পুলিশ বাহিনীর নবীন কর্মকর্তাদের সততা, নিষ্ঠা ও একাগ্রতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের আহবান জানালেন প্রধানমন্ত্রী

শ ম সাজু রাজশাহী ।।

পুলিশ বাহিনীর নবীন কর্মকর্তাদের সততা, নিষ্ঠা ও একাগ্রতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের আহবান জানালেন প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুলিশ বাহিনীর নবীন কর্মকর্তাদের সততা, নিষ্ঠা ও একাগ্রতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের আহবান জানিয়েছেন।

রোববার সকালে রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে ৩৬তম বিসিএসের সহকারী পুলিশ সুপারদের (এএসপি) শিক্ষা সমপানী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এই আহবান জানান।

তিনি বলেন, আপনারা জনগণের পুলিশ। জনগণের মাঝেই আপনার মা-বাবা, ভাই-বোন, আত্মীয়, পরিবার-পরিজন। কাজেই তাদের কল্যাণ, তাদের জীবনের সার্বিক নিরাপত্তা দেওয়া আপনাদের দায়িত্ব। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা নবীন পুলিশ কর্মকর্তা আজকে কুচকাওয়াজে অংশ নিয়ে আপনাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে যাচ্ছেন, আমি এটাই বলব বিপদে জনগণের বন্ধু, এই মানসিকতা নিয়ে নিজেকে গড়ে তুলবেন এবং সেভাবে আপনারা দায়িত্ব পালন করবেন। যেন সমাজ থেকে কালো বিষয়গুলো, যা আমাদের দেশের সমাজকে ধ্বংস করে দিয়ে যাচ্ছে, যুবসমাজকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছে, সেসবের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে। আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব। আজকে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে, আমাদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে, জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত এবং উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ ইনশা আল্লাহ আমরা গড়ে তুলব। তার জন্য দেশের শান্তি, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা একান্তভাবে অপরিহার্য। পুলিশ বাহিনীর নবীন কর্মকর্তারা দেশের জন্য কাজ করে যাবেন। দেশকে গড়ে তুলবেন জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ হিসেবে।

১৯৭২ সালে বাংলাদেশ পুলিশের প্রথম সমাপনী কুচকাওয়াজে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অংশগ্রহণ এবং পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণ স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭২ সালের ৯ মে বাংলাদেশ পুলিশের প্রথম প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ এই সারদায় অনুষ্ঠিত হয়। সেই কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি পুলিশ বাহিনীকে উদ্দেশ করে বলেছিলেন, ‘আপনারা স্বাধীন দেশের পুলিশ। আপনারা বিদেশি শোষকদের পুলিশ নন। আপনারা জনগণের পুলিশ। আপনাদের কর্তব্য জনগণের সেবা করা। জনগণকে ভালোবাসা, দুর্দিনে জনগণকে সাহায্য করা।’ এটি জাতির পিতার নির্দেশ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে পুলিশ বাহিনীকে গড়ে তুলে এই কুচকাওয়াজে এসে জাতির পিতা এই ভাষণ দিয়েছিলেন। আমি মনে করি, পুলিশ বাহিনীর সব সদস্য এ কথাগুলো মনে রাখবেন।
স্বাধীনতা সংগ্রামে পুলিশের গৌরবোজ্জ্বল ভ‚মিকার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ২০১১ সালে পুলিশ বাহিনীকে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করেছি। যেন এই পুলিশ বাহিনীর প্রতিটি সদস্য গর্ব অনুভব করতে পারেন যে, তাদের বিশেষ অবদান ছিল আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে।

চলতি বছর পুলিশ বাহিনীতে নিয়োগ প্রক্রিয়ার প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুলিশ বাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, পুলিশ বাহিনীতে যে নতুন রিক্রুট হয়েছে, সেখানে একটি লোকও কোনো ধরনের দুর্নীতির কথা বা ঘুষ দেওয়ার কথা বলতে পারেনি। স্বচ্ছতার সঙ্গে এবার যে পুলিশ বাহিনীতে নিয়োগ হয়েছে, সেজন্য আমি পুলিশ বাহিনীকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। জনগণের আস্থা, বিশ^াস অর্জন করার জন্য এ পদক্ষেপ আমি মনে করি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আগামীতেও সেভাবে আপনারা এগিয়ে যাবেন।

সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাদকের বিরুদ্ধে চলমান অভিযানের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, পুলিশ বাহিনী অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করছে বলেই আজ আমরা জঙ্গিবাদ দমন করতে পেরেছি, সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। মাদকের বিরুদ্ধেও অভিযান চলছে। এই অভিযান চলবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। সে সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষ যাতে সেবা পায়, সেজন্য প্রয়োজনীয়সংখ্যক পুলিশ আমরা নিয়োগ দিয়ে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে আমরা ৪৯ হাজার ২০০ পদও সৃষ্টি করেছি। পুলিশের ট্রেনিংয়ের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। সঙ্গে সঙ্গে আমরা বিশেষায়িত পুলিশও তৈরি করছি। বিভিন্ন অঞ্চলভিত্তিক যেমন শিল্পায়নের জন্য শিল্প পুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশ, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন, নৌপুলিশ, দুটি স্পেশাল সিকিউরিটি অ্যান্ড প্রটেকশন ব্যাটালিয়ন আমরা গঠন করেছি। তাছাড়া পুলিশের পদায়নের ক্ষেত্রে আমরা মান উচ্চ করেছি। বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করেছি, রেশন দিয়েছি, আবাসনের ব্যবস্থারও সমাধান করেছি, ঝুঁকিভাতা আমরা প্রবর্তন করেছি। মানুষ যাতে সেবা পায় এজন্য ৯৯৯ নম্বরে ফোন করার সঙ্গে সঙ্গে অত্যন্ত দ্রুত গতিতে পুলিশ সেখানে পৌঁছে যাচ্ছে এবং মানুষকে সাহায্য করছে। আমি আশা করি এ ধরনের কাজ আরও অব্যাহত থাকবে।

এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় একটি হেলিকপ্টারে চড়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে পৌঁছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী প্যারেড মাঠে তাকে স্বাগত জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি সুসজ্জিত খোলা জিপে চড়ে বর্ণাঢ্য প্যারেড পরিদর্শন এবং অভিবাদন গ্রহণ করেন।

প্যারেড কমান্ডার শিক্ষানবিস সহকারী পুলিশ সুপার শাহিন আক্তার ও সহকারী প্যারেড কমান্ডার রবিউল ইসলাম খানের নেতৃত্বে এক এক করে মোট আটটি কন্টিনজেন্ট প্যারেডে অংশগ্রহণ করে। আটটি কন্টিনজেন্ট থাকা ১৭ জন নারীসহ ১১৭ জন শিক্ষানবিস সহকারী পুলিশ সুপার মার্চপাস্ট করে প্রধানমন্ত্রীকে সালাম জানান। এরপর পতাকাবাহী দল, পুলিশ একাডেমির বিশেষ অশ্বারোহী দল ও সর্বশেষ বাদক দল একে একে মার্চপাস্ট করে প্রধানমন্ত্রীকে সালাম ও অভিবাদন জানান। পরে একাডেমির প্যারেড গ্রাউন্ডে ৩৬তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের শিক্ষানবিস সহকারী পুলিশ সুপারদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুলিশ একাডেমিতে প্রশিক্ষণের সময় বিভিন্ন বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারী সহকারী পুলিশ সুপারদের মধ্যে ট্রফি বিতরণ করেন।

বিভিন্ন ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারী শিক্ষানবিস সহকারী পুলিশ সুপাররা হলেনÑ ‘বেস্ট শুটার’ খায়রুল কবির, ‘বেস্ট ফিল্ড পারফরমার’ আব্দুল্লাহ-আল-মামুন, ‘বেস্ট হর্সম্যানশিপ’ সালাহউদ্দিন, ‘বেস্ট একাডেমিক’ সাইফুল ইসলাম খান এবং ‘বেস্ট প্রবেশনার’ সালাহ্উদ্দিন।

প্রধানমন্ত্রী একাডেমি চত্বরে একটি আমগাছের চারা রোপণ করেন। তিনি শিক্ষানবিস সহকারী পুলিশ সুপারদের সঙ্গে ফটোসেশনে অংশ নেন।

সহকারী পুলিশ সুপারদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমসহ মন্ত্রিপরিষদের একাধিক সদস্য, রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী এমপিসহ রাজশাহী ও আশপাশের জেলার সংসদ সদস্য, পুলিশের মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির প্রিন্সিপ্যাল মো. নজিবুর রহমান, সরকারের সচিব, বিদেশি কূটনীতিক, ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা, পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা ও মুক্তিযোদ্ধাসহ আমন্ত্রিত গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।