‘বাংলা বন্ড’ চালু হচ্ছে লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে
লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে (এলএসই) তালিকাভুক্ত হতে যাচ্ছে বিশ্বব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) উদ্যোগে চালু হতে যাওয়া ‘বাংলা বন্ড’ আগামীকাল তালিকাভুক্ত হবে । যা হবে টাকা ডিনমিনেটেড প্রথম বন্ড।
লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশন সূত্র জানান, প্রাথমিকভাবে এলএসইতে তালিকাভুক্ত হচ্ছে ৮০ কোটি টাকা (প্রায় ১ কোটি ডলার) মূল্যের বন্ড। পরীক্ষামূলকভাবে ছাড়া এ বন্ড সফলতা পেলে পরবর্তী সময়ে আকার বাড়ানো হতে পারে। যদি এই বন্ড ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশী মুদ্রার সাড়া পাওয়া যায় তবে ভবিষ্যতে তা ১ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বাড়ানো যাবে ।
২০১৫ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন পায় আইএফসি। তবে বিনিয়োগ বোর্ডের (বর্তমানে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) যাচাই কমিটির অনুমোদন সাপেক্ষে এ অনুমতি দেয়া হয়। বিনিয়োগ বোর্ডের যাচাই কমিটির কাছে এ-সংক্রান্ত কাগজপত্র জমা দেয় আইএফসি। প্রাণ গ্রুপের দুই প্রতিষ্ঠান প্রাণ এগ্রো ও নাটোর এগ্রো লিমিটেডের জন্য এ বন্ড ছাড়ার অনুরোধ করা হয় কমিটিকে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের মোট ঋণের পরিমাণ ৮০ কোটি টাকা। এতে সর্বোচ্চ সুদের হার নির্ধারণ করা হয়েছে সাড়ে ৯ শতাংশ। সমান কিস্তিতে তিন ও পাঁচ বছরে পরিশোধ করতে হবে এ ঋণ। চলতি বছরের এপ্রিলে বন্ড ছাড়ার বিষয়ে অনুমোদন পায় আইএফসি। অফশোর বাংলা বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে আইএফসি এ অর্থায়ন করছে। বন্ডের অর্থ পরিশোধের জন্য সময় নির্ধারণ করা হয়েছে তিন বছর। আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা এ বন্ডে বিনিয়োগ করেছে। এটির অ্যারেঞ্জার স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ও ব্যাংক অব আমেরিকা মেরিল লিঞ্চ (বিএএমএল)। বাংলাদেশে গ্রাহকদের ঋণ দিতে ১ বিলিয়ন সমমূল্যের টাকা বন্ড কর্মসূচির বিষয়ে আইএফসির ঐবছর অক্টোবরে অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ সরকার।
লন্ডনে তালিকাভুক্ত হবে বাংলা বন্ডস্থানীয় মুদ্রায় ঋণ দিতে আন্তর্জাতিক ব্যাংকের অফশোর শাখা বা অফশোর প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানত আইএফসির এ বিনিময় হয়। প্রতিশ্রুত ঋণের ৩০ শতাংশই স্থানীয় মুদ্রায়। স্থানীয় মুদ্রায় এসব ঋণের অর্থায়নে আইএফসি বেশকিছু বন্ড ছেড়েছে, যার মধ্যে রয়েছে—ভারতীয় রুপি, ব্রাজিলিয়ান রিয়ালস, ইন্দোনেশিয়ান রুপিয়া, মিয়ানমারের কিয়াত, কম্বোডিয়ার রিয়েল ও উজবেক সোম।
লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, বাংলা বন্ডের তালিকাভুক্তি উপলক্ষে লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে আগামীকাল ‘দ্য রিং দ্য বেল’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এর পরই বিনিয়োগকারীদের নিয়ে ‘ইনভেস্টরস রাউন্ড টেবিল’ অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও বিনিয়োগ সম্ভাবনার বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হবে। আইএফসি ও লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জ যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে। বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাঈদা মুনা তাসনীম অনুষ্ঠান দুটিতে উপস্থিত থাকবেন।
এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হতে যাওয়া বাংলা বন্ড হবে দেশের অর্থনৈতিক পথচলার একটি বড় অর্জন। এটি আমাদের দেশের মুদ্রা ডিনমিনেটেড প্রথম বন্ড। তাই এটি নিয়ে প্রত্যাশাও অনেক। পাশাপাশি আমরা স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের নিয়ে বৈঠক করব। বাংলাদেশে বিনিয়োগের নানা সুযোগ ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনার বিভিন্ন বিষয় তাদের সামনে তুলে ধরব। এ বন্ডের বিশেষত্ব, বিদেশের স্টক এক্সচেঞ্জেও তা টাকায় কেনা-বেচা করার সুবিধা। তাতে ডলারের সঙ্গে টাকার বিনিময় হার ওঠানামা করার ঝুঁকি কার্যত ঝেড়ে ফেলা যায়।
আইএফসি আন্তর্জাতিক প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য টাকা বন্ড ইস্যু করবে। বন্ডের বিনিময় হবে টাকায়। প্রাথমিক সাবস্ক্রিপশন ও পরবর্তী সময়ে কুপনসহ অন্যান্য প্রদেয় অর্থ ওই সময়ে ডলারের বিনিময় হারের ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে। টাকা ও ডলারের বিনিময় হারের ঝুঁকি বহন করবেন বিনিয়োগকারীরা।
বন্ডের অফশোর বিনিয়োগকারীদের অর্থ প্রদানের জন্য আইএফসি এ অর্থ টাকা থেকে ডলারে রূপান্তর করবে। অন্যদিকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করা প্রকল্প বা গ্রাহকের ঋণ ঝুঁকি বহন করবে আইএফসি। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রেমিট্যান্সের জন্য ব্যবহার করা হবে আইএফসির নিটা অ্যাকাউন্ট। কমপক্ষে একমাস আগে বাংলাদেশ ব্যাংককে এ-সংক্রান্ত লেনদেন সম্পর্কে জানাবে আইএফসি। বাজারে অসম মুদ্রা বিনিময় হার বিদ্যমান থাকায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে এ ধরনের বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ের জন্য আইএফসি অনুরোধ করেছে। ইস্যু করা বন্ডের অর্থ ডলার থেকে টাকায় রূপান্তরের পর বাংলাদেশে বিনিয়োগ করবে আইএফসি। কুপনের অর্থ পরিশোধ ও ম্যাচুরিটি সাপেক্ষে আইএফসি বাংলাদেশে তার বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্ত আয় গ্রহণ করবে।