চীনে করোনাভাইরাসে সাড়ে ২৪ হাজার জনের মৃত্যুর খবরটি ‘গুজব’

চীনে করোনাভাইরাসে সাড়ে ২৪ হাজার জনের মৃত্যুর খবরটি ‘গুজব’
চীনে করোনাভাইরাসে সাড়ে ২৪ হাজার জনের মৃত্যুর খবরটি ‘গুজব’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক ।।

চীনা প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান টেনসেন্ট-এর ওয়েবপেজের মতো একটি স্ক্রিনশট ভাইরাল হয়েছে যেখানে দাবি করা হয়- চীনে করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত ২৪ হাজার ৫৮৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৫৪ হাজার ২৩ জন। ওই স্ক্রিনশটটির ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যম সংবাদও প্রকাশ করেছে।

তবে বিডি ফ্যাক্টচেক বলছে, ওই স্ক্রিনশটটি ভুয়া।

টাইমস অব ইন্ডিয়া থাইওয়ান নিউজের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, ওই স্ক্রিনশটে ‘মহামারি পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ’ শিরোনামে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বলা হয়েছে ২৪ হাজার ৫৮৯ জন। আর আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৫৪ হাজার ২৩ জন। তবে চীনের সরকারি তথ্য মতে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ৬৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং আক্রান্তের সংখ্যা ৩১ হাজার ছাড়িয়েছে। কিন্তু ওই স্ক্রিনশটে দেখানো মৃত্যুর সংখ্যা সরকারি হিসেবের চেয়ে ৩৮ গুণ বেশি।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার ওই সংবাদে দাবি করা হয়, লেখাটি প্রকাশের কিছুক্ষণ পরই টেনসেন্ট তাদের তথ্য সংশোধন করে নেয়। সংশোধনের পর সেখানে সরকারি হিসাব ঝুলিয়ে দেওয়া হয়।

নভেল করোনাভাইরাস বিষয়ে চীনা সরকারের পরিসংখ্যান নিয়ে ইতিমধ্যে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। এর মধ্যে স্ক্রিনশটের এই পরিসংখ্যান চীনা কর্তৃপক্ষকে বেশ বেকায়দায় ফেলেছে এটাই স্বাভাবিক।

বিডি ফ্যাক্টচেক বলছে, স্ক্রিনশটটির উৎপত্তি চাইনিজ সামাজিকমাধ্যম কিউকিউ থেকে। গত পহেলা জানুয়ারি প্রথম স্ক্রিনশটটি একজন ব্যবহারকারী কিউকিউতে পোস্ট করেন। কিউকিউ হচ্ছে টেনসেন্ট-এর মালিকানাধীন একটি প্রতিষ্ঠান।

কিউকিউ থেকে স্ক্রিনশটটি নিয়ে প্রথম সংবাদ প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক চাইনিজ ভাষায় প্রকাশিত গণাধ্যম এনটিডিটিভি। গণমাধ্যমটি চাইনিজ সরকারের কড়া সমালোচক। সেখান থেকে থাইওয়ান নিউজ, টাইমস অব ইন্ডিয়াসহ সবাই নিউজ করে। আর এভাবে এটি সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।

ইউনিভার্সিটি অব টরন্টোর এপিডেমিওলজি (মহামারী সংক্রান্ত্র বিদ্যা) বিভাগের অধ্যাপক ড. ডেভিড ফিশম্যান ও ড. অ্যাশলি টিটে শুরু থেকেই করোনা ভাইরাসের বংশবৃদ্ধি নিয়ে গবেষণা করেন। তাদের গবেষণার ফলাফল ‘রিপোর্টিং, এপিডেমিক গ্রোথ, অ্যান্ড রিপ্রোডাকশন নাম্বারস ফর দ্য ২০১৯ নভেল করোনাভাইরাস এপিডেমিক’ শিরোনামে অ্যানালস অব ইন্টার্নাল মেডিসিন জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।

এ বিষয়ে ড. ফিশম্যান বলেন, ‘করোনাভাইরাসে দুই লাখ মানুষ আক্রান্ত হবে কিংবা ২৫ হাজার মানুষ এই রোগে মারা যাবে- এটা অসম্ভব একটা ব্যাপার।’

বিশ্বের অধিকাংশ ওয়েব ব্রাউজারের সাহায্যে সংশ্লিষ্ট সাইটের এইচটিএমএল কোড ব্যবহার করে এই ধরণের স্ক্রিনশট মুহুর্তেই বানানো যায়। কানাডা ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম কানাডিয়ান ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন মাত্র কয়েক সেকেন্ডেই অনুরূপ একটি স্ক্রিনশট তৈরি করে দেখিয়েছে।

চাইনিজ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান টেনসেন্টের সঙ্গে ইমেইলে যোগাযোগ করা হলে তারা জানায়, এমন সংকটের মুহূর্তে এই গুজব ছড়ানো বিবেকবর্জিত কাজ। ‘মহামারি পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ’ শিরোনামে তারা কোনো লেখাই তাদের সাইটে প্রকাশ করেনি।