চট্টগ্রাম রেফারি সমিতি জুয়ার আসর থেকে টাকাসহ আটক ঘটনায় মিরনকে স্থায়ীভাবে অবাঞ্চিতের সুপারিশ

চট্টগ্রাম রেফারী এসোসিয়েশনে জুয়া কাণ্ডে গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্ট প্রকাশ

চট্টগ্রাম রেফারি সমিতি  জুয়ার আসর থেকে টাকাসহ আটক ঘটনায় মিরনকে স্থায়ীভাবে অবাঞ্চিতের সুপারিশ

ক্রীড়া প্রতিবেদক।।  

সাধারন সম্পাদক আবদুল হান্নান মিরনকে স্থায়ীভাবে অবাঞ্চিত ঘোষণার সুপারিশ করে রেফারী এসোসিয়েশনে জুয়া কাণ্ডে গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্ট জমা দিয়েছে ।

চট্টগ্রাম জেলা রেফারী এসোসিয়েশনের কার্যালয়ে জুয়া কান্ডের পর গঠিত তদন্ত কমিটি বুধবার তাদের রিপোর্ট জমা দিয়েছে রেফারী এসোসিয়েশনের সভাপতি এবং চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারন সম্পাদক আ.জ.ম. নাছির উদ্দীনের কাছে।

তদন্ত কমিটির প্রধান সিজেকেএস সহ সভাপতি মো. হাফিজুর রহমান তার অপর ৮ সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে এই রিপোর্ট হস্তান্তর করেন।

সাত পৃষ্ঠার এই রিপোর্টে রেফারী সমিতিতে জুয়া কান্ডের জন্য সমিতির সাধারন সম্পাদক আবদুল হান্নান মিরনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। আর তাকে চট্টগ্রাম স্টেডিয়ামের যেকোন খেলাধুলা এবং সামাজিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ এবং স্টেডিয়াম এলাকায় প্রবেশাধিকারের ক্ষেত্রে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার এবং নিষিদ্ধ করাসহ অবাঞ্চিত ঘোষণা করার সুপারিশ করা হয়। পাশাপাশি রেফারী এসোসিয়েশনের সাধারন সদস্য পদ সহ সকল সদস্য পদ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার এবং নিষিদ্ধ করা সহ অবাঞ্চিত ঘোষনা করার সুপারিশ করা হয়। পাশাপাশি রেফারী এসোসিয়েশন থেকে প্রাপ্য বিদ্যুৎ বিল আনুমানিক দশ লক্ষ টাকা আদায়ের জন্য সিজেকেএস সাধারন সম্পাদকের প্রতি সুপারিশ করা হয়। এছাড়াও যে চুক্তি মোতাবেক রেফারী এসোসিয়েশনের কার্যালয়ে জুয়ার বোর্ড পরিচালিত হতো সে হিসেবে আনুমানিক ৩২,৭০,০০০(বত্রিশ লক্ষ সত্তর হাজার টাকা) আবদুল হান্নান মিরনের কাছ থেকে আদায় করে তা রেফারী এসোসিয়েশনের কোষাগারে জমা দেওয়ারও সুপারিশ করা হয়। তদন্ত কমিটি নানা জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করে এই জুয়া কান্ডের সাথে এসোসিয়েশনের সাধারন সম্পাদক আবদুল হান্নান মিরনের সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছে। আর তারই আলোকে এই শাস্তির সুপারিশ করে তদন্ত কমিটি।

রিপোর্টে আবদুল হান্নান মিরন ছাড়াও আরো কয়েকজনের বিরুদ্ধে নানা মেয়াদে শাস্তি প্রদানের সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। এর মধ্যে রয়েছে রেফারী এসোসিয়েশনের কোষাধ্যক্ষ ফরহাদ হোসেন চৌধুরী। জুয়া কান্ডে তার সম্পৃক্ত থাকার প্রমান পাওয়ায় তাকে চট্টগ্রাম স্টেডিয়ামের যে কোন খেলাধুলা এবং সামাজিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ এবং স্টেডিয়াম এলাকায় প্রবেশাধিকারের ক্ষেত্রে তিন বছরের জন্য বহিষ্কার এবং নিষিদ্ধ করা সহ অবাঞ্চিত ঘোষনা করার সুপারিশ করা হয়। পাশাপাশি রেফারী এসোসিয়েশনের সাধারন সদস্য পদ সহ সকল সদস্য পদ থেকে তিন বছরের জন্য বহিষ্কার এবং নিষিদ্ধ করা সহ অবাঞ্চিত ঘোষনা করার সুপারিশ করা হয়।

এসোসিয়েশনের নির্বাহী সদস্য বিশ্বজিত সাহাকে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার আওতাধীন এম.এ আজিজ স্টেডিয়ামসহ সকল স্থাপনায় প্রবেশাধিকার, সকল প্রকার ক্রীড়া ও সামাজিক অনুষ্ঠানের সকল কর্মকান্ড হতে দুই বছর বহিস্কার এবং নিষিদ্ধ করাসহ অবাঞ্চিত ঘোষণা করার জন্য সুপারিশ করা হয়। জুয়া পরিচালনার চুক্তিনামায় ১নং সাক্ষী হিসেবে তার নাম পাওয়া যায় এবং জুয়া পরিচালনাকারী বিপুল কান্তি বৈদ্যের বক্তব্যে তার সম্পৃক্ততা পাওয়ায় তাকে এসোসিয়েশনের সাধারণ সদস্য পদসহ সকল পদ থেকে দুই বছর বহিস্কার এবং নিষিদ্ধ করাসহ অবাঞ্চিত ঘোষণা করার জন্য সুপারিশ করা হয়।

চট্টগ্রাম জেলা ফুটবল রেফারীজ এসোসিয়েশনের কার্যালয়ে চুক্তির মাধ্যমে পরিচালিত জুয়া খেলার বিষয়ে এসোসিয়েশনের নির্বাহী কমিটির অন্যান্য কর্মকর্তাগণ দায় এড়াতে পারেন না। এ বিষয়ে তাদের ভূমিকা রহস্যজনক এবং দায়িত্বহীনতার সামিল। দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম জেলা ফুটবল রেফারীজ এসোসিয়েশনে অনৈতিক কাজ চুক্তির মাধ্যমে চলে আসার বিষয়টি সম্পর্কে তারা নিষ্ক্রীয় ছিলেন। এর প্রেক্ষিতে আগামীতে এ বিষয়ে অধিকতর সতর্ক থাকার জন্য তাদেরকে তিরস্কার করা হয়। একই সঙ্গে বিদ্যমান কমিটি বিলুপ্ত করে অন্তর্বর্তীকালীন কমিটি গঠন এবং গঠনতন্ত্র মোতাবেক নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের জন্য সুপারিশ করা হয়।

রেফারী এসোসিয়েশনের কর্মকর্তা ছাড়াও জুয়া পরিচালনার জন্য চুক্তিপত্রে ২য় পক্ষ হিসেবে চুক্তি স্বাক্ষরকারী সীমান্ত সেন, তার বড় ভাই কৃষ্ণ কমল সেন ও সীমান্ত সেনের পক্ষে জুয়া খেলা পরিচালনাকারী বিপুল কান্তি বৈদ্যকে জুয়া খেলার প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ততা থাকায় তাদেরকে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার আওতাধীন এম.এ আজিজ স্টেডিয়ামসহ সকল স্থাপনায় দশ বছরের জন্য প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করাসহ অবাঞ্চিত ঘোষণার জন্য সুপারিশ করা হয়। একই সাথে রেফারী এসোসিয়েশনের কার্যালয়ের তালা খুলে দেওয়ারও সুপারিশ করা হয়।

রিপোর্টে বলা হয়েছে চট্টগ্রাম জেলা ফুটবল রেফারীজ এসোসিয়েশনের অফিস হিসেবে বর্তমানে যে স্থাপনা ব্যবহার করছে তার আয়তন এবং ব্যবহারবিধি সম্পর্কে কোন সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। একই সাথে অবকাঠামো পরিবর্তন করে আরেকটি ফ্লোর সৃজন এবং গ্যালারী কেটে গোপন প্রবেশপথ তৈরির বিষয়েও সিজেকেএস এর অনুমতি আছে কিনা, তা স্পষ্টভাবে জানাতে পারেনি। এছাড়াও চট্টগ্রাম জেলা ফুটবল রেফারীজ এসোসিয়েশনের কার্যালয়ে উঠার সিড়ির ডান পাশে একটি কক্ষও দখলে রেখেছে। উক্ত কক্ষ দখল ও ব্যবহারের বিষয়ে সিজেকেএস এর অনুমতি রয়েছে কিনা সে বিষয়েও কোন স্পষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। তাছাড়া চট্টগ্রাম ফুটবল রেফারীজ এসোসিয়েশন কার্যালয়ে ব্যবহৃত বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস এর যথাযথ বিল পরিশোধের কোন সুস্পষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানানো হয়।

পাশাপাশি রিপোর্টে বেশ কিছু সুপারিশ করা হয় যা জেলা ক্রীড়া সংস্থার নিরাপত্তা সহ নানা স্থাপনার সুরক্ষার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। রেফারী এসোসিয়েশনসহ এম.এ আজিজ স্টেডিয়ামস্থ অন্যান্য অফিস ব্যবহারের দৈনন্দিন সময়সীমা নির্ধারনের পাশাপাশি স্টেডিয়ামের মূল গেইটসহ অন্যান্য গেইট নিয়ন্ত্রনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার সুপারিশ করা হয়। এম.এ আজিজ স্টেডিয়ামে অবস্থিত অন্যান্য কার্যালয়ের বিষয়েও সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করে তদারকির আওতায় আনার সুপারিশ করা হয় যাতে ভবিষ্যতে এ ধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে। যে প্রতিষ্ঠানকে যে কাজের জন্য অবকাঠামো বরাদ্দ দেয়া হয়েছে সে প্রতিষ্ঠান যেন বরাদ্দপ্রাপ্ত অবকাঠামো অন্য কোন কাজে ব্যবহার ও অবকাঠামো পরিবর্তন/পরিবর্ধন করতে না পারে সে বিষয়ে আরও অধিকতর সতর্কমূলক দৃষ্টি রাখার সুপারিশ করা হয়। পাশাপাশি রেফারী এসোসিয়েশনের কর্মকর্তা, সাধারন সদস্য কিংবা আজীবন সদস্য হিসেবে যারা আছেন তাদেরকে জেলা ক্রীড়া সংস্থা বা জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের দায়িত্বে না রাখারও অনুরোধ করা হয়। পাশাপাশি যারা জেলা ক্রীড়া সংস্থা বা ফুটবল এসোসিয়েশনে দায়িত্ব পালন করবেন তাদেরকে রেফারী এসোসিয়েশনের যাবতীয় পদ পদবী থেকে পদত্যাগ করারও আহবান জানানো হয়। তদন্ত কমিটির প্রধান বলেন আমরা আমাদের রিপোর্ট জমা দিয়েছি। এখন এখানে দুটি পক্ষ রয়েছে। একটি পক্ষ রেফারী এসোসিয়েশন আর অন্যটি হচ্ছে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা। এখন রিপোর্টের আলোকে তারা কি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে সেটা তাদের ব্যাপার। তবে সবাই আশা করছে তদন্ত কমিটির রিপোর্ট যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হবে। যাতে করে ক্রীড়াঙ্গনে এমন ঘৃন্য কান্ড কেউ ঘটাতে না পারে। - আজাদী