ডলার সংকট ও এলসি জটিলতা, বন্ধের শঙ্কা জাহাজ ভাঙা ইয়ার্ড!

ডলার সংকট ও এলসি জটিলতা, বন্ধের শঙ্কা জাহাজ ভাঙা ইয়ার্ড!
বন্ধের শঙ্কা জাহাজ ভাঙা ইয়ার্ড

পোস্টকার্ড ডেস্ক ।।

বেশ কয়েক মাস ধরে সীতাকুণ্ডর অনেক শিপইয়ার্ড ডলার সংকট ও এলসি জটিলতায় বন্ধ রয়েছে। ঋণপত্র (এলসি) খোলার ক্ষেত্রে নজরদারি বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আমদানিতে বড় অংকের এলসি খোলার আগে বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাতে হবে। এমন নির্দেশনা দিয়ে গত মাসে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর পরই সংকটের মুখে পড়ে দেশের জাহাজ ভাঙা শিল্প। ডলার সংকটের কারণে এরই মধ্যে দেশের ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি বাজারের শিল্প খাতটি অনেকটাই স্থবির। এলসি-সংক্রান্ত জটিলতায় জুলাইয়ে মাত্র আটটি স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি করেছেন আমদানিকারকরা। বাজারে চাহিদা থাকলেও স্ক্র্যাপ সরবরাহ করতে পারছে না ইয়ার্ডগুলো। ফলে স্ক্র্যাপের দামও বেড়েছে।

আমদানিকারকরা বলছেন, দেশের বাজারে ডলারের মাত্রাতিরিক্ত সংকট তৈরি হয়েছে। তার ওপর বাংলাদেশ ব্যাংক বড় অংকের এলসি খোলার ক্ষেত্রে মনিটরিং বাড়িয়েছে। এর ফলে জাহাজ ভাঙা শিল্প চ্যালেঞ্জের মুখে। আরো কয়েক মাসে যদি সরকার বৈদেশিক মুদ্রার বাজার সংকট নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারে তাহলে স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি একেবারেই বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এতে অনেক ইয়ার্ড বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন মালিকরা।

বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইকেলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসবিআরএ) স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানির পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০২১ সালে বাংলাদেশে মোট স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি হয়েছিল ২৮০টি, যার সম্মিলিত ওজন ছিল ২৭ লাখ ২৮ হাজার ৫৯৭ টন। অন্যদিকে চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে আমদানি করা হয়েছে মাত্র ৯৩টি স্ক্র্যাপ জাহাজ, যার মোট ওজন ৭ লাখ ৬৯ হাজার ২১৫ টন। গত বছরের প্রথম সাত মাসে স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি করা হয়েছিল ১৭১টি, যার ওজন ছিল ১৭ লাখ ২৩ হাজার ৬০০ টন। বছরের ব্যবধানে আমদানি কমেছে ৭৮টি এবং ৯ লাখ ৫৪ হাজার ৩৮৫ টন।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলার সংকটের কারণে বিদেশ থেকে পণ্য আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ৫০ লাখ ডলারের বেশি অর্থমূল্যের এলসি খোলা সম্ভব হচ্ছে না। এক্ষেত্রে আগে বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাতে হচ্ছে। যার কারণে জাহাজ ভাঙা শিল্প বড় সংকটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। একেকটি জাহাজ আমদানিতে ১৫০-২০০ কোটি টাকার বেশি ব্যয় হয়। অথচ গত মাস থেকে আমদানিকারকরা ব্যাংকে এলসি খুলতে পারছেন না। ফলে গত মাস থেকেই স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি তলানিতে নেমেছে। আগামী মাসগুলোয় এলসি জটিলতার সমাধান না হলে শিপইয়ার্ডগুলো একেবারেই বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবেন ব্যবসায়ীরা।

জাহাজ ভাঙা শিল্প মালিকদের সংগঠন বিএসবিআরএর সিনিয়র সহসভাপতি এবং ব্যবসায়ী মো. কামাল উদ্দিন আহমদ বলেন, আমরা ব্যাংকে এলসি করতে গেলে ডলার দিতে পারছে না ব্যাংকগুলো। যার কারণে জুলাইয়ে বাংলাদেশে স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি কমে প্রায় অর্ধেকে নেমেছে। চলতি মাসে অবস্থা আরো খারাপের দিকে যাবে। এদিকে বিদ্যুতের প্রাপ্যতা নিয়ে সংকট তৈরি হয়েছে ইয়ার্ডগুলোয়।

ইনভেস্ট ডটকমের তথ্যমতে, ১২ আগস্ট আন্তর্জাতিক বাজারে টনপ্রতি স্ক্র্যাপের দাম ছিল ৩৮৮ ডলার। ১১ আগস্টও স্ক্র্যাপ বিক্রি হয় ৩৯৪ দশমিক ৫০ ডলারে। এদিকে দেশের বাজারে টনপ্রতি স্ক্র্যাপ বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬২ হাজার টাকায়। স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি কমে যাওয়ার আশঙ্কায় বাজারে স্ক্র্যাপ সরবরাহে আরো বড় সংকট তৈরি হবে। ফলে টনপ্রতি আরো দাম বাড়ার আশঙ্কা করছেন স্ক্র্যাপ ব্যবসায়ীরা।

এদিকে বিএসবিআরএর সহকারী সচিব নাজমুল ইসলাম জানান, জাহাজ ভাঙা শিল্প বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বাড়িয়েছে। বর্তমানে দেশে নানা সংকটের মধ্য দিয়ে বাজারে ইস্পাত খাতের চাহিদা বাড়লেও ইয়ার্ড থেকে স্ক্র্যাপের জোগান বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। গত বছরের প্রতি মাসে স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি বাড়লেও চলতি বছরের শুরু থেকেই সেই হার নিম্নমুখী।

এদিকে ইয়ার্ডের শ্রমিকরা বলছেন, গত দু-তিন মাসে স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি কমে যাওয়ায় অনেক ইয়ার্ডে বেতন-ভাতা নিয়ে বড় সংকট তৈরি হচ্ছে। জাহাজ আমদানি কমে যাওয়ায় অনেক ইয়ার্ড এখন বন্ধের পথে।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;