চট্টগ্রামের ইপিজেডে শ্রমিকের ঢল, পোশাক মালিকদের ‘আত্মঘাতী’ সিদ্ধান্ত

চট্টগ্রামের ইপিজেডে শ্রমিকের ঢল, পোশাক মালিকদের ‘আত্মঘাতী’ সিদ্ধান্ত

আল-আমিন সিকদার।।

ছোঁয়াচে রোগ করোনাভাইরাস বিশ্বজুড়ে ভয়াল গ্রাস চালাচ্ছে। প্রতিষেধকবিহীন এ রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ৬৮ হাজারেরও বেশি মানুষ। করোনাভাইরাসের এ তা-বে এখনও ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। আক্রান্ত হয়েছেন ৭০ জন। প্রাণ হারিয়েছেন ৯ জন। তাই রোগটিকে মহামারী ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। প্রতিষেধক না থাকায় রোগ মোকাবেলায় দিয়েছেন কারো সংস্পর্শে না যাওয়ার নির্দেশনা।

ভয়ংকর এ রোগটি মোকাবেলায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ সরকার। বন্ধ করে দিয়েছেন জনসমাগম ঘটে এমন সব কার্যক্রম। তারপরেও ঠেকানো যাচ্ছে না মানব সমাজের ওপর করোনার এ থাবা। দিন দিন বাড়ছে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা, বাড়ছে মৃত্যুর হার। দেশের এমন সময় চট্টগ্রামের পোশাক কারখানার মালিকরা রপ্তানি কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে খোলা রেখেছেন তাদের কারখানা। সরকারের প্রথম ধাপের ছুটি শেষে গতকাল (রবিবার) খোলা রাখা হয় চট্টগ্রামের দুটি ইপিজেডের বেশ কয়েকটি কারখানা। যেখানে কর্মের উদ্দেশ্যে ঘর ছাড়েন লক্ষাধিক শ্রমিক।

দেশের এমন ক্রান্তিলগ্নে পোশাক মালিকদের এ সিদ্ধান্তকে আত্মঘাতী হিসেবে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, করোনাভাইরাসটি এতটাই ভয়াবহ যে সতর্কতার সাথে মোকাবেলা না করলে এর থেকে বাঁচার কোনো উপায় নেই। যার প্রথম শর্ত হচ্ছে অন্যজনের সংস্পর্শে না যাওয়া। এমন সময় কারখানা খোলা রাখার যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে সেটি দেশকে ঝুঁকিতে ফেলে দেয়ার মত সিদ্ধান্ত।

এদিকে, খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গতকাল (রবিবার) চট্টগ্রাম ইপিজেডের প্রায় ৬৭টি কারখানা খোলা রাখা হয়েছিল। এরমধ্যে এইচ কে ডি, স্মার্ট জ্যাকেট, ইয়ংওয়ান, প্যাসিফিক জিন্স, মেরিমো, সেকশন সেভেন ও মেরিম নামক কোম্পানিগুলো তাদের কার্যক্রম খোলা রেখেছেন। চাকরি বাঁচাতে ও বেতন পাওয়ার আশায় কাজে যোগদেন লক্ষাধিক শ্রমিক। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় পায়ে হেঁটে কর্মস্থল আর কর্মস্থল থেকে বাসায় ফিরতে দেখা যায় তাদের। তাই ছুটির সময় ইপিজেডের সড়কগুলোতে যেন মানুষের ঢল নামে।

চট্টগ্রাম ইপিজেডের মোরিমো কারখানায় কাজ করেন পোশাক শ্রমিক মামুন। অফিস শেষে বাসায় ফেরার পথে তার সাথে কথা হয় প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, ‘অফিস থেকে মোবাইলে ম্যাসেজ দিয়ে জাননো হয় রবিবার (গতকাল) থেকে অফিস খোলা। কারণ বন্ধের আগে জনিয়ে দেয়া হয়েছিল অফিস খুললে মোবাইলে জানিয়ে দেয়া হবে। আমরা শ্রমিক অফিসে না গেলে আমাদের খাওয়াবে কে? তাই ঝুঁকি জেনেও কর্মে যোগ দিতে বের হয়েছি। চাকরিতে না গেলে বের করে দেয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে। তবে বেতন পাওয়ার আশায় আজকে গতকাল (রবিবার) অফিসে গেলেও বেতন পাইনি। কবে দিবে সেটাও জানায়নি। বন্ধের কথাও জানায়নি। অন্যান্যদের মত আমরাও মানুষ। সামান্য লাভের আশায় আমাদের জীবন ঝুঁকিতে ফেললে একদিন পোশাক শিল্পই ঝুঁকিতে পরবে। আমরা বেতনের পাশাপাশি জীবনের নিরাপত্তাও চাই’।

এদিকে, ইপিজেড লকডাউনের সিদ্ধান্ত আসছে বলে জানিয়েছেন দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র। যার ইঙ্গিতও দিয়েছেন চট্টগ্রাম বেপজা’র মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ খুরশীদ আলম।

তিনি বলেন, ‘রপ্তানি কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে পোশাক কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত নেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। প্রথম দিন (রবিবার) ইপিজেডের প্রায় ৬৫টি কারখানা খোলা ছিল। শুধুমাত্র শিপমেন্ট স্বাভাবিক রাখতে কারখানাগুলো খোলা রাখা হয়েছিল। তবে দেশের স্বার্থে এমন পরিস্থিতিতে কারখানা খোলা রাখার মত ঝুঁকি নিবে না বেপজা। গার্মেন্টস বন্ধে আমাদের বৈঠক চলছে’।