যৌতুক না পেয়ে সীতাকুণ্ডে অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূকে নির্যাতন ও গর্ভের সন্তান নষ্ট ! 

যৌতুক না পেয়ে সীতাকুণ্ডে অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূকে নির্যাতন ও গর্ভের সন্তান নষ্ট ! 
যৌতুক না পেয়ে সীতাকুণ্ডে অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূকে নির্যাতন ও গর্ভের সন্তান নষ্ট ! 

বিশেষ প্রতিবেদক ।।

সীতাকুণ্ডে অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূকে নির্যাতন ও গর্ভের সন্তান নষ্টের অভিযোগ ওঠেছে স্বামী, শ্বাশুড়ি ও ননদের বিরুদ্ধে।এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী মরিয়ম পপি (২৪) বাদী হয়ে তিনজনকে আসামী করে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছেন। পপি সীতাকুণ্ডের পূর্ব মুরাদপুর দোয়াজী পাড়া গ্রামের মোহাম্মদ আলীর মেয়ে।

মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর সীতাকুণ্ড পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে মোঃ মোবারক হোসেনের সাথে সামাজিকভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন মরিয়ম পপি। বিয়ের পর থেকেই তার উপর স্বামী মোবারক হোসেন, ননদ ও শ্বাশুড়ি আড়াই লক্ষ টাকা যৌতুক দাবি করে আসছে। বাপের বাড়ি থেকে যৌতুকের টাকা আনতে বার বার তাকে চাপ দিতে থাকে। টাকা আনতে ব্যর্থ হলে শারীরিক-মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হয় পপিকে।

পপি মামলায় আরও উল্লেখ করেন, তিনি অন্তঃসত্ত্বা থাকাকালীন চলতি বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি তার স্বজনরা তাকে বেড়াতে নিয়ে যেতে আসলে শ্বশুর বাড়ির লোকজনের সঙ্গে ঝগড়া হয়। ওইদিন তার স্বামী তার তলপেটে উপর্যপুরি লাথি মারতে থাকে। এতে তিনি মারাত্মক ব্যাথা অনুভব করে গুরতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। একইভাবে পরদিন ২৮ ফেব্রুয়ারি তার স্বামী, ননদ ও শ্বাশুড়ি তার উপর শারীরিক নির্যাতন চালায়, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও শ্লীলতাহানি করে। পরে স্বজনদের সহযোগিতায় সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা শেষে পিত্রালয়ে আসতে সক্ষম হন।

মরিয়ম পপি মামলায় আরও উল্লেখ করেন গত ১৮ মার্চ পিত্রালয়ে থাকা অবস্থায় তিনি একটি মৃত ছেলে সন্তান প্রসব করেন। মৃত সন্তান প্রসবের খবর শ্বশুর বাড়ির লোকজনকে অবহিত করতে মুঠোফোনে কল করলেও তারা সাড়া দেননি। বরং সকল প্রকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। গর্ভকালীন সময়ে তলপেটে উপর্যপুরি লাথি, কিল-ঘুষি দিয়ে মারধরের কারণে তার গর্ভের সন্তানের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেন মরিয়ম পপি।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী নারী মরিয়ম পপি বলেন, আমার স্বামী, ননদ ও শ্বাশুড়ি গর্ভকালীন সময়ে আমার উপর অমানুষিক নির্যাতন চালায়। তাদের নির্যাতনে আমার গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়েছে। আমার স্বামী উপজেলা পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের সরকারি চাকরীজীবি হয়েও ব্যবসার অজুহাতে আড়াই লক্ষ টাকা যৌতুক দাবি। দিতে ব্যর্থ হলে শারীরিক-মানসিক অত্যাচার চালায়। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে আমার দায়ের করা মামলাটি পিবিআই তদন্ত করছে। কিন্তুু তারা নানা জালিয়াতির মাধ্যমে মামলার তদন্তকে প্রভাবিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। আমার ননদ নাজমিন আক্তার সীতাকুণ্ড সরকারি হাসপাতালে স্বাস্থ্য সহকারীর পদে চাকরীর সুবাদে ঘটনার সময় হাসপাতালে ভর্তি ছিলো মর্মে ভুয়া মেডিকেল সনদ নিয়ে এসেছে।

অন্যদিকে আমার স্বামীও মিথ্যা তথ্য দিয়ে ঘটনায় নিজেকে নির্দোষ করতে চাচ্ছে। অথচ তারা ওই দুইদিন বাড়িতে থেকে আমার উপর নির্যাতন চালিয়েছে। তারা দুজন সরকারি চাকরীজীবি হওয়ায় আমি কিছুতেই তাদের সাথে পেরে ওঠতে পারছি না। অনায়াসে নকল কাগজপত্র বানিয়ে মামলার তদন্তকে প্রভাবিত করছে যোগ করেন মরিয়ম পপি।

এদিকে অভিযুক্ত মোবারক হোসেন ও তার বোন নাজমিন আক্তারের কাছে জানতে চাইলে তারা ভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন। পিবিআইয়ের তদন্তে নাজমিন আক্তার ঘটনার সময় হাসপাতালে ভর্তি করার কথা জানালেও তা নিয়ে ওঠেছে প্রশ্ন। অভিযোগ ওঠেছে বাড়িতে থেকেই হাসপাতালের কর্মচারী হওয়ার সুবাদে জালিয়াতি করে হাসপাতালে ভর্তি থাকার রেজিষ্ট্রেশন সনদ নিয়েছেন নাজমিন আক্তার।

এ বিষয়ে মোবারক হোসেন আমরা তার (মরিয়ম পপি) উপর কোন শারীরিক মানসিক নির্যাতন করিনি। আমি উপজেলা পল্লী উন্নয়ন বোর্ডে পরিদর্শক পদে চাকরী করি। যেদিন ঘটনা হয়েছে সেদিন বাড়িতে ছিলাম না। আমার স্ত্রী মিথ্যা নাটক সাজিয়ে সবার সামনে ঝগড়া করে আমার অফিসের টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করে চলে যায়।

মোবারক আরও বলেন, কেউ তার গর্ভের সন্তান নষ্ট করেনি। সে নিজেই নষ্ট করে আমাদের উপর দায় চাপাচ্ছে। ঘটনার সময় আমি ও আমার বোন বাড়িতে ছিলাম না।

নাজমিন আক্তার বলেন, ঘটনার সময় প্রচন্ড বমির কারণে ৪ দিন হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কথা বললেও হাসপাতালে ভর্তি থাকা অবস্থায় বাড়িতে গোসল করতে আসার কথা স্বীকার করেন। অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগী কিভাবে বাড়িতে গোসল করতে আসেন এমন প্রশ্নের সুদত্তর দিতে পারেননি নাজমিন।

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সীতাকুণ্ড পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের এক কর্মচারী বলেন, মোবারক হোসেন এর আগেও এক মুক্তিযোদ্ধার মেয়েকে বিয়ে করেছে। পরে শুনেছি নির্যাতনের কারণে সে বাধ্য হয়ে চলে গেছে। বিয়ে করে সংসার ভাঙা মোবারকের এখন নেশা হয়ে গেছে।

জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রাম জেলার উপ-পুলিশ পরিদর্শক কামাল আব্বাস বলেন, মামলাটির তদন্ত এখনো চলমান রয়েছে। আমরা এখনো মেডিকেল রিপোর্টগুলো হাতে পায়নি। কেউ ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে নিজেকে অভিযোগে দোষী বা নির্দোষ প্রমাণ করার চেষ্টা চালাচ্ছে এমন অভিযোগের সত্যতা পেলে তার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নিব।

খালেদ/ পোস্টকার্ড ;