চট্টগ্রাম উইমেন চেম্বার আয়োজিত বাণিজ্য মেলা জমেনি, ব্যবসায়ীরা হতাশ

চট্টগ্রাম উইমেন চেম্বার আয়োজিত বাণিজ্য মেলা জমেনি, ব্যবসায়ীরা হতাশ
চট্টগ্রাম উইমেন চেম্বার আয়োজিত বাণিজ্য মেলা জমেনি, ব্যবসায়ীরা হতাশ

মনিরুল ইসলাম মুন্না ।।

২৬ দিনেও জমে উঠেনি চট্টগ্রাম উইমেন চেম্বার আয়োজিত মাসব্যাপী ১৩তম আন্তর্জাতিক নারী বাণিজ্য মেলা । তেমন জনসমাগম নেই।  সোমবার নগরীর রেলওয়ে পলোগ্রাউন্ড মাঠে এসব দৃশ্য দেখা যায়। মেলা জমে না উঠায় ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঠিকমত প্রচার-প্রচারণা না হওয়ায় মেলার এ দশা। অন্যদিকে মেলা কমিটি বলছে, দিনের বেলায় ক্রেতা না থাকলেও সন্ধ্যার পরে থাকে।

গৃহিণীদের মতে, এসএমই এক্সপো মেলা মানুষের পারিবারিক, সাংসারিক দৈনন্দিন কাজে ব্যবহৃত এমন সব জিনিসপত্রের চাহিদা মেটানোর একমাত্র আসর। এ মেলার পণ্যসামগ্রী দিয়ে পুরো বছর চলে সাংসারিক সব কাজ।

বিশেষ করে মার্কেটে সচরাচর পাওয়া যায় না এমন সব পণ্য, যেমন- তাঁত ও কুটির শিল্প, হস্তশিল্প, অ্যালুমুনিয়াম, কাঠ ও প্লাস্টিক সামগ্রী, নানা রঙের প্লাস্টিকের ফুলের পসরা, তাঁতে বোনা কাপড়সহ সব ধরনের পণ্য এখানে পাওয়া যায়। তবে নভেম্বরের এ সময়ে ছেলে-মেয়েদের পরীক্ষা, মেলা কমিটির অব্যবস্থাপনাসহ নানা কারণে এ বারের মেলা তেমন জমে উঠেনি।

সরেজমিন দেখা যায়, ক্রেতাদের উপস্থিতি ছিল খুবই কম। পুরো মেলা প্রাঙ্গণে ফাঁকাভাব বিরাজ করছে। স্টলগুলোতে তেমন ক্রেতার দেখা নেই। বন্ধু-বান্ধব নিয়ে কেউ কেউ ঘুরতে আসলেও সেলফি নিয়ে ব্যস্ত। বিদেশি স্টলের বিক্রেতারাও হতাশায় ভুগছিলেন। বিকেল ৪টার দিকে হাতেগোনা অল্প সংখ্যক নারী ক্রেতাদের দেখা গেছে। তারা শুধুমাত্র দাম-দর করেন। তেমন কোন পণ্য তারা নেননি।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, এত টাকা দিয়ে স্টল বরাদ্দ নিয়ে মনে হয় লোকসান গুনে ফিরে যেতে হবে। মেলা কমিটির অব্যবস্থাপনার কারণে এখন মেলার এ দুর্দশা। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পণ্য-সামগ্রী নিয়ে আসা নারী উদ্যোক্তারাও অসহায়ের মত সময় পার করছেন।

মেলায় আসা শিরিন আহমেদ জানান, বাচ্চাদের পরীক্ষা থাকায় মেলায় আসা হয়নি। আর এখানে এসে দেখলাম ক্রেতা নেই, বিক্রেতারা অলস সময় পার করছেন।

নাজমা আক্তার নামে এক গৃহিণী জানান, আমি গত শুক্রবারও এসেছিলাম একটা জিনিস কিনতে, ওইদিন তা না পাওয়ায় আজকে আবার আসলাম। শুক্রবার বন্ধের দিনও মানুষের আনাগোনা তেমন ছিল না। সেদিন যদি এ অবস্থা হয়, তাহলে অন্য সময় কি অবস্থা হবে?

ঢাকা থেকে আসা এক দোকানদার বলেন, ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা খরচ করে স্টল বরাদ্দ নিয়ে ডেকোরেশন করিয়েছি। তাঁতের কাপড়, জামা, চাদর, বেডশিট, থ্রিপিস, ওয়ানপিচ, শাল, ওড়না, হ্যান্ড পার্স, লেডিস আইটেম নিয়ে এবার মেলায় আসলাম। মনে হয় লোকসান দিয়ে ফিরতে হবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক নারী উদ্যোক্তা বলেন, নিজেদের বানানো থ্রিপিস, ওয়ানপিস, কুটি, কুসন কভার, পর্দা ব্লক ও বাটিক কাপড় নিয়ে এসেছি। এসব বিক্রি করতে পারবো কি না জানি না।

আইসক্রিম বিক্রেতা আবু বকর বলেন, সারাদিন আইসক্রিম নিয়ে বসে থাকি। মেলা জনশূন্য হওয়ায় বিক্রি হয় না তেমন। অবশ্য সন্ধ্যার দিকে কিছু মানুষ আসে। তখন কিছুটা বিক্রি হয়।

সিলেট থেকে আসা আচার বিক্রেতা উজ্জ্বল হোসেন বলেন, মেলায় দর্শনার্থীদের একটি আকর্ষণ হলো আচার। মেলায় আসলে সকলেরই চোখ পড়ে আচারের ওপর। দোকানে ভিড় লেগেই থাকে। কিন্তু এখানে দোকান দিয়ে দেখা যাচ্ছে ভিন্ন অবস্থা। নেই মানুষের আনাগোনা। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কোন মানুষ থাকে না। বসে বসে মাছি মারতে হয়। সন্ধ্যার দিকে মোটামুটি একটু মানুষের আনাগোনা হয়, তখন কিছুটা বিক্রি করতে পারি।

এদিকে দর্শনার্থী না থাকায় মেলার আকর্ষণ বাড়াতে উইন্টার ফেয়ার নামে আরও একটি মেলার আয়োজন করেন তারা। মেলার অভ্যন্তরে ‘মেলার ভেতর মেলা’ এর অংশ হিসেবে অনলাইনভিত্তিক উদ্যোক্তাদের দল মেক আপ শেক আপ- এটি আয়োজন করছে। আগামী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে ৫ দিনব্যাপী এ উইন্টার ফেয়ার।

এ ব্যাপারে মেলা কমিটির চেয়ারপর্সন ডা. মুনাল মাহবুব বলেন, সন্ধ্যার দিকে আমাদের মেলায় মানুষের ভিড় থাকে। বিকেলের দিকে নাও থাকতে পারে, কারণ তখন অফিস-আদালত খোলা থাকে। গত শুক্রবারে প্রায় ৪০ হাজার টিকেট বিক্রি হয়েছে এ মেলায়।

ব্যবসায়ীদের লোকসানের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যে ব্যবসায়ী লোকসান হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন, তাকে অফিসে আসতে বলুন। তার সাথে সরাসরি কথা বলবো।