প্রিয় নবীজির (দ.) উত্তম চরিত্র

প্রিয় নবীজির (দ.) উত্তম চরিত্র

মাহদী হাসান ।।

সর্বোত্তম আদর্শের অধিকারী ছিলেন প্রিয় নবী (দ.) । মানুষের চরিত্রের পরিপূর্ণতার জন্যই তাকে প্রেরণ করা হয়েছিল।
রাসুল (দ.) বলেছেন, ‘উত্তম চরিত্রের পূর্ণতা দানের জন্যই আমাকে প্রেরণ করা হয়েছে।’ (জামেউল আহাদিস : ৬৭২৯)। উম্মত হিসেবে আমাদের কর্তব্য হচ্ছে রাসুলের আদর্শে আদর্শবান হওয়া। রাসুলের চরিত্রে নিজেকে সজ্জিত করা। আল্লাহ বলেছেন, ‘হে রাসুল! আপনি লোকদের বলে দিন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসো, তাহলে আমার অনুসরণ কর। তাহলে আল্লাহও তোমাদের ভালোবাসবেন।’ (সুরা আলে ইমরান: ৩১)। রাসুলের পুরো জীবনই আলোচনার ও অনুসরণের। এখানে কয়েকটি উদাহরণ উল্লেখ করা হলো।
ক্ষমা ও মহানুভবতা : হাদিসে এসেছে, একবার এক ইহুদি নবীজিকে কঠিন জাদুবাণে জর্জরিত করে ফেলল। নবীজির বেশ কষ্ট হচ্ছিল। সবকিছু এলোমেলো লাগছিল। প্রায় ছয় মাসের মতো নবীজি অসহ্য কষ্টে ছটফট করেছেন। তারপর আল্লাহ তায়ালা স্বপ্নের মাধ্যমে নবীজিকে জাদুর বিষয় ও জাদুকারীর পরিচয় জানিয়ে দেন। নবীজি এক দিন ঘুমাচ্ছিলেন। তখন স্বপ্নে দেখানো হয়, রুজাইক গোত্রের লাবিদ ইবনে আসাম নামক এক ইহুদি নবীজির ওপর জাদু করেছে। নবীজির মাথা থেকে পড়ে যাওয়া চুল সংগ্রহ করে চিরুনির ভেতর গিট দিয়ে জারওয়ান নামক ক‚পের তলদেশে ফেলে রেখেছিল। চুলের প্রতিটি গিটে জাদুর মন্ত্র করা ছিল। স্বপ্নের বিবরণ অনুযায়ী কয়েকজন সাহাবি ক‚পের নিচ থেকে চুল-চিরুনি বের করে এনে গিটগুলো খুলতেই নবীজি পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেলেন। তবু নবীজি সেই ইহুদিকে কিছু বললেন না। ক্ষমা করে দিলেন। (বুখারি : ৫৭৬৩)
দয়া ও দানশীলতা : নবীজি (দ.) দুনিয়াতে নিজের জন্য কিছু সংরক্ষণ করেননি। তার কাছে যেসব হাদিয়া উপহার আসত সব তিনি মানুষদের দিয়ে দিতেন। একবার তার কাছে একজন লোক আসল কিছু সাহায্যের আবেদন নিয়ে। নবীজি তাকে দুই পাহাড়ের মাঝের সব বকরি দিয়ে দিলেন। তখন সে তার গোত্রের লোকদের কাছে গিয়ে বলল হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা ইসলাম গ্রহণ কর। কেননা, মুহাম্মদ (দ.) এত বেশি পরিমাণে দান করেন যে, তিনি নিঃস্ব হয়ে যাওয়ার কোনো ভয় করেন না। (মুসলিম : ২৩১২)
সাদাসিধা জীবন : রাসুল (দ.) কখনও আরামদায়ক বিছানায় ঘুমাননি। গাছের লতাপাতা দিয়ে তৈরি করা বিছানায় ঘুমাতেন। এতে তার শরীরে দাগ হয়ে যেত। সাহাবারা ভালো কোনো বিছানার ব্যবস্থা করার আবদার জানালে তিনি বলতেন দুনিয়ার প্রতি আমার কোনো আকর্ষণ নেই। আমি দুনিয়াতে একজন পথচারী ছাড়া আর কিছুই নই। যে পথচারী একটা গাছের ছায়ায় আশ্রয় নিয়ে একটু পরে সেটা ছেড়ে চলে যায়। (তিরমিজি : ২৩৭৭)
কৈফিয়ত তলব করতেন না : নবীজি কখনও নিজের কাজের কৈফিয়ত তলব করতেন না। হজরত আনাস (রা.) কিশোর বয়সে রাসুল (দ.)-এর খাদেম হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি বলেন আমি দীর্ঘ ১০ বছর রাসুল (দ.)-এর সেবায় নিয়োজিত ছিলাম। এই সুদীর্ঘ সময়ে রাসুল কখনই আমার প্রতি বিরক্ত প্রকাশ করে উফ শব্দটুকু উচ্চারণ করেননি। আমার কোনো কাজ দেখে কখনও বলেননি, তুমি এ কাজ করলে কেন? কিংবা কাজ না করলে কখন বলেননি, তুমি এ কাজ করলে না কেন? (বুখারি : ৫৬৯১)