মহাপ্রতারণা অনলাইন পণ্যে! আসলে কী আছে ‘ন্যাচারাল স্লিমিং পাউডারে’ ?

কিছুই উল্লেখ নেই পাউডারের প্যাকেটের গায়ে

মহাপ্রতারণা অনলাইন পণ্যে! আসলে কী আছে ‘ন্যাচারাল স্লিমিং পাউডারে’ ?
মহাপ্রতারণা অনলাইন পণ্যে! আসলে কী আছে ‘ন্যাচারাল স্লিমিং পাউডারে’ ?

আলমগীর হোসেন।।

জীবন যেন প্রতিনিয়তই ‘ডিজিটাল’ হয়ে উঠছে। ঘরে বসেই ইন্টারনেটে বা অনলাইনে অর্ডার দিলেই জীবনযাপনের প্রায় সব কিছুই দ্রুত চলে আসছে হাতের মুঠোয়। নানা ওষুধ কিংবা খাদ্য সামগ্রীও এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। কিন্তু দেখা যাচ্ছে অনলাইনে অর্ডার দেওয়া ঔষুধিপণ্য বা খাদ্যপণ্যে মহাপ্রতারণা করা হচ্ছে। যে পণ্যটি সরবরাহ করা হচ্ছে আসলে সেটি কী পণ্য কিংবা তার গুণগতমান কেমন? কী ধরনের উপাদান আছে? মেয়াদের কী অবস্থা? এমন সাধারণ প্রশ্নেরও কোনো উত্তর লেখা নেই ওইসব পণ্যের প্যাকেটের গায়ে। এমনকি বিএসটিআইয়ের লোগোও নেই তাতে। ফলে সেগুলো খাওয়া বা সেবন করাটা কতটা বিপজ্জনক সেটাও প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সম্প্রতি একাধিক অনলাইনে খাদ্য পণ্যে প্রতারণার এমন ভয়ঙ্কর চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। এক অভিযোগে দেখা গেছে জনৈক একজন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা তার শরীরের ওজন কমানোর জন্য চিন্তায়মগ্ন হয়ে পড়েন। ব্যস্ততার মধ্যে তাই খোঁজখবর নিয়ে ন্যাচারাল শপ বিডি ওরফে এনএসপি অনলাইন শপ ওরফে ফিট ট্রিট বিডি নামে এক প্রতিষ্ঠানে ‘ন্যাচারাল স্লিমিং পাউডার’ সরবরাহের জন্য অর্ডার দেন।

এ জন্য অনলাইনের থাকা নির্দিষ্ট রবি নাম্বারে যোগাযোগের পর দিতে হয় ১০৫০ টাকা। ১ নভেম্বর রাজধানীর ধানমন্ডির সাত মসজিদ রোডে ওই কর্মকর্তার অফিসে কথিত সেই ‘ন্যাচারাল স্লিমিং পাউচার’ এর একটি প্যাকেট আরেকটি প্লাস্টিকের কৌঁটায় ভরে সরবরাহ করা হয়। তিনি গ্রহণ করার পরই প্যাকেট দেখে সন্দেহের সৃষ্টি হয়। সাদা প্যাকেটের গায়ে বিন্দুমাত্রও কোনো কিছু লেখা বা উল্লেখ নেই। পরে একজন চিকিৎসকের পরামর্শে তিনি সেই ন্যাচারাল স্লিমিং পাউডার সেবন থেকে বিরত থাকেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, গুঁড়ো বা পাউডারের প্যাকেটের গায়ে কিছু না থাকলেও কৌঁটার গায়ে খুব সাধারণ কাগজে কিছু লেখা উল্লেখ ছিল। সেখানে লেখা ছিল ‘ন্যাচারাল স্লিমিং পাউডার’। নিচেই ঠিকানা-১৬৭, মুক্ত বাংলা শপিং কমপ্লেক্স মিরপুর-১, ঢাকা-১২১৬, মোবাইল-০১৮২৪৭৮৯৬৭৮। এ ছাড়া ফেসবুকের সঙ্গে এনএসপিএইচএম নামে ওয়েবসাইট উল্লেখ করা হয়েছে। ওই মুঠোফোন নাম্বারে কল করা হলে একজন নিজেকে রবিউল ইসলাম রবি বলে পরিচয় দেন।

এ নাম্বারটি কল সেন্টারের বলেও জানান। রবি বলেন, ‘মিরপুরের ঠিকানাটি উল্লেখ থাকলেও তাদের পণ্যটি ‘হোম মেড’ (বাড়িতে তৈরি)।’ তাদের কোনো ল্যাবরেটরি আছে কিনা জানতে চাইলে বলেন না। এটি হেকিম দিয়ে তৈরি। ভেষজ ও গাছ গাছড়া দিয়ে বানানো। আমরাও খাই, কেউ কিনতে চাইলে তাদেরকে সরবরাহ করি।’ প্যাকেটের গায়ে মেয়াদ বা বিএসটিআইয়ের কোনো কিছু না থাকা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রবি বলেন, ‘এগুলো বিশ্বাসের ওপর চলে। আপনি কিনতে চাইলে কিনতে পারেন।’ এরপর প্রতিষ্ঠান মালিকের নাম জানতে চাইলেই ক্ষিপ্ত হন রবি। তিনি বলেন, ‘আপনি তো প্রোডাক্ট কিনবেন, মালিক দিয়ে কি করবেন? ওসব বলা যাবে না।’

জানা যায়, কেবল এই একটি ঘটনাই নয়, এমনভাবে অহরহ অনলাইন পণ্যে প্রতারণা চলছে। অনেকেই অসাবধানতাবশত ভালোভাবে খেয়াল না করেই সেবন করছেন। তাতে করে কেউ কেউ হয়তো স্বাস্থ্যগত ভয়ঙ্কর ঝুঁকিতে পড়ছেন। যাতে অনেক সময় হয়তো বুঝতেই পারছেন না, সেই পণ্যের কারণেই তার এমন অবস্থা হয়েছে। ফলে যেকোনো খাদ্য বা ঔষুধি পণ্য সেবনের আগে সেটির গুণগতমান, মেয়াদ ও মান নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানের লোগো বা অনুমোদন দেখা অত্যাবশ্যক বলে মনে করেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

পাশাপাশি প্রতারণাকারী ওই সব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি বলেও মন্তব্য করেন তারা। ভেজাল, প্রতারণা ও নকলের বিরুদ্ধে সোচ্চারভাবে অভিযান পরিচালনাকারী সংস্থা র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার সিনিয়র সহকারী পরিচালক মিজানুর রহমান ভুঁইয়া বলেন, ওই সব বিষয়ে র‌্যাব দীর্ঘদিন ধরেই ভ্রাম্যমাণ আদালতসহ অভিযান পরিচালনা করে আসছে। জনস্বার্থে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে। নিজস্ব অনুসন্ধানের বাইরেও অভিযোগের ভিত্তিতে র‌্যাব অভিযান পরিচালনা করে থাকে।