্টেইনার ঢোকা বা বের হবার সময় তা চেক (যাচাই) করে নিতে হয়। লোকজন অনেক সময় অবৈধভাবে বিদেশ যেতে কন্টেইনারের আশ্রয় নেয়। একজন লোক বন্দর সীমানা পার হয়ে গেল, অথচ কেউ কিছুই জানে না। এটা উদ্বেগের। বন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েই এখন প্রশ্ন উঠবে।

চট্টগ্রাম বন্দর থেকে বিভিন্ন বন্দরে যাওয়া কন্টেইনারে লোকজন উদ্ধারের ঘটনা এবারই প্রথম নয়। ২০১৬ সালে ভারতের বিশাখাপত্তনম বন্দরে একটি খালি কন্টেইনার থেকে মোহাম্মদ রোহান হোসেন (৩০) নামের একজনকে উদ্ধার করেছিল সেখানকার পুলিশ। 

পরের বছর ২০১৭ সালে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সিঙ্গাপুরগামী একটি জাহাজে কন্টেইনার বোঝাই করার সময় বাবুল ত্রিপুরা নামের কেডিএস কন্টেইনার ডিপোর এক শ্রমিককে ভেতর থেকে উদ্ধার করেছিল বন্দরের নিরাপত্তাকর্মীরা। 

সবশেষ ২০১১ সালে হানসা কালেডো নামের একটি সিঙ্গাপুরগামী জাহাজে থাকা কন্টেইনার থেকে আল আমিন নামে এক বাংলাদেশি শ্রমিকের মরদেহ উদ্ধার করে সেখানকার পাসিং পানজার টার্মিনালের কর্মীরা।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;