ফাতেহার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন সড়কে বিলীন , বাড়িতে শোকের মাতম

ফাতেহার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন সড়কে বিলীন , বাড়িতে শোকের মাতম
ফাতেহার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন সড়কে বিলীন , বাড়িতে শোকের মাতম

বিশেষ প্রতিবেদক, পোস্টকার্ড ।।

সড়ক দুর্ঘটনায় মেয়েকে হারানো সীতাকুণ্ডের সলিমপুর ইউনিয়নের কালুশাহ নগরের বাসিন্দা মো. ফারুকের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। মেয়েকে হারিয়ে পাগলপ্রায় মা আয়েশা। কান্না করতে করতে মো. ফারুক বলেন, মেয়েটা আমার মোটরসাইকেল থেকে পড়ে গেল। আমি ভাবতেই পারিনি যে সে মারা গেছে। কাছে গিয়ে বলেছি, ওঠ মা। কিন্তু কোনো কথা নেই। ধীরে ধীরে বুঝতে পারলাম, সব শেষ। মেয়ে আমার আর নেই। তখন আর বাঁচতে ইচ্ছে হয়নি। রাস্তায় শুয়ে ভেবেছিলাম, আমাকেও গাড়ি পিষে দিক। চোখের সামনে মেয়ের এমন মৃত্যু আমি সইব কেমন করে!’

রবিবার সকালে সীতাকুণ্ডের সলিমপুরে মো. ফারুকের বাড়িতে গিয়ে এমন শোকাবহ পরিবেশ দেখা গেছে। আগের দিন শনিবার দুপুরে নিজের মোটরসাইকেলের পেছনে বসিয়ে একমাত্র মেয়ে ফাতেহা জাহান জেবাকে (১৯) চট্টগ্রাম নগরের এনায়েত বাজার মহিলা কলেজে নিয়ে যাচ্ছিলেন ফারুক। পথে ফৌজদারহাট বায়েজিদ সংযোগ সড়কের ৩ নম্বর সেতু এলাকায় ব্রেক কষলে বাইক থেকে পড়ে যান ফাতেহা। মুহূর্তেই পেছন থেকে আসা কাভার্ড ভ্যানের চাপায় মৃত্যু হয় তার।

নিহত ফাতেহা এনায়েত বাজার মহিলা কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী ছিলেন। শনিবার বেলা দুইটায় তার ব্যবহারিক পরীক্ষা ছিল।

মো. ফারুকের তিন ছেলে-মেয়ের মধ্যে ফাতেহা সবার বড়। একমাত্র মেয়ে হলেও বাবা-মায়ের কাছে খুব বেশি চাহিদার কথা বলতেন না তিনি। লেখাপড়া নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন। অনেকটা নিভৃতচারী ছিলেন তিনি। মেয়েকে নিয়ে ফারুকের অনেক স্বপ্ন ছিল।

তিনি বলেন, ‘মেয়ের ইচ্ছা ছিল সে চিকিৎসক হবে। এসএসসিতে জিপিএ–৫ পেয়েছিল। এইচএসসির প্রস্তুতিও বেশ ভালো ছিল। কিন্তু এখন সব শেষ।’

বাড়ির সামনের একচিলতে জায়গায় স্বজন আর প্রতিবেশীদের ভিড়। সেখানে চেয়ারে বসে ফাতেহার কথা বলতে বলতে ক্ষণে ক্ষণে ডুকরে কেঁদে উঠছিলেন ফারুক। তিনি বলেন, ‘১৮ বছর ধরে মেয়েকে তিল তিল করে বড় করেছি। কখনো কাছ ছাড়া করিনি। খুব শখ ছিল মেয়েকে সাজিয়ে-গুজিয়ে শ্বশুরবাড়ি পাঠাব। এভাবে তাকে বিদায় দিতে হবে কখনো কল্পনাও করিনি। আমার বুকটা ভেঙে যাচ্ছে।’

নিহত ফাতেহার বাবা ফারুক আর মা আয়েশার দিনরাত কাটছে একরকম । সকাল থেকে ফারুক তার ঘরের সামনে লাগোয়া দোকানের চেয়ারে বসে কাঁদছিল। তার স্ত্রী আয়েশা ঘরে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন আর চিৎকার করে করে মেয়ের নাম ধরে ডেকে যাচ্ছেন ।  

খালেদ / পোস্টকার্ড;