ঝুঁকির মধ্যে চট্টগ্রামে আবার চালু ২৫৫ পোশাক কারখানা

চট্টগ্রামে ১৫৭টি কারখানাসহ মোট ৪১২টি কারখানা চালু হয়েছে এবং এসব কারখানার প্রায় লক্ষাধিক শ্রমিক কাজে যোগ দিয়েছেন।

ঝুঁকির মধ্যে চট্টগ্রামে আবার চালু ২৫৫ পোশাক কারখানা
ঝুঁকির মধ্যে চট্টগ্রামে আবার চালু ২৫৫ পোশাক কারখানা, ছবিটি প্রতীকী(সংগ্রহ)

নিজস্ব প্রতিবেদক ।।

চট্টগ্রামে তিনটি ইপিজেডসহ বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএ'র শতভাগ রপ্তানিমুখী ২৫৫টি পোশাক কারখানা চালু হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য ১৫৭টি কারখানাসহ মোট ৪১২টি কারখানা চালু হয়েছে চট্টগ্রামে। এসব কারখানার প্রায় লক্ষাধিক শ্রমিক কাজে যোগ দিয়েছেন। দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়তে থাকা ঝুকির মধ্যে কারখানা চালু করেছেন মালিকরা।

ইপিজেড কর্তৃপক্ষ বলছে, বিদেশি ক্রেতাদের কার্যাদেশ রয়েছে এবং রপ্তানি অব্যাহত রাখার জন্য কারখানাগুলো চালু করা হচ্ছে। 'যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে' সীমিত পরিসরে কাজ শুরু করেছে এসব কারখানা।

এতে শ্রমিক এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংক্রমণ ঝুঁকি 'তৈরি হবে না' বলে তারা দাবি করলেও জেলা সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি তাতে আশ্বস্ত হতে পারছেন না। যে কোনো ধরনের জমায়েতই সংক্রমণের ঝুঁকি তৈরি করবে বলে সাবধান করেছেন তিনি। কারখানা চালু করতে হলে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানতে বলেছেন এই চিকিৎসক।

এদিকে সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়ছেন শ্রমিকরা। মালিকরা বলছেন, যারা কারখানার আশেপাশে রয়েছেন, শুধু তাদেরই কাজে যোগ দিতে বলা হয়েছে। কিন্তু শিল্প পুলিশ বলছে, দূর-দূরান্ত থেকেও  শ্রমিকরা আসছেন।

শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার উত্তম কুমার পাল বলেন, চট্টগ্রামের পোশাক ও ভারী কারখানাসহ মোট ৪১২টি কারখানা চালু রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকায় ১২৭টি কারখানা চালু হয়েছে। সীমিতভাবে এসব কারখানা চালু হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

শিল্প পুলিশ পাওয়া তথ্য থেকে জানা যায়, রোববার চালু হওয়া প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিজিএমইএ'র ৯২টি, সিইপিজেডের ৭৪টি, কর্ণফুলী ইপিজেডের ২৮টি, বেসরকারি কোরিয়ান ইপিজেডের ২৫টি, বিকেএম্ইএ'র ৩১টি, বিটিএমইএ পাঁচটি এবং অন্যান্য ১৫৭টি কারখানা চালু হয়েছে। আরএমজি এবং নন-আরএমজি মিলিয়ে চালু হয়েছে ৪১২টি কারখানা। চট্টগ্রামের ৭১১টি পোশাক কারখানা এবং ৫১৮টি নন-আরএমজি কারখানা রয়েছে।

বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ বেপজার অধীনে পরিচালিত হয় চট্টগ্রাম ও কর্ণফুলী ইপিজেড। এর বাইরে আনোয়ারায় রয়েছে ইয়ংওয়ান গ্রুপের মালিকানাধীন কোরিয়ান ইপিজেড।

দেশের সবচেয়ে বড় ইপিজেড চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকায় যাদের জরুরি শিপমেন্ট ও চলমান অর্ডর রয়েছে, এ রকম ৭৪টি প্রতিষ্ঠান চালু হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিইপিজেডের দায়িত্বে থাকা বেপজার মহাব্যবস্থাপক খুরশীদ আলম।

তিনি বলেন, ওইসব কারখানায় প্রথম দিন ২০ থেকে ২৫ শতাংশ শ্রমিক কাজ করছেন। সব মিলিয়ে প্রায় ৪৫ হাজার শ্রমিক কাজে যোগ দিয়েছেন। জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় যাদের অর্ডার রয়েছে, মূলত ওইসব প্রতিষ্ঠানই কারখানা চালু রেখেছে।

চট্টগ্রাম ইপিজেডে তৈরি পোশাক, তাঁবু, ইলেকট্রনিকস পণ্য, ফেব্রিকস, জুতাসহ বিভিন্ন পণ্যের কারখানা রয়েছে ১৫৮টি। এতে শ্রমিকসংখ্যা দুই লাখের মতো। কর্ণফুলী ইপিজেডে ৪১টি কারখানায় শ্রমিক রয়েছেন প্রায় ৭৬ হাজার। অপরদিকে আনোয়ারার কোরিয়ান ইপিজেডে ২২টি কারখানায় শ্রমিকের সংখ্যা ২৫ হাজারের মতো।

করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে সরকারি ছুটির মেয়াদ কয়েক দফা বাড়ার পর চট্টগ্রাম ও কর্ণফুলী ইপিজেড দুটির ৬৯টি কারখানা লে-অফের জন্য আবেদন করেছিল।

কর্ণফুলী ইপিজেডের জিএম মশিউদ্দিন বিন মেজবাহ জানান, তাদের ইপিজেডের ২৫-৩০টি কারখানা রপ্তানি কার্যাদেশ থাকায় আংশিকভাবে খোলার জন্য যোগাযোগ করেছে। পুরোপুরিভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার গাইডলাইন দিয়ে কারখানাগুলো খুলতে দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী কারখানা মালিকরা উদ্যোগ নিয়েছেন কি না, তা ইপিজেড কর্তৃপক্ষ কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করবে।

অন্যদিকে, চট্টগ্রামের একমাত্র বেসরকারি ইপিজেড কোরিয়ান ইপিজেড পুরোপুরিভাবে খুলেছে বলে জানিয়েছেন আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ জুবায়ের। তিনি জানান, এ ইপিজেডের সব শ্রমিক কাজে যোগ দিয়েছেন।

বিজিএমইএ'র অধীনে চট্টগ্রামে কারখানা চালু ছিল ৩২৪টি। এর মধ্যে বিদেশি কার্যাদেশ থাকায় চালু ছিল ২০ থেকে ২২টি প্রতিষ্ঠান। রোববার চালু হয়েছে ৮০-৯০টি প্রতিষ্ঠান। এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ পরিচালক মোহাম্মদ আতিক বলেন, আগে যেগুলো চালু ছিল, তাদের মধ্যে কিছু প্রতিষ্ঠান আবার বন্ধ হয়ে গেছে। যাদের শিপমেন্ট রয়েছে, তারাই সীমিত পরিসরে কারখানা চালু করছে। তবে সব কারখানাকে করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে বিধি-ব্যবস্থা মানার জন্য বিজিএমইএর পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এছাড়াও বিজিএপিএমইএ'র চট্টগ্রামের ৯টি এক্সেসরিস উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান চালু হয়েছে বলে জানিয়েছেন এর প্রথম সহ-সভাপতি লতিফুর রহমান আজিম।