ভার্চুয়াল কোর্ট চালু চট্টগ্রামে , প্রথম দিনে চার আসামির জামিন

ভার্চুয়াল কোর্ট চালু চট্টগ্রামে , প্রথম দিনে চার আসামির জামিন
ভার্চুয়াল কোর্ট চালু চট্টগ্রামে , প্রথম দিনে চার আসামির জামিন

সবুর শুভ ।।

‘ভার্চুয়াল কোর্ট’ বসল চট্টগ্রাম আদালতে। বাংলাদেশের বিচারিক ইতিহাসে প্রথমবারের মতো চালু হওয়া ভার্চুয়াল কোর্টে চট্টগ্রামের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জামিনও দিয়েছেন চারজনকে। ভিডিও কনফারেন্সিং পদ্ধতিতে চারজনের জামিনের আবেদনের উপর শুনানি শেষে চার আসামিকে জামিনের আদেশ দেন চট্টগ্রামের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ কায়সার। প্রথমদিনে এ চারজনের আবেদন শুনানির জন্য নির্ধারণ করেছিল আদালত। এ রিপোর্ট লেখা (রাত ১০টা পর্যন্ত) পর্যন্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৭০টি জামিনের আবেদন জমা হয়েছে বলে জানালেন চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নাজির মোহাম্মদ আবু তাহের।

তিনি জানান, আবেদনগুলো খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি করার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকলেই তৎপর। যারা ভার্চুয়াল কোর্টের সাথে সরাসরি জড়িত তারা পরস্পর ধৈর্য নিয়ে কাজ ও সহযোগিতা করলেই এ সিস্টেমের সর্বোচ্চ সুফল পাওয়া যাবে বলেও জানান তিনি।

এদিকে চট্টগ্রাম মহানগরীর ১৬টি থানার আসামিদের জন্য নির্ধারিত ৮টি মহানগর ম্যাজিট্রেট আদালতের ‘মুরব্বী আদালত’ চিফ মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতেও আজ বুধবার থেকে ‘ভার্চুয়াল কোর্টে’ জরুরি জামিন শুনানি শুরু হয়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এ আদালতে ৩০টি জামিনের আবেদন জমা পড়েছে বলে জানালেন সিএমএম আদালতের নাজির মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ। এছাড়া চট্টগ্রামের অন্যান্য আদালতেও এ পদ্ধতিতে জামিন শুনানির জন্য আবেদন পড়েছে বলে জানান মহানগর এপিপি এডভোকেট মোহাম্মদ ওসমান উদ্দিন।

অন্যদিকে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ কায়সারের আদালত থেকে জামিন হওয়া চারজনের একজন হচ্ছে মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তার বিরুদ্ধে হাটহাজারী থানায় দায়ের করা মামলা নম্বর হচ্ছে ০৫ (০৩) ২০২০। গত ২৩ মার্চ তাজুল ইসলাম আদালতে এসে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছিলেন। সেই থেকে তিনি জেলে আছেন।

এ বিষয়ে তাজুল ইসলামের আইনজীবী এইচএম আবুল হাসান ও এডভোকেট সমীর চৌধুরী জানান, করোনা সংক্রমণের কারণে আদালত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমরা এতদিন তাজুল ইসলামের জামিনের আবেদন করতে পারিনি। ভার্চুয়াল কোর্ট চালুর পর আমরা আজ মঙ্গলবার প্রথম জামিনের শুনানিতে অংশ নিই। ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে আদালত ভবনের চেম্বারে বসে বেলা ১টায় জামিন শুনানিতে অংশ নেয়ার পর আদালত সন্তুষ্ট হয়ে আসামিকে জামিনে মুক্তির আদেশ দেন।

প্রসঙ্গত: হাজতি আসামিদের জামিন শুনানির জন্য আদালতে ভার্চুয়াল কোর্ট চালু করা হয়। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভার্চুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে জরুরি জামিন সংক্রান্ত বিষয়সমূহ নিষ্পত্তি করার কথা বলা হয়েছে উচ্চতর আদালতের নির্দেশনায়। এ লক্ষে সংশ্লিষ্ট আইডি ও মোবাইল নম্বর ব্যবহার করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট আদালতগুলোর অফিস আদেশে তথ্য দেয়া হয়েছে ইতোমধ্যে। এতে আরো বলা হয়েছে, উল্লেখিত ই-মেইল আইডিতে জরুরি জামিন আবেদন, সংশ্লিষ্ট দালিলিক কাগজাদি এবং ওকালতনামা (সংশ্লিষ্ট আইনজীবীর সদস্য নম্বর, ই-মেইল ও মোবাইল নম্বর) স্ক্যান করে সফটকপি ভার্চুয়াল আদালতে দাখিল করার নির্দেশ প্রদান করা হল।

আদালতের তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ ২০২০ এর ক্ষমতাবলে সুপ্রিমকোর্ট জারি করা ‘বিশেষ প্র্যাকটিস নির্দেশনা’ অনুসারে এই কোর্ট গঠন করার নির্দেশনা আসে। এদিকে ভার্চুয়াল কোর্টের প্রয়োজনীয়তার কথা আলোচিত হওয়ার মাঝেই গত ৭ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভপতিত্বে গণভবনে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘আদালত কর্তৃক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ ২০২০’ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। ২ দিন পর ৯ মে ভার্চুয়াল কোর্ট সম্পর্কিত অধ্যাদেশ জারি করা হয়। অধ্যাদেশে বলা হয়, সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ বা ক্ষেত্রমত হাইকোর্ট বিভাগ, সময় সময়, প্র্যাকটিস নির্দেশনা (বিশেষ বা সাধারণ) জারি করতে পারবে।

অধ্যাদেশে আরও বলা হয়, ফৌজদারি কার্যবিধি বা দেওয়ানি কার্যবিধি বা আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে ভিন্নতর যাই থাকুক না কেন, যেকোনো আদালত এ অধ্যাদেশের ধারা ৫ এর অধীন জারি করা প্র্যাকটিস নির্দেশনা (বিশেষ বা সাধারণ) সাপেক্ষে, অডিও-ভিডিও বা অন্য কোনো ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতিতে বিচারপ্রার্থী পক্ষরা বা তাদের আইনজীবী বা সংশ্লিষ্ট অন্য ব্যক্তি বা সাক্ষীদের ভার্চুয়াল উপস্থিতি নিশ্চিত করে যেকোনো মামলার বিচার বা বিচারিক অনুসন্ধান বা দরখাস্ত বা আপিল শুনানি বা সাক্ষ্যগ্রহণ বা যুক্ততর্ক গ্রহণ বা আদেশ বা রায় দিতে পারবে।

ভার্চুয়াল আদালত কিভাবে চলবে এ সম্পর্কে ধারণা দিয়ে আদালত সংশ্লিষ্টরা জানান, এক্ষেত্রে একটি ইমেইল আইডি, ভিডিও চ্যাট অ্যাপ (জুম, গুগল মিট, মাইক্রোসফট টিম) ও স্ক্যানার সফটওয়্যার থাকতে হবে। স্ক্যানার ইন্সটল করে সেটআপ করে রাখতে হবে ডকুমেন্টস স্ক্যান করার জন্য। আবেদন করতে দরখাস্তে আইনজীবী সমিতির লিন (আইনজীবী সনাক্তকরণ নম্বর) নাম্বার, ফোন নাম্বার এবং ইমেইল আইডি দিতে হবে। ডকুমেন্টস স্ক্যান করে সংশ্লিষ্ট কোর্টের ইমেইল আইডিতে মেইল করে দিলে একটা ভার্চুয়াল নাম্বার পড়বে। ফিরতি মেসেজে পাওয়া যাবে শুনানির দিনক্ষণ। যথাসময়ে প্রস্তুত থাকতে হবে শুনানির জন্য। শুনানি শেষে জামিনের আদেশ হলে সংশ্লিষ্ট আইনজীবী বেইল বন্ড দাখিল করবেন আদালতে। আদালত তা গ্রহণ করে আবার ফরোয়ার্ড করবে কারাগার কর্তৃপক্ষের কাছে। কারাগার কর্তৃপক্ষ এবার যাচাই বাছাই করে ওই আসামিকে জামিনে মুক্তি দেবেন।