সীতাকুণ্ড ভূমি অফিস থেকে নথি গায়েব!

সীতাকুণ্ড ভূমি অফিস থেকে নথি গায়েব!
সীতাকুণ্ড ভূমি অফিস থেকে নথি গায়েব!

বিশেষ প্রতিবেদক।।

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলা ভূমি অফিস থেকে মামলার নথি গায়েব হওয়ার অভিযোগ ওঠেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ড. মাশফিক আহমেদ চৌধুরী নথি উদ্ধারের জন্য চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। ড. মাশফিক আহমেদ চৌধুরী জাতিসংঘের শরনার্থী সংস্থা ইউআরজিসিতে নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত ও বাংলাদেশী সিনেটর। তিনি চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার সংসদ সদস্য ফজলে করিম চৌধুরীর আপন ভাগিনা।

অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, সীতাকুণ্ড উপজেলা ভূমি অফিসে গত কয়েক বছর আগে সহকারী কমিশনার (ভূমি), উপজেলা ভূমি অফিস ও ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে ১৯৮২-৮৩ সনের (পোড়াসন) ৬ একর ৬৪ শতক জমি অন্যকে রেজিস্ট্রি করিয়ে দেয়া হয়। প্রকৃতপক্ষে ওই জমির মালিক ড. মাশফিক আহমেদ চৌধুরী।

এমন দুর্নীতি-অনিয়মের খবরে আঁতকে ওঠেন ড. মাশফিক আহমেদ চৌধুরী। ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এতো দুর্নীতি-অনিয়ম ভূমি অফিসে হয় আমার জানা ছিলো না। শত শত মানুষ এখানে হয়রানির শিকার হচ্ছে। একজনের জমি অন্যজনকে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ জুলুম আমাদের বোধহয় কিয়ামত পর্যন্ত দেখতে হবে।

ড. মাশফিক আহমেদ চৌধুরীর আবেদন সূত্রে জানা যায়, ১৯৮২-৮৩ সনে ড. মাশফিক আহমেদ চৌধুরীর বাবা সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া ইউনিটেক্স স্পিনিং মিলসের পিছনের এলাকায় বেশকিছু জমি ক্রয় করেছিলেন। দীর্ঘ দিন পেশাগত কাজে দেশে-বিদেশে ব্যস্ত থাকায় পৈতৃক সম্পত্তির খোঁজ নিতে পারেননি তিনি। সর্বশেষ নিজের পিতার ক্রয় করা সম্পত্তির নামজারি করাতে গেলে মাথায় ঝামেলার পাহাড় এসে পড়ে।

ড. মাশফিক তার বাবার ক্রয় করা জমির নামজারি করতে গিয়ে দেখেন অন্যজনের নামে জমিগুলো নামজারি হয়ে আছে।পরে বাধ্য হয়ে সেই নামজারির বিরুদ্ধে সীতাকুণ্ড উপজেলা ভূমি অফিসে একটি মিছ মামলা (১৫/২০১৭) দায়ের করেন তিনি।

মামলা দায়েরের পর কানুনগোর প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ড. মাশফিক আহমেদ চৌধুরীকে আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দেন সহকারী কমিশনার (ভূমি)। পরে তিনি আদালতের শরণাপন্ন হয়ে আপীল দাখিল করলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আদালত পুনরায় মামলাটি সুরাহার জন্য সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) আদেশ প্রদান করেন। পরবর্তীতে ড. মাশফিক আহমেদ চৌধুরীর প্রতিনিধি মো. রাসেল সীতাকুণ্ড উপজেলা ভূমি অফিসে যোগাযোগ করলে ফাইলটি পুরোপুরি হারিয়ে গেছে বলে জানানো হয়। বারবার সীতাকুণ্ড উপজেলা ভূমি অফিসে যোগাযোগ করলেও ফাইলটির সন্ধান মেলেনি।

এরই প্রেক্ষিতে গত ১১ মে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক বরাবর ফাইলটি উদ্ধার চেয়ে লিখিত আবেদন করেছেন ড. মাশফিক আহমেদ চৌধুরী। একইসাথে বিষয়টি ভূৃমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদকে জানিয়েছেন তিনি। আবেদনের অনুলিপি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিবালয়ে দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ড. মাশফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, আমার বাবার কেনা জমি কে বা কারা তাদের নামে জারি করে ফেলে। যা সম্পূর্ণ ভুয়া ও জাল দলিলের মাধ্যমে হয়েছে। পোড়াসন হওয়ায় আমি মূল দলিল সংগ্রহ করতে পারছি না। পরে ইনডেক্স বের করলে জমির প্রকৃত মালিক আমার বাবা বলে নিশ্চিত হই। যথেষ্ট কাগজপত্র আমাদের নামে থাকার পরও অন্যরা কীভাবে জাল দলিল করে নামজারি করলো তা বুঝে আসছে না।

এ সংক্রান্ত একটি মিছ মামলা করলে ভূমি অফিস থেকে আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দেয়। পরে আদালত আবার সীতাকুণ্ড ভূমি অফিসের কাছে পাঠায় ফাইলটি। কিন্তুু আশ্চর্যের বিষয় সীতাকুণ্ড উপজেলা ভূৃমি অফিসে আমার মামলার ফাইলটিও গায়েব হয়ে গেছে। কীভাবে গায়েব হয়? নিশ্চয়ই যারা আগে কারসাজি করে নামজারি করে দিয়েছে এটিও তাদের কাজ। না হলে ফাইল গায়েব হওয়ার কোনও কারণ থাকতে পারে না। – বলেন ড. মাশফিক।

তিনি আরও বলেন, আমি বিষয়টির প্রতিকার চেয়ে জেলা প্রশাসক বরবার লিখিত আবেদন জানিয়েছি। সেইসাথে আমার বন্ধু ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদকেও জানিয়েছি। তিনি আমাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আশ্বস্ত করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সীতাকুণ্ডের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশরাফুল আলম বলেন, বিষয়টি অনেক পুরোনো। আমি সীতাকুণ্ডে দায়িত্ব গ্রহণের অনেক আগে থেকেই ফাইলটির কার্যক্রম হয়ে আসছে। বিগত ৭ জানুয়ারি ২১ সালে নথিটি সৃজন করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২৫.০৮.২০২১, ২১.১০.২১, ১.১২.২১, ২৭.০২.২২ ও ৩০.০৩.২২ শুনানী অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইতোমধ্যে ২৭.০৬.২১ তারিখে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা ও ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা প্রতিবেদন দিয়েছেন। বিগত ৩০.০৩.২২ সার্ভেয়ারকে সরেজমিন তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। দুই পক্ষের চরম বিরোধের কারণে সার্ভেয়ার তার প্রতিবেদনে, ‘দখল নিরুপণ করা সম্ভব হয় নাই’ মর্মে জানিয়েছেন।

পরবর্তীতে বিগত ১৩.০৪.২২ তারিখের আদেশে সার্ভেয়ার ও ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাকে আগামী ২০.০৬.২২ তারিখের মধ্যে যৌথভাবে দখল নিরূপণের জন্য দায়িত্ব দিয়ে আদেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী ২০.০৬.২২ তারিখে শুনানী অনুষ্ঠিত হবে। কাজেই কার্যক্রম চলমান থাকা একটা ফাইলের বিষয়ে অভিযোগ বোধগম্য নয় বলেন এসিল্যান্ড আশরাফুল আলম।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;