ধান সংকটে চালকল বন্ধ , সীতাকুণ্ডের ওজন স্কেলকে দায়ী করেছেন মিল মালিকরা !

ধান সংকটে চালকল বন্ধ , সীতাকুণ্ডের ওজন স্কেলকে দায়ী করেছেন মিল মালিকরা !

হুমায়ুন মাসুদ ।।

অসীম কুমার সাহা দীর্ঘদিন চট্টগ্রাম নগরের চাক্তাই এলাকায় চালকল পরিচালনা করেছেন । নিজের কলের ধান ভেঙে সারা দেশে চাল সরবরাহ করতেন এই চালকল মালিক। এক যুগের বেশি সময় ধরে চালিয়ে যাওয়া এই ব্যবসায় শেষ পর্যন্ত তিনি টিকে থাকতে পারেননি। ধান সংকটের কারণে তিন বছর আগে নিজের মালিকানাধীন চালকল বন্ধ করে দেন।

অসীম কুমার সাহা বলেন, প্রথম দিকে এত বেশি ধান আসত যে, তখন অনেক পার্টিকে অপেক্ষায় রাখতে হতো। কিন্তু শেষদিকে ধান সংকটের কারণে অবস্থা এমন হয়েছে যে, মাসে ১৫-২০ দিন মিল বন্ধ রাখতে হতো। যে কারণে লোকসানের মুখোমুখি হতাম। এ কারণে তিন বছর আগে মিল বন্ধ করে দিয়েছি।

অসীম কুমার সাহার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানটির নাম খাজা অটো রাইস মিল। চাক্তাই এলাকার ওই মিলটি বন্ধ হওয়ার পর সেখানে এখন ডালের আড়ত করা হয়েছে। একই অবস্থা খান অটো রাইস মিলের। ধান সংকটে এ মিলটিও কয়েক বছর আগে বন্ধ হয়ে যায়।

গত ২০ বছরে চট্টগ্রামের চাক্তাই এলাকার শতাধিক রাইস মিল বন্ধ হয়ে গেছে। রাইস মিল মালিকেরা জানিয়েছেন, উত্তরবঙ্গের দিকে (যেখানে ধানের চাষ হয়) প্রচুর পরিমাণ রাইস মিল গড়ে উঠেছে।

যে কারণে এখন ওই সব এলাকার পার্টিরা চট্টগ্রামে ধান নিয়ে আসেন না। ধান সংকটের কারণেই মূলত এসব রাইস মিলগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এর পেছনে তাঁরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ডে ওজন স্কেল বসানোকেও দায়ী করেছেন। ওজন স্কেলের কারণে ট্রাকগুলো ১৩ টনের বেশি মালামাল পরিবহন করতে পারে না।

যে কারণে মালামাল পরিবহনে অন্যান্য জেলার তুলনায় চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের বাড়তি খরচ পড়ে।

চট্টগ্রাম রাইস মিল মালিক সমিতি সূত্রে জানা যায়, নগরের পাশাপাশি চট্টগ্রামের ১৪টি উপজেলায় ১২০টির মতো রাইস মিল আছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম নগরে আছে ২৫টির মতো। এর মধ্যে ১৮টি রাইস মিল নগরের চাক্তাই এলাকায়। অথচ ২০০০ সালের আগে শুধু চাক্তাই এলাকায় ১৫০টির মতো রাইস মিল ছিল বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম রাইস মিল মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি শান্ত দাশ গুপ্ত।

চট্টগ্রাম রাইস মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রফিক উল্লাহ বলেন, ধান কম আসার পেছনে পরিবহন খরচ একটা বড় বাধা। দেশের অন্যান্য জেলায় একটি ট্রাকে ১৮ থেকে ২০ টন ধান পরিবহন করে। কিন্তু চট্টগ্রামে আমরা সেটি করতে পারি না। সীতাকুণ্ডে স্থাপিত ওজন স্কেলের কারণে একটি ট্রাকে সর্বোচ্চ ১৩ টন ধান পরিবহন করতে হয়। ওজন স্কেল না থাকলে ২০ টন ধান পরিবহনে খরচ হতো ২৫-২৬ হাজার টাকা। অথচ এখন একই টাকা দিয়ে আমাদের পরিবহন করতে হচ্ছে মাত্র ১৩ টন। ১৩ টন চালের পেছনে আমাদের পরিবহন খরচ হয় ৫২ হাজার টাকা। যা অনেক বেশি। চট্টগ্রামের মিলগুলোতে ধান না আসার পেছনে এটাও একটা কারণ। -আজকের পত্রিকা

খালেদ / পোস্টকার্ড ;