প্রতিটি এনআইডি'র জন্য রোহিঙ্গারা জনপ্রতি ৪০ হাজার টাকা দিতো !

পোস্টকার্ড প্রতিবেদক ।।

প্রতিটি এনআইডি'র জন্য রোহিঙ্গারা জনপ্রতি ৪০ হাজার টাকা দিতো !
প্রতিটি এনআইডি'র জন্য রোহিঙ্গারা জনপ্রতি ৪০ হাজার টাকা দিতো !

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দালালদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জাতীয়পরিচয়পত্র (এনআইডি) সরবরাহ করতেন। আর সেই এনআইডি নিতে রোহিঙ্গারা জনপ্রতি ৪০ হাজার টাকা দিতো।

সম্প্রতি এনআইডি জালিয়াত নিয়ে গঠিত ইসির তদন্ত কমিটি এমন তথ্য পায়।

ওই কমিটির কর্মকর্তারা জানান, ২০১৩ সালে ল্যাপটপ চুরি করে বেশকিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী রোহিঙ্গা ও বিদেশি নাগরিকদের এনআইডি সরবরাহ করে আসছিলেন।

এছাড়াও বৈআইনিভাবে এনআইডি সংশোধনের কাজেও তারা জড়িত ছিলেন। ফাঁদ ফেলে সেই চক্রটিকে শনাক্ত করে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজনকে পুলিশে সোপর্দ করেছে ইসি। এমনকি অনেকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলার পাশপাশি বিভাগীয় ব্যবস্থাও নিয়েছে সংস্থাটি।

সম্প্রতি লাকী বেগম নামে একজন এনআইডি আনতে গেলে, মূল সার্ভার থেকে ধরা পড়ে তার এনআইডি সঠিক নয়। জিজ্ঞাসাবাদে চিহ্নিত হয়েছে, তাকে বৈধ এনআইডি দেওয়া হয়নি। তাই তাকে পুলিশে দেওয়া হয়।

এরপরই নড়েচড়ে বসে ইসি। চলমান ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা ৬১ জন রোহিঙ্গা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার চেষ্টা করে।

যাদের তথ্য লোকাল সার্ভারে অন্তর্ভুক্তও করা হয়। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের ডাটা এন্ট্রি অপারেটররা নিবন্ধন কর্মকর্তা অগোচরে এই অপকর্মটি করেন। যদিও কোথাও কোথাও কর্মকর্তারা এ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই আগেই চাকরিচ্যুত হয়েছিল।

রোহিঙ্গারা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার খবর গণমাধ্যমে আসার পর নির্বাচন কমিশনের বিশেষ তদন্ত কমিটি যে তথ্য পেয়েছে, তাতে শুক্রবার ও শনিবার ভোটার করে নেওয়ার সরঞ্জাম (মডেম ও সিগনেচার প্যাড) বাড়িতে নিয়ে গিয়ে এই অপকর্মটি করতেন কর্মচারীরা।

অথচ মডেম থাকার কথা নিবন্ধন কর্মকর্তার কাছে ও তার অফিসে। এই অবস্থায় তাদের সুপারিশ রয়েছে। ভোটার তালিকা আইনের যথাযথ প্রয়োগের। এক্ষেত্রে ভোটার তালিকা প্রণয়নের সব সরঞ্জাম উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছেই রাখতে বলা হয়েছে।

এছাড়া সব কর্মকর্তাকে তাদের নিজস্ব ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড নিজেদেরই ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। এসব নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থার পাশাপাশি ভবিষ্যতে যাতে পুরো এনআইডি কর্যক্রমকে শতভাগ সুরক্ষিত রাখা যায়। সেজন্যই বসানো হবে ফেইস রিকগনিশন ডিভাইস।

নির্বাচন কমিশনের ডাটা সেন্টার, রেজিস্ট্রেশন সেন্টার, কাস্টমাইজেশন সেন্টার, সার্ভারসহ এনআইডি সব দফতরেই এই যন্ত্র বসানো হবে। এতে প্রবেশ পথের ওপরে লাগানো ক্যামেরার মাধ্যমে নিমিষেই শনাক্ত হবে ব্যক্তির পরিচিতি।

ইসির এনআইডি অনুবিভাগের মহা-পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, তদন্ত কমিটি যে তথ্য দিয়েছে, তাতে রোহিঙ্গাদের এনআইডি সরবরাহ করতে জনপ্রতি ৪০ হাজার টাকা নেওয়া হতো।

জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতেও নেওয়া হবে। এছাড়া আমরা নজরদারি আরও কঠোভাবে করছি। আশা করছি, সামনে কোনো অসাধু কর্মকাণ্ডে কেউ দৃষ্টি এড়াতে পারবে না।