কারও বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া জঘন্য অপরাধ, যত ক্ষতি মিথ্যা সাক্ষ্যের

কারও বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া জঘন্য অপরাধ, যত ক্ষতি মিথ্যা সাক্ষ্যের

আমিন ইকবাল ।।

জঘন্যতম অপরাধ হচ্ছে কারও বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া । মিথ্যা সাক্ষী দিয়ে প্রতিপক্ষকে সাময়িকভাবে ঘায়েল করা যায়, তাকে হারিয়ে দেওয়া যায়, খাটো বা অপমানিত করা যায়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে মিথ্যা অপবাদ চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হয়। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর যে ব্যক্তি মিথ্যা আরোপ করে, সে-ই ব্যর্থ হয়।’ (সুরা তাহা : ৬১)। অন্যত্র বলা হয়েছে ‘দেখ, তারা কীভাবে মিথ্যা বলেছে নিজেদের ওপর, তারা যে মিথ্যা রটনা করত, তা তাদের থেকে হারিয়ে গেল।’ (সুরা আনআম: ২৪)। মিথ্যাবাদীকে হুঁশিয়ার করে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কোনো বানোয়াট অভিযোগ আনল, সে যেন নিজেই নিজের স্থান জাহান্নামে করে নিল।’ (বুখারি : ৩৫০৮)

মিথ্যা আরোপকারীদের শাস্তির বিষয়ে হাদিসের সর্বোচ্চগ্রন্থ বুখারি শরিফে বর্ণিত আছে একবার নবীজি (সা.) সাহাবাদের বলেন, ‘আমি কি তোমাদের সবচেয়ে গুরুতর অপরাধের কথা বলব না? সাহাবারা বললেন, নিশ্চয়ই, ইয়া রাসুলুল্লাহ! তিনি বললেন, আল্লাহর সঙ্গে শিরক করা এবং মা-বাবার অবাধ্য হওয়া। অতঃপর তিনি হেলান দেওয়া অবস্থা থেকে সোজা হয়ে বসলেন (পরবর্তী কথার প্রতি গুরুত্বারোপ করার জন্য) এবং বললেন, মিথ্যা কথা বলা এবং মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া। এ কথাটি তিনি এত বেশি বার বলতে লাগলেন যে, সাহাবারা মনে মনে বলতে লাগলেন, এবার যদি তিনি থামতেন!’ (বুখারি : ২৬৫৪)

অন্য হাদিসে নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেন, ‘হে মানুষ! জেনে রেখ, মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়াকে আল্লাহর সঙ্গে শিরক করার মতো গণ্য করা হয়েছে। অতঃপর তিনি কোরআনের এ আয়াতের অংশটি পড়েন, ‘তোমরা মূর্তি পূজার মতো গর্হিত কাজ এবং মিথ্যা বলা পরিহার কর।’ (তুহফাতুল আহওয়াজি শরহে তিরমিজি : ২৪০২)

মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া যেমন অপরাধ, প্রয়োজনে সত্য সাক্ষ্য গোপন করাও তেমন অপরাধ। এ জন্য পবিত্র কোরআনে সত্য সাক্ষ্য গোপন না করার নির্দেশ দিয়ে বলা হয়েছে, ‘তোমরা সাক্ষ্য গোপন কর না। যে ব্যক্তি তা গোপন করবে, তার অন্তর পাপী সাব্যস্ত হবে। তোমরা যা কর, আল্লাহ তার খবর রাখেন।’ (সুরা বাকারা : ২৮৩)

সত্য সাক্ষ্য গোপন করা মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ারই নামান্তর। যেহেতু উভয়টিই নিরপরাধ মানুষের বিরুদ্ধে। যখন কোনো ব্যক্তি মিথ্যা সাক্ষ্যের কারণে অন্যায়ভাবে ফেঁসে যায়, তখন সত্য সাক্ষ্য দিয়ে তাকে উদ্ধার করা নৈতিক দায়িত্ব হয়ে দাঁড়ায়। এ জন্য পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশে নিজেদের সত্যের সাক্ষী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত কর যদিও তা তোমাদের নিজেদের, তোমাদের মা-বাবার কিংবা তোমাদের নিকটাত্মীয়দের বিরুদ্ধে যায় চাই সে ধনী হোক কিংবা গরিব হোক (তা দেখার বিষয় নয়)। কারণ আল্লাহর সন্তুষ্টি তাদের চেয়ে বড় বিষয়। সুতরাং তোমরা ন্যায়বিচারের সময় নিজেদের খেয়াল-খুশির অনুসরণ কর না। যদি তোমরা পেঁচানো কথা বল কিংবা (সত্য সাক্ষ্য দেওয়া থেকে) বিরত থাক তাহলে জেনে রেখ, তোমরা যা কিছু কর আল্লাহর তার খবর রাখেন।’ (সুরা আন নিসা : ১৩৫)

আর সত্য সাক্ষ্য গোপন করে মিথ্যা সাক্ষ্য এবং অপবাদ কোনো সমাজে ব্যাপক হারে হয়ে থাকলে সেখানকার সামাজিক শৃঙ্খলা দ্রুত বিনষ্ট হয়। সমাজের সর্বত্র অশান্তি বিরাজ করে। পারস্পরিক কলহ-বিবাদ বেড়ে যায়। ফলে সমন্বিত কোনো কল্যাণ কাজের উদ্যোগ গ্রহণ করা সম্ভব হয় না। সমাজ ও রাষ্ট্রের বন্ধন শিথিল হয়ে পড়ায় বহিঃশত্রুর আক্রমণ সহজতর হয়। একই সঙ্গে সমাজ ও রাষ্ট্রে বসবাসরতদের মাঝে স্থায়ী শত্রুতার জন্ম নেয়। ফলে সামাজিক বা রাষ্ট্রীয়ভাবে কোনো ঐক্য গড়ে তোলা সম্ভব হয় না। তাই সবার উচিত সর্বক্ষেত্রে মিথ্যা পরিহার করা এবং সত্যকে বিজয়ী করা।

লেখক : আলেম ও সাংবাদিক