নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে ততই বাড়ছে নির্বাচনী সহিংসতা, ১৪টি ওয়ার্ড ঝুঁকিপূর্ণ

নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে ততই বাড়ছে নির্বাচনী সহিংসতা, ১৪টি ওয়ার্ড ঝুঁকিপূর্ণ
নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে ততই বাড়ছে নির্বাচনী সহিংসতা, ১৪টি ওয়ার্ড ঝুঁকিপূর্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক ।।

নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, ততই বাড়ছে নির্বাচনী উত্তাপ। উৎসবমুখর নির্বাচন হয়ে উঠছে সংঘাতময়। প্রার্থীদের মধ্যে চলছে অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ। অস্ত্রের ব্যবহারও দেখা গেছে। সহিংসতায় স্থানীয়রা অংশ নিচ্ছে, বহিরাগতদেরও দেখা গেছে। ধরপাকড় চলছে, তেমনি চলছে পরস্পরবিরোধী মামলাও। গাড়িবহরে হামলা, পোস্টার ছেঁড়া, প্রচারণায় ব্যবহৃত মাইক ভাঙচুর তো রয়েছেই।

স্থানীয় জনগণ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, নগরীর ১৪টি ওয়ার্ড সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে আলোচিত হচ্ছে। এগুলো হলো ১ নম্বর পাহাড়তলী, ২ নম্বর জালালাবাদ, ৪ নম্বর চান্দগাঁও, ৯ নম্বর পাহাড়তলী, ১০ নম্বর কাট্টলী, ১২ নম্বর সরাইপাড়া, ১৪ নম্বর লালখান বাজার, ২৩ নম্বর পাঠানটুলি, ২৭ নম্বর উত্তর হালিশহর, ২৮ নম্বর মোগলটুলি, ৩০ নম্বর পূর্ব মাদারবাড়ি, ৩১ নম্বর আলকরণ, ৩৩ নম্বর ফিরিঙ্গিবাজার এবং ৩৪ নম্বর পাথরঘাটা ওয়ার্ড। নির্বাচনে এসব ওয়ার্ডে সহিংসতা বাড়তে পারে। তাই এলাকার সাধারণ মানুষ শঙ্কিত। এ অবস্থায় সাধারণ ভোটাররা বুঝতে পারছেন না তারা ভোট দিতে যাবেন কিনা। গেলেও পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবেন কিনা। তবে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার সালেহ্‌ মোহাম্মদ তানভীর বলেছেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন। এটা অবশ্যই বড় চ্যালেঞ্জের। তবে নির্বাচন নিয়ে আমাদের কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে। আমরা অবশ্যই পেশাদারত্বের সাথে কাজ করব।

তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতা সৃষ্টিকারী কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না, হোক সে বহিরাগত কিংবা স্থানীয়। ১২ জানুয়ারি পাঠানটুলিতে আওয়ামী লীগের দলীয় ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটি ঘটনা ঘটেছে, আমরা কঠোর পদক্ষেপ নিতে বিন্দুমাত্র সময় নিইনি। কাজের মাধ্যমে আমরা আমাদের শক্ত অবস্থান প্রমাণ করব।

তিনি আরো বলেন, যেসব এলাকায় সংঘর্ষের আশঙ্কা আছে, সেসব এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। টহল টিম কাজ করছে। নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চলছে।

ইতোমধ্যে নির্বাচনী সহিংসতায় প্রাণ গেছে ৩ জনের। আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। করোনার কারণে চসিক নির্বাচন স্থগিত হওয়ার আগে গত বছরের ১৮ মার্চ রাতে সরাইপাড়া লোহারপুল এলাকায় ১১ নম্বর দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মোরশেদ আকতার চৌধুরীর নির্বাচনী কার্যালয়ে খুন হন আনোয়ার জাহের তানভীর (৪৫) নামে একজন। ১২ জানুয়ারি পাঠানটুলিতে প্রতিপক্ষের গুলিতে মারা যান প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাহাদুরের সমর্থক আজগর আলী বাবুল। ৮ জানুয়ারি দেওয়ানবাজার এলাকায় ছুরিকাঘাত করা হয় রোহিত নামে এক ছাত্রলীগকর্মীকে। ১৫ জানুয়ারি তিনি মারা যান। গত শনিবার লালখান বাজারে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে ১১ জন আহত হয়। বাকলিয়ার বাস্তুহারা ও চান্দগাঁও থানার বারইপাড়া এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণায় হামলা-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

এদিকে, রবিবার চকবাজার রাহাত্তারপুল এলাকায় বিএনপির মেয়র প্রার্থী শাহাদাত হোসেনের গণসংযোগে নগর ছাত্রদলের দুই গ্রুপে হাতাহাতি হয়েছে। এতে নগর ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাইফুল আলম ও সদস্য সচিব শরীফুল ইসলাম তুহিন হেনস্থার শিকার হন।

নির্বাচনী লড়াইয়ে বেশ ক’জন অভিযুক্তের পাশাপাশি তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী প্রার্থী হওয়ায় এ শঙ্কা আরও বাড়ছে। মূলত কাউন্সিলর পদ নিয়ে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে বিভক্ত আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের শক্তি প্রদর্শনের মহড়া দলটির নেতাকর্মীদের উদ্বিগ্ন করছে। সমপ্রতি পুলিশের অভ্যন্তরীণ একটি প্রতিবেদনেও ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে কোন্দল এবং দল সমর্থিত ও বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীদের মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে সংঘাতের আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে। সবকিছু ভোটারদের মনে দুশ্চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে।

সিএমপি কমিশনার বলেন, আমরা নগরীতে পুলিশি কর্মকাণ্ডের ব্যাপ্তি বাড়িয়েছি। পুলিশি টহল, চেকপোস্ট বাড়িয়েছি। যেসব কর্মকাণ্ড নির্বাচনকে সহিংস করতে পারে, সেগুলো প্রতিরোধ করার জন্য আগাম পদক্ষেপ নিয়েছি। যারা ঘোষিত অপরাধী ও বিভিন্ন মামলার পরোয়ানাভুক্ত আসামি, তাদের নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। অতীতের সংঘাতের বিষয়গুলো বিবেচনা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।

বহিরাগতদের এনে নগরীতে সহিংসতা ঘটানোর চেষ্টা সম্পর্কে তিনি বলেন, একটি এলাকায় বিশেষ জেলার বাসিন্দাদের আধিক্য থাকতে পারে, এটা এক বিষয়। আবার বহিরাগত অস্ত্রধারীরা এসে নির্বাচনের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বানচালের চেষ্টা করতে পারে, এটা আরেক বিষয়। কারা আসতে পারে কিংবা কোন জেলা থেকে আসতে পারে সেটা খোঁজখবর নিচ্ছি। প্রবেশমুখে চেকপোস্ট বসিয়েছি। আবাসিক হোটেলগুলোতে স্পেশাল ড্রাইভও দিচ্ছি। সাময়িকভাবে দুষ্কর্ম করার জন্য কেউ এসে কোথাও আশ্রয় নিয়েছে কিনা সেটা নিয়মিত খোঁজখবর নিচ্ছি। অপরাধ করার উদ্দেশ্য নিয়ে বহিরাগত কেউ এসে চট্টগ্রামে অবস্থান করলে আমরা কঠোরভাবে প্রতিরোধ করব। শহরে চেকপোস্ট তিন গুণ বাড়িয়ে দিয়েছি। ব্লক রেইড করা হচ্ছে। আমরা কাউকে ছাড় দেব না। আমরা কিন্তু নির্বাচনী প্রচারণায় কাউকে নিরুৎসাহিত করছি না। এটা একেবারে উন্মুক্ত আছে।

নির্বাচনে বৈধ-অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার রোধ প্রসঙ্গে সিএমপি কমিশনার বলেন, ২ হাজার ৪৭৭টি বৈধ অস্ত্রের পরিসংখ্যান আমাদের আছে। নির্বাচন কমিশন এ ব্যাপারে নির্দেশনা দেবে, কবে তারা অস্ত্রগুলো জমা নেবেন। আমরা কোনো পর্যায়ে অস্ত্রের ব্যবহার আশা করছি না। আমাদের চেষ্টা থাকবে, অস্ত্রের ব্যবহারের মাধ্যমে যেন কোনো ধরনের সংঘাত ছড়িয়ে না পড়ে।

ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রের ব্যাপারে তিনি বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়টি নির্ভর করে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের ওপর। একটি ঘটনার কারণে সাধারণ একটি ভোটকেন্দ্রও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যেতে পারে। ঝুঁকিপূর্ণের তালিকা যত শেষের দিকে নির্ধারণ করতে পারব, তত আমাদের পরিকল্পনা নিখুঁত হবে।

তিনি জানান, নির্বাচনে সিএমপি থেকে ৯ হাজার পুলিশ মোতায়েন রাখার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছে। সাধারণত নির্বাচন কমিশন থেকে একটি নির্বাচনী দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকে। পুরো বিষয়টি জানতে পারলে পুলিশের সংখ্যাটা আরও নির্দিষ্ট করে জানা যাবে। তবে ওয়ার্ডভিত্তিক ও থানাভিত্তিক ফোর্স থাকবে। পাশাপাশি রিজার্ভ ফোর্স রাখা হবে। ডিবি, কাউন্টার টেরোরিজম ও সোয়াত টিমও টহলে থাকবে। আজাদী