কর্মে সফলতা আনে ' ধৈর্য ও সুচিন্তা'

দৌলত আলী খান ।।

কর্মে সফলতা আনে ' ধৈর্য ও সুচিন্তা'
কর্মে সফলতা আনে ' ধৈর্য ও সুচিন্তা'
মানুষকে পৃথিবীতে কর্ম করেই চলতে হয়। দৈনন্দিন কোনো না কোনো কাজে ব্যস্ত থেকে জীবনযাপন করতে হয়। আর মানুষের প্রতিটি কাজের পেছনে রয়েছে সফলতা-ব্যর্থতা। যদিও সবাই চায় কাজের সফলতা। কিন্তু কাজের সফলতা ভোগ করতে হলে মানুষকে ধৈর্যশীল ও চিন্তাশীল হতে হবে। তাড়াহুড়া করে কোনো কাজ করা হলে তা সাধারণত চূড়ান্ত সফলত নিয়ে আসে না। তা ছাড়া তাড়াহুড়া করা শয়তানের স্বভাব। তাই মানুষের উচিত সর্বকাজে সুচিন্তা ও ধৈর্য অবলম্বন করা।
 
বিশেষ করে ধৈর্যকে দৃঢ়ভাবে গ্রহণ করতে হবে। কেউ কষ্ট দিলে কিংবা আঘাত করলেও ধৈর্য ধারণ করা মুমিনের দায়িত্ব। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ জানিয়েছেন তিনি ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছে। তাদের তিনি সাহায্য করবেনই। অনেক নবী-রাসুল দুনিয়ার জীবনে বড় বড় কষ্ট নীরবে সহ্য করে গিয়েছেন। হজরত আইয়ুব (আ.) ১৮ বছর পর্যন্ত কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হয়ে শারীরিক যন্ত্রণা ভোগ করেছেন। তিনি এ রোগ থেকে সুস্থতার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে চাননি।
 
একইভাবে হজরত ইবরাহিম (আ.)-কে অভিশপ্ত নমরুদ অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ্ত করেছিল। কিন্তু হজরত ইবরাহিম (আ.) নমরুদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে হাতে তোলেননি। আখেরি নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) জীবনের শুরু থেকেই কাফেরদের অত্যাচারে জর্জরিত হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু শত্রুর প্রতি প্রতিশোধ নিননি, বরং আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করেছিলেন। তাদের এ দুঃখ-কষ্টের সঙ্গী ছিলেন একমাত্র মহান আল্লাহ। প্রতিটি মুহূর্তে তারা আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ উভয়ভাবে সাহায্যপ্রাপ্ত হয়েছেন। সুতরাং মুসলিম উম্মাহকে প্রতিটি কাজে ধৈর্যের সঙ্গে সফলতাকে খুঁজে নিতে হবে। আর এটাই হলো ইসলামের অনুপম আদর্শ।
 
তাড়াহুড়া না করা : অনেকে কাজের ধীরস্থিরতাকে পছন্দ করে না। তাড়াহুড়াকে কাজের মূল চালিকাশক্তি মনে করে। অথচ ধীরে কাজ করার মধ্যে কল্যাণ নিহিত রয়েছে এবং এতে আল্লাহর রহমত অবতীর্ণ হয়। কারণ, ইসলাম কাজে ধীরস্থিরতা অবলম্বনের শিক্ষা দিয়েছে। আর তাড়াহুড়াকে শয়তানের কর্ম হিসেবে অবহিত করেছে। এ প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) বলেন, ‘ধীরস্থিরতা আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে হয়, আর তাড়াহুড়া শয়তানের পক্ষ থেকে।’ (তিরমিজি : ২১৪৪)। আরও বলেন, ‘প্রত্যেক কাজই ধীরে করার মধ্যে কল্যাণ রয়েছে। তবে আখেরাতের আমলের ব্যতিক্রম।’ (আবু দাউদ : ৪৮১২)
 
চিন্তাভাবনা করা : কাজের সফলতা লাভের আরেকটি উপায় হলো চিন্তাশীল হওয়া। ভাবনাহীন কাজ প্রকৃত কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না। কর্মের সুফল পেতে হলে কর্মকারীকে অবশ্য কাজ নিয়ে ভাবতে হবে এবং ভালো-মন্দ উভয় দিক বিবেচনা করতে হবে। কারণ, পরিকল্পনাহীন কাজ মানব জীবনে ধ্বংস ডেকে আনে। এমনকি এতে নিজের সম্পদ, পরিশ্রম ও সময়ের সিংহভাগ অপচয়ই হয়। তাই প্রতিটি কাজের সফলতার পূর্বশর্ত হচ্ছে পূর্বপরিকল্পনা। আগে চিন্তাভাবনা করতে হবে, অতঃপর কাজ সম্পাদনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। কাজ সম্পাদনের ক্ষেত্রে এটাই নবীজি (সা.)-এর সুন্নত। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি নবী করিম (সা.) কে বলল, আমাকে উপদেশ দিন। তখন তিনি বললেন, চিন্তা-ভাবনা করে কাজ করো। যদি তার পরিণাম উত্তম বলে বিবেচিত হয়, তবে তা সম্পাদন করো। আর যদি মন্দের আশঙ্কা থাকে তখন তা থেকে বিরত থাক। (শারহুস সুন্নাহ)
 
ধৈর্যশীল ও সহনশীল হওয়া : কাজকর্মে সহনশীল বা ধৈর্যশীল হওয়া উচিত। ধৈর্যের ফল মিষ্টি। অধৈর্যশীল ব্যক্তি জীবনে সুখী হতে পারে না। যারা ধৈর্য ধারণ করতে অক্ষম তারা প্রকৃতপক্ষে ভীরু ও কাপুরুষ। মানবজাতিকে জীবনের সর্বস্তরে উন্নতি সাধন করতে হলে অবশ্য ধৈর্যের গুণ গ্রহণ করতে হবে। কারণ, মানুষের গুণাবলির মধ্যে ধৈর্য-সহিষ্ণুতা সর্বোৎকৃষ্ট গুণ। বিপদ-আপদে অধৈর্য হলে বিপদ কাটে না, বরং ক্ষুদ্র বিপদটি সমূহ বিপদে পরিণত হয়।
 
তাই সর্বকাজের সফলতার জন্য ধৈর্য অবলম্বন করা মানব জাতির জন্য খুবই প্রয়োজন। ধৈর্যের আড়ালেই মানুষের অসীম সুখ ও শান্তি নিহিত। আর আল্লাহ তায়ালা ধৈর্যশীলদের ভালোবাসেন। এ মর্মে আল্লাহ তায়ালা বলেন, যারা অভাবে ও ক্লেশে এবং যুদ্ধকালে ধৈর্যশীল তারাই সত্যপরায়ণ এবং তারাই ধর্মভীরু। (সূরা বাকারা : ১৭৭)। হাদিসে আছে, হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) আবদুল কায়েস গোত্রপতি ‘আশজ্জ’কে লক্ষ্য করে বললেন, তোমার মধ্যে উত্তম দুটি গুণ আছে যাকে আল্লাহ তায়ালা পছন্দ করেন। আর তা হলো সহনশীলতা ও গাম্ভীর্য।
(মুসলিম : ১২৬)
 

লেখক : শিক্ষক, নাজিরহাট বড় মাদ্রাসা, ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম