দেশে ইসি নিবন্ধিত ৪০টির মধ্যে ৩৪ দলই ভোটের মাঠে নেই

দেশে ইসি নিবন্ধিত ৪০টির মধ্যে ৩৪ দলই ভোটের মাঠে নেই
দেশে ইসি নিবন্ধিত ৪০টির মধ্যে ৩৪ দলই ভোটের মাঠে নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক ।। 

নির্বাচনী মাঠে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি এই দুই রাজনৈতিক দলের আধিপত্য থাকে। ভোটার ও প্রার্থীরাও এ দুই রাজনৈতিক দলের প্রতি আস্থাশীল। যে কারণে দেশের বেশিরভাগ নির্বাচনে জয়-পরাজয়ে এ দুই দলের সমর্থনকেই ফ্যাক্টর হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু প্রতি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ মুষ্টিমেয় কয়েকটি দল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করলেও নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত অধিকাংশ রাজনৈতিক দল নির্বাচন থেকে বিরত থাকে।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও ইসি নিবন্ধিত ৪০টির মধ্যে মাত্র ছয়টি রাজনৈতিক দল প্রতিদ্বন্ধিতায় আছে। বাকি ৩৪টি রাজনৈতিক দল নির্বাচনী মাঠে নেই বলে জানা গেছে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সভাপতি ও ইস্ট ডেল্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর মু. সিকান্দর খান বলেন, ‘অনেকেই অভিলাষ থেকে দল গঠন করেন। আবার কেউ কেউ আছেন মনোনয়ন ভাগিয়ে নিতে একটি দল করেন। যে কারণে যেসব দল মানুষ চিনে না, তাদের নির্বাচন করাটাও উচিত নয়। কিছুটা মানুষের মধ্যে আস্থা আছে, পরিচিতিও আছে এমন দলগুলো নির্বাচনে যেতে পারতো। প্রায় দলতো আবার জোটভুক্ত। জোটের ব্যক্তিকে প্রাধান্য দিতে গিয়েও হয়তো কিছু দল নির্বাচন করেনি। আবার নিবন্ধিত সব দল নির্বাচনে অংশ নিলে হাস্যকরও হতো।’

জানা যায়, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, ন্যাশনাল পিপলস্ পার্টি (এনপিপি) মনোনীত প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

এ দলগুলো ছাড়া বাকি ৩৪টি দল নির্বাচনী মাঠে নেই। এগুলো হলো- লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি, জাতীয় পার্টি-জেপি, বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল (এম.এল), কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি, গণতন্ত্রী পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, বাংলাদেশ ওয়াকার্স পার্টি, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, জাতীয় পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, জাকের পার্টি, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, গণফোরাম, গণফ্রন্ট, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপা, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএল, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম, বাংলাদেশ কংগ্রেস। অথচ প্রত্যেকটি দল নির্ধারিত প্রতীক নিয়ে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত হয়েছে।

বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বলেন, ‘আমরা অবশ্যই নির্বাচনী মাঠে আছি। আমাদের পাঁচ লক্ষ ভোট আছে। যারা আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছে। আমরা আওয়ামী লীগের সাথে আছি বলেই পৃথক কোন প্রার্থী দিইনি। এটাই বাস্তবতা।’

বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ সভাপতি এসএম আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমরা মেয়র পদে গেল নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছিলাম একজনকে। তিনি নির্বাচনের আগে অন্য প্রার্থীদের সাথে লিয়াজো করে ফেলেন। যে কারণে এবার আর প্রার্থী দিইনি। তবে মেয়র পদে আমরা আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষেই আছি। কাউন্সিলর পদে দলীয় মনোনয়ন না পাওয়া আওয়ামী লীগ-বিএনপি সমর্থিত কিছু প্রার্থী আমাদের সাথে যোগাযোগ করছে। চট্টগ্রাম বিএনএফ নেতাদের সাথে আলোচনা করে আমরা তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিব। এরপরেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে উন্নয়নের স্বার্থে চট্টগ্রাম পাঠালে সবকিছুতেই থাকবো।’

বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া বলেন, নির্বাচন হচ্ছে কিনা আপনারাই বলেন। এটা সবাই বুঝে। আমরা চসিক নির্বাচনে কারো পক্ষে নাই। তবে স্থানীয় নেতাকর্মীরা যে যেভাবেই ভালো মনে করবে সেভাবেই পক্ষ নিতে পারেন। জাতীয় নির্বাচনের পর স্থানীয় সরকার নির্বাচন যেভাবে হচ্ছে সেখানে প্রার্থী দেয়ার অবস্থা নেই। ভোটার কেন্দ্রে যাচ্ছে না। আর ভোটার কেন্দ্রে না যাওয়ার পেছনে সরকারি ও বিরোধীদল উভয়ই দায়ী।

বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএল এর ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব এডভোকেট শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী বলেন, ‘আমরা জোটভুক্ত রাজনৈতিক দল হওয়ায় জোটের সিদ্ধান্তের বাইরে যাইনি। আমাদের অবস্থান ২০দলীয় জোট প্রার্থীর পক্ষেই থাকবে। যে কারণে আমাদের পক্ষ থেকে কোন প্রার্থী দেয়া হয়নি। এছাড়া আমাদের সভাপতি মারা যাওয়ায় আমরা সেভাবে দলকে গুছিয়ে তুলতে পারি নাই। আগামীতে প্রার্থী দেয়ার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’