সীতাকুণ্ডে থামছেনা ট্রান্সফরমার চুরি : এক বছরে ১১ ট্রান্সফরমার চুরি - খুন ১, মামলা হলেও নিরুপায় পুলিশ

সীতাকুণ্ডে থামছেনা ট্রান্সফরমার চুরি : এক বছরে ১১ ট্রান্সফরমার চুরি - খুন ১, মামলা হলেও নিরুপায় পুলিশ
সীতাকুণ্ডে থামছেনা ট্রান্সফরমার চুরি : এক বছরে ১১ ট্রান্সফরমার চুরি - খুন ১, মামলা হলেও নিরুপায় পুলিশ

বিশেষ প্রতিবেদক ।।

সীতাকুণ্ডে থামছেনা ট্রান্সফরমার চুরি। গত এক বছরে ১১টি ট্রান্সফরমার চুরি হলেও ১টিও উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। ট্রান্সফরমার চুরিতে বাধা দেওয়ার সময় গত বছরের ১ অক্টোবর এক ব্যক্তির মৃত্যুও হয়েছে। এরপরও থামছে না এই অপকর্ম।

পুলিশ জানায়, গত বছরের ১ অক্টোবর ট্রান্সফরমার চুরিতে বাধা দেওয়ায় নুরুল আমিন নামের এক ব্যক্তি খুন হয়েছেন। এই ঘটনায় ট্রান্সফরমার চুরি ও হত্যা মামলা করা হলেও পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। বর্তমানে হত্যা মামলাটি তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

জানা গেছে, চুরি হওয়া ১১টি ট্রান্সফরমার বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) দুটি কার্যালয় এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির একটি কার্যালয়ের অধীনে ছিল। এসব চুরির ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় মামলাও হয়েছে। তবে মামলার কোনো অগ্রগতির খবর জানা যায়নি।

সরেজমিনে দেখা যায়, সীতাকুণ্ড রেলস্টেশন কার্যালয়ের উত্তর পাশে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের দুটি খুঁটিতে তিনটি বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের মাথা ঝুলে আছে। খুঁটি দুটির মাঝখানে একটি ট্রান্সফরমার ছিল। ট্রান্সফরমারের ফ্রেমটি রয়ে গেলেও সেটি চুরি হয়ে গিয়েছিল। এ সময় স্থানীয় বাসিন্দা আনোয়ার হোসেনের সাথে এ বিষয়ে কথা হয়। তিনি বলেন, তিন থেকে চার মাস আগেই ট্রান্সফরমারটি চুরি হয়ে গেছে। এক দিন তিনি গোসল করতে এসে দেখেন, পুকুরের পাড়ে ট্রান্সফরমারের খোল পড়ে আছে। চোরের দল ট্রান্সফরমারের খোলের ভেতরে থাকা জিনিসপাতি নিয়ে চলে গেছে।

সীতাকুণ্ড উপজেলায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩-এর অধীনে আছে সীতাকুণ্ড আংশিক (সীতাকুণ্ড পৌর সদর, সৈয়দপুর ও বারৈয়ারঢালা ইউনিয়ন), মিরসরাই ও হাটহাজারী উপজেলা। এ ছাড়া সীতাকুণ্ড পৌর সদর থেকে দক্ষিণ দিকে চট্টগ্রাম নগরের সিটি গেট পর্যন্ত এলাকা বিদ্যুৎ সরবরাহ করে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের বাড়বকুণ্ড বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ ও ফৌজদারহাট বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ। যদিও ফৌজদারহাট বিদ্যুৎ বিতরণ কার্যালয়ের অধীনস্থ এলাকা থেকে গত এক বছরে কোনো ট্রান্সফরমার চুরি হয়নি। তবে বাড়বকুণ্ড বিদ্যুৎ বিতরণ কার্যালয় এলাকা থেকে তিনটি, বাড়বকুণ্ড রেলওয়ে স্টেশন থেকে একটি এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩-এর কার্যালয়ের অধীন এলাকা থেকে সাতটি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। আর সে হিসেবে গত এক বছরে মোট ১১টি ট্রান্সফরমার চুরি হলো। ১১টি ট্রান্সফরমারের বর্তমান দাম প্রায় ১০ লাখ টাকা। যদিও পিডিবির ট্রান্সফরমার চুরি হলে এর খরচ বহন করে সরকার কিন্তু পল্লী বিদ্যুতের ট্রান্সফরমার চুরি হলে এর খরচের অর্ধেক গ্রাহককে বহন করতে হয়।

এ বিষয়ে সীতাকুণ্ড পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩-এর মহাব্যবস্থাপক নূর মো. আজম মজুমদার বলেন, প্রতিটি ঘটনায় তাঁরা সংশ্লিষ্ট থানায় চুরির মামলা করেছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত একটি ট্রান্সফরমারও উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। চোর চক্র ট্রান্সফরমারের ভেতরে থাকা তামার কয়েল চুরি করে নিয়ে যায়। আর খোলটি ফেলে রেখে যায়। পরে তাঁরা খোলগুলো উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। তিনি জানান, মূলত ট্রান্সফরমার থেকে তামার কয়েল নিয়ে যায় চোর। সেগুলো ভাঙারির দোকানে বিক্রি করে। 

অন্যদিকে বাড়বকুণ্ড বিতরণ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান বলেন, গত এক বছরে তাঁর অধীনস্থ এলাকা থেকে তিনটি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। এসব ঘটনায় তিনি সীতাকুণ্ড থানায় তিনটি চুরির মামলা করেছেন। একটি ঘটনায়ও কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। উদ্ধার হয়নি চুরি যাওয়া ট্রান্সফরমারও।

এতসব ট্রান্সফরমার চুরি ও মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে সীতাকুণ্ড থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ বলেন, ট্রান্সফরমার চুরির প্রতিটি মামলায় তাঁরা তদন্ত করছেন। যেহেতু ট্রান্সফরমারের চুরির পর যন্ত্রপাতিগুলো বিভিন্ন খোলাবাজারে বিক্রি করে দেওয়া হয়। সে জন্য এই চোর চক্রকে ধরতে তাঁদের কিছুটা সময় লাগছে।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;