কেউ রাজনৈতিক নেতা নয়তো ছয়তলা বাড়ির মালিক ইত্যাদী তবে মূল পেশার আড়ালে ওরা ছিনতাইকারী ও ডাকাত ,টিমে আছে সীতাকুন্ডের ফৌজদারহাটের এরশাদ

কেউ রাজনৈতিক নেতা নয়তো ছয়তলা বাড়ির মালিক ইত্যাদী তবে মূল পেশার আড়ালে ওরা ছিনতাইকারী ও ডাকাত ,টিমে আছে সীতাকুন্ডের ফৌজদারহাটের এরশাদ
কেউ রাজনৈতিক নেতা নয়তো ছয়তলা বাড়ির মালিক ইত্যাদী তবে মূল পেশার আড়ালে ওরা ছিনতাইকারী ও ডাকাত ,টিমে আছে সীতাকুন্ডের ফৌজদারহাটের এরশাদ

ঋত্বিক নয়ন।।

পুরনো পাপী তারা। ইয়াবা সেবন করতে গিয়ে পরস্পরের মধ্যে সখ্যতা। একেকজন একেক পেশায় জড়িত। তাদের কেউ রাজনৈতিক নেতা, কেউ গাড়ির ড্রাইভার, কেউ ছয়তলা বাড়ির মালিক, আবার কেউ হোটেল বয়। তবে মূল পেশার আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে ছিনতাই ও ডাকাতি করে আসছে এ চক্রটি। পুলিশের অভিযানের মুখে অপরাধের ধরন পালটে ফেলতে সিদ্ধহস্ত তারা। বর্তমানে ব্যাংক টার্গেট করে তারা অপরাধের ছক সাজায়। ব্যাংক থেকে বের হওয়া ব্যক্তির চোখ মুখ এবং গতিবিধি দেখে তারা বুঝে নেয়, তার কাছে কত টাকা আছে। শুধু তাই নয় , টাকার বান্ডিলে কি এক হাজার টাকার নোট আছে নাকি ৫০০ টাকার তাও বলে দিতে পারে তারা না দেখেই! সপ্তাহের রোববার তারা অভিযান চালায় কোন না কোন ব্যাংকের সামনে। তাদের ভাষায় তারা বলে ‘ডিউটি’। গত ২৬ জুন শুক্রবার বিকেল থেকে রাতভর অভিযান চালিয়ে কোতোয়ালী থানা পুলিশ চক্রটির ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদকালে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য বের হয়ে আসে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলো কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর হালিরচর কালা মিয়া সওদাগরের বাড়ির মো. কামাল হোসেন (৩০), নগরীর পাঁচলাইশ থানার ৮ নম্বর শুলকবহর এলাকার মোক্তার হোসেন (২২), সাতকানিয়ার দোলার পাড়া ফজল হাজি বাড়ির সাদ্দাম (২৬), ফটিকছড়ি বিবির বাজারের দক্ষিণ ধুরং এলাকার শের আলী (৩২), আনোয়ারা হাইলধর গ্রামের সৈয়দ বাড়ির মাসুদুর রহমান (৪০) ও সীতাকুণ্ড উপজেলার ফৌজদারহাট নিচের বাজার এলাকার হোসেন মাস্টার বাড়ির মো. এরশাদ (৩৩)। তবে সাহাবুদ্দিন নামে একজন পালিয়ে যায়। তাদের কাছ থেকে একটি দেশীয় এলজি, দুই রাউন্ড কার্তুজ, ডাকাতিতে ব্যবহৃত দুটি মোটরসাইকেল ও ৫০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।

যেভাবে গ্রেপ্তার : কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন আজাদীকে জানান, গত ১৬ জুন দুপুরে ফারুক আহাম্মদ নামে এক ব্যক্তি এক্সিম ব্যাংকের সিডিএ অ্যাভিনিউ শাখা থেকে ৫ লাখ টাকা তুলে সিএনজি টেক্সি করে আগ্রাবাদ যাচ্ছিলেন। নগরীর জমিয়তুল ফালাহ মসজিদের গেটে তার সিএনজি টেক্সির গতিরোধ করে টাকা ছিনতাই করে একদল দুর্বৃত্ত। এ ঘটনায় কোতোয়ালী থানায় দায়েরকৃত মামলার তদন্তে নেমে প্রথমে মাসুদকে শনাক্ত করা হয়। তাকে কর্ণফুলী উপজেলা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যে নগরীর ওয়াসার মোড় থেকে কামাল, মোক্তার, সাদ্দাম ও এরশাদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সেখানে থাকা দুই জন পালিয়ে যায়। তাদের ধরতে ফটিকছড়ি উপজেলায় অভিযান চালানো হয়। সেখান থেকে শের আলী নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

অভিযানের মুখে অপরাধের ধরণ পালটে যায় : পুলিশী জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা জানিয়েছে, প্রথম অবস্থায় তারা সিএনজি টেক্সি আরোহীদের টার্গেট করতো। সিএনজি চালক ছিল নিজেদের লোক। নির্জন স্থানে নিয়ে গিয়ে টার্গেট করা ব্যক্তির গলায় গামছা পেঁচিয়ে কষে টান মারতো তারা। পুলিশী অভিযান শুরু হলে তারা ধরণ পরিবর্তন করে। সিএনজি টেক্সিতে টার্গেট করা ব্যক্তিকে তুলে নির্জন স্থানে নিয়ে গিয়ে সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে চলন্ত টেক্সি থেকে ফেলে দিতো। পুলিশের অভিযান টিম প্রথম অবস্থায় এ লাইনে তদন্ত করতে গিয়ে বিফল হয়। কারণ চক্রটি অপরাধের ধরণ আবারো বদলে ফেলেছে। সিএনজি টেক্সি  পরিবর্তে তারা এখন মোটর সাইকেল ব্যবহার করে ব্যাংক থেকে বের হওয়া ব্যক্তিকে টার্গেট করে অপরাধ সংঘটিত করে।

বেদি-ই টার্গেট ঠিক করে দেয় : কোতোয়ালী থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মো: কামরুজ্জামান এই প্রতিবেদককে জানান, এ চক্রের নিজস্ব সোর্স আছে। যাকে তাদের ভাষায় বেদি বলা হয়। এ চক্রের বেদি হলো শের আলী। সে ফটিকছড়ির বাসিন্দা। রাঙামাটি লাইনে গাড়ি চালায়। ফটিকছড়িতে দুটো ঘটনা ঘটিয়ে জেলও খেটেছে। সেখানে অপরাধী হিসেবে পরিচয় পেয়ে যাওয়ায় নগরীতে চলে আসে। ইয়াবা খেতে গিয়ে পরিচয় হয় এরশাদের সাথে। এরপর থেকেই এ চক্রের সদস্য হয়ে উঠে সে। ব্যাংক থেকে বের হয়ে কে কখন কোন পথে কতো টাকা নিয়ে কীভাবে যাবে, তার পুরো নকশা সে দিয়ে দিত অপরাধ চক্রের কাছে। ডাকাত দল তার ইশারা পেয়ে মোটর সাইকেল নিয়ে ধাওয়া করতো ঐ ব্যক্তিকে বহনকারী গাড়িটিকে। পুলিশের অভিযান টিমের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গত ১৬ জুন এক্সিম ব্যাংকের ঘটনাটি ঘটানোর পর দলের অন্যান্য সদস্যদের সাথে তার মনোমালিন্য হয়। কারণ ঘটনায় ৫ লাখ টাকা পাওয়া গেলেও শের আলীকে সোর্স মানি দেওয়া হয়েছে মাত্র দশ হাজার টাকা।

ঘটনার পর কিছুদিন আত্মগোপনে : গ্রেপ্তারকৃতরা পুলিশকে জানিয়েছে, প্রতিটি ঘটনা ঘটিয়ে তারা কিছুদিনের জন্য আত্মগোপনে চলে যায়। পুলিশী তৎপরতার দিকে দৃষ্টি থাকে তাদের। ঘটনাটি নিয়ে মানুষের মধ্যে কেমন প্রভাব পড়ছে তা জানার জন্য নিয়মিত পত্রিকাও পড়ে তারা। যখন মনে হয় পরিস্থিতি শান্ত হয়ে এসেছে তখন অভিযানে নামে। তবে যতো যা-ই হোক না কেন সপ্তাহের রোববার ছাড়া অন্য দিন কাজ করে না তারা।

একেকজন একেক পেশায় : দলের মধ্যে গ্রেপ্তারকৃত মাসুদুর রহমান মাসুদ প্রভাবশালী দুটো কারণে। প্রথম সে রাজনীতি করে। দক্ষিণ জেলা তাঁতী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিল সে। বর্তমানে অবশ্য পদ নেই তার। দ্বিতীয় কারণ হলো, ঘটনায় ব্যবহৃত মোটর সাইকেল সাপ্লাই দিতো সে। এ জন্য অন্যদের চাইতে সে অতিরিক্ত অর্থ পেয়ে থাকে। ১৬ জুনের ঘটনায় সে দুটি মোটর সাইকেল সরবরাহ করেছিল। তাই অতিরিক্ত এক লাখ টাকা পেয়েছিল। মাসুদ ছাড়া শের আলী রাঙামাটি লাইনে ‘চান্দের গাড়ি’ চালায়। মোক্তারের শুলকবহর এলাকায় ছয় তলা বাড়ি আছে। এরশাদ হোটেল বয়ের কাজ করে। কামাল সিএনজি টেঙি চালায়। সাদ্দাম যখন যা পায় তা-ই করে। তাদের ইয়াবার আসর বসে মূলত: মোক্তারের বাড়িতে।

জামিনে বের হয়ে পুরনো পেশায় : গ্রেপ্তারকৃতরা এই প্রথম নয়, আগেও একাধিকবার ধরা পড়েছে। কিন্তু জামিনে বের হয়ে তারা ফিরে যায় পুরনো পেশায়। তাদের গ্রেপ্তারের পর জানা গেছে, এদের বিরুদ্ধে কোতোয়ালী, চান্দগাঁও, হাটহাজারী, ফটিকছড়িসহ বিভিন্ন থানায় মামলা রয়েছে। কোতোয়ালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামরুজ্জামান বলেন, এরা পুরনো পাপী। ২০১১ সালের মামলাও পাওয়া গেছে তাদের বিরুদ্ধে। এছাড়া ২০১৫, ২০১৬, ২০১৮ সালের মামলার রেকর্ডও আছে তাদের বিরুদ্ধে। আজাদী