কবির ষ্টীল ইয়ার্ডে ৬ বছরে ২৩ দুর্ঘটনায় ১২ শ্রমিকের মৃত্যু, সর্বোচ্চ দুর্ঘটনার রেকর্ড!

কবির ষ্টীল ইয়ার্ডে ৬ বছরে ২৩ দুর্ঘটনায় ১২ শ্রমিকের মৃত্যু, সর্বোচ্চ দুর্ঘটনার রেকর্ড!
কবির ষ্টীল ইয়ার্ডে ৬ বছরে ২৩ দুর্ঘটনায় ১২ শ্রমিকের মৃত্যু, সর্বোচ্চ দুর্ঘটনার রেকর্ড!

পোস্টকার্ড ডেস্ক ।।

স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি ও ইয়ার্ডের কার্যক্রম স্থগিত, শিল্প মন্ত্রণালয়ের কারণ দর্শাও নোটিশ, ইয়ার্ডে দক্ষ শ্রমিক ও আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার নিশ্চিতের তাগিদ আমলেই নিচ্ছে না কেএমআরএম গ্রুপ। ফলে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড উপজেলার মাদামবিবিরহাট ও বারআউলিয়া গামারীতল অবস্থিত দুটি শিপ ইয়ার্ডে থামছে না শ্রমিক মৃত্যু ও দুর্ঘটনা। একক ইয়ার্ড হিসাবে সর্বোচ্চ সংখ্যক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে ইয়ার্ড দুটিতে। শিল্প মন্ত্রণালয় বলছে, নিয়মিত দুর্ঘটনার কারণে দেশে ও বিদেশে সুনাম ক্ষুন্নের পাশাপাশি নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে জাহাজ ভাঙা শিল্পে। বিগত ছয় বছরে ২২ টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১২ জন শ্রমিক কেএসআরএম শিপ ইয়ার্ডে।

জানা গেছে, জাহাজ কাটার সময় লোহার পাত এবং শেকল পড়ে, বয়লার বিস্ফোরণে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। নিরাপত্তা সরঞ্জাম না দেওয়া এবং এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় মৃত্যুর হার কমছেনা এখানে। প্রতি বছর একাধিক শ্রমিকের মৃত্যুর পাশাপাশি হাত-পা হারিয়ে পঙ্গু হয়েছেন অনেকে। জাহাজ ভাঙা শিল্পের জন্য কেএসআরএম গ্রুপের ইয়ার্ড দুটি মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

সূত্র জানায়, চলতি বছর প্রথম দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনা ঘটেছে কেএসআরএমের ইয়ার্ডে। ২৬ জানুয়ারি কবির স্টিল শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন মোহাম্মদ বকুল প্রামাণিক (৫৭)। একই ইয়ার্ডে ১ ফেব্রুয়ারি দুর্ঘটনায় নিহত হন আরিফুল ইসলাম সুজন(২৮)। প্রাথমিক সুরতহাল রিপোর্টে জাহাজে কাজ করার সময় উঁচু থেকে পড়ে আরিফের মৃত্যু হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। মালিকপক্ষ স্বাভাবিক মৃত্যু হিসেবে প্রমাণের অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন শ্রমিক নেতারা। এ ঘটনায় শিল্প মন্ত্রনালয় ইয়ার্ডের কার্যক্রম সাময়িক স্থগিত করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।

কমিটির আহ্বায়ক শিল্প মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. নূরুজ্জামান প্রতিবেদককে বলেন, আমরা ইয়ার্ড পরিদর্শন করে এসেছি। সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করবো।

জানা গেছে, ২০২১ সালের ২৯ ডিসেম্বর কবির গ্রুপ শিপ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ স্থাপনায় (সাবেক খাজা শিপ ইয়ার্ড) আইরন প্লেটের আঘাতে শ্রমিক আবু বকর (৪২) গুরুতর আহত হন। পরে তার ডান হাতের কনুইয়ের নিচ থেকে কেটে ফেলতে হয়েছে। ২৯ সেপ্টেম্বর আইরন প্লেটের আঘাতে মোহাম্মদ তসলিম (৪০) নামে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়। ১০ ফেব্রুয়ারি ফিটার ম্যান রুস্তমের পা ভেঙে যায়। ২২ নভেম্বর কাটারম্যান জহির ও ২০ সেপ্টেম্বর লিটন আহত আহত হন।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ লেবার স্টাডিস (বিলস) সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালে তিন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে খাজা শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে যা ওই বছর একক ইয়ার্ড হিসেবে সর্বোচ্চ। ওই বছরের ২৪ মার্চ টক্সিক গ্যাসে আক্রান্ত হয়ে নিরঞ্জন দাশ(৬৫) ও সুমন দাশ (৪৮) এবং ২৫ নভেম্বর মো. ইব্রাহিমের (৩৫) মৃত্যু হয়।

২০১৯ সালের ২৩ জুলাই খাজা শিপ ইয়ার্ডে শহিদুল ইসলাম মন্ডলের (৪০) মৃত্যু হয়। সেইফটি বেল্ট না থাকায় জাহাজের উপর থেকে পড়ে গুরুতর আহত হয়। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

জানা গেছে, ২০১৮ সালেও একক প্রতিষ্ঠান হিসেবে সর্বোচ্চ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল কবির শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে। ৩০ জুন নয়ন, ২৫ ফেব্রুয়ারি আজহার মোল্লা(৫৫), ২৮ মার্চ ওফিল রেম্মা(২৫), ২০১৭ সালের ২১ মে কাটার সহকারী সচিন্দ্র দাশ, ২০১৬ সালের ২৮ মার্চ কাটার হেলপার মো. সুমন ও ২৩ জুন মো. সমেশ নামে দুই শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।

২০২০ সালের ২২ জানুয়ারি খাজা শিপ ইয়ার্ডে আবু তাহের(২৭), ৯ ফেব্রুয়ারি মাহমুদুল (৩৫), ৩১ আগস্ট কবির স্টিল ইয়ার্ডে কাটার ম্যান শুভংকর (৩৩), ২০১৯ সালের ২২ মে কবির শিপ ইয়ার্ডে আহত হন মোহাম্মদ জসিম নামে এক শ্রমিক। হাতে ইনফেকশনের কারণে ডাক্তার তার একটি হাত কেটে ফেলার পরামর্শ দিয়েছিল। ২০১৭ সালের ১৭ অক্টোবর কাটার ম্যান মো. শাহীন (৩২) গুরুতর আহত হন।

সর্বশেষ চলতি বছরের (২০২২) ৭ এপ্রিল কবির স্টিল শিপ রিসাইক্লিং ফ্যাসিলিটি ইয়ার্ডে কাটার হেলপার মুজিবুল হক (৩৬) আহত হন। যদিও মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ওই ইয়ার্ডটি বন্ধ থাকার কথা। ১ ফেব্রুয়ারি সুজন নিহতের ঘটনায় ইয়ার্ডের সকল কার্যক্রম স্থগিত করেছিল শিল্প মন্ত্রণালয়।

জাহাজ ভাঙা শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফোরামের আহ্বায়ক তপন দত্ত প্রতিবেদককে জানান, নিয়মিত দুর্ঘটনা ঘটলেও নিরাপত্তা নিশ্চিতে ইয়ার্ড মালিক উদ্যোগ নিচ্ছেন না। ঠিকমতো ক্ষতিপূরণও পাচ্ছে না নিহত শ্রমিকদের পরিবার। আমদানিকারক ও ইয়ার্ড মালিকদের অধিক মুনাফার মনোভাবের কারণে নিয়মিত দুর্ঘটনা ঘটছে। সম্প্রতি নিহত শ্রমিক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করলেও মালিকপক্ষ স্বাভাবিক মৃত্যু প্রমাণ করতে চাচ্ছে। এজন্য তারা বিভিন্ন জায়গায় টাকা খরচ করছে।

এ বিষয়ে কথা বলতে কেএসআরএম গ্রুপের প্রধান নির্বাহি মেহেরুল করিমের মোবাইলে কল দিলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। ভূমি ব্যবস্থাপক মো. কামালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাড়া দেননি।

জাহাজভাঙ্গা শ্রমিক কণ্যানে কাজ করছেন মোঃ আলী । তিনি বলেন,জাহাজ ভাঙ্গাকালে কাজ করতে গিয়ে অনেক শ্রমিক কে প্রাণ হারাতে হয় অব্যবস্হাপনার কারনে,কোন শ্রমিক মারা গেলে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেয়না কেসআরএম সহ বেশ কিছু মালিক।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;