আশা ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রারের গোপন ভিডিও'র ফাঁদে শিক্ষার্থী! , শারীরিক সম্পর্কে বাধ্য করার অভিযোগ

আশা ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রারের গোপন ভিডিও'র ফাঁদে শিক্ষার্থী! , শারীরিক সম্পর্কে বাধ্য করার অভিযোগ
আশা ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রারের গোপন ভিডিও'র ফাঁদে শিক্ষার্থী! , শারীরিক সম্পর্কে বাধ্য করার অভিযোগ

বিশেষ প্রতিবেদক ।।

বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় আশা ইউনিভার্সিটিতে রেজিস্ট্রারের নির্দেশে বাথরুমে ছাত্রীদের গোপন ভিডিও ধারন করে ব্ল্যাকমেইল করে শারীরিক সম্পর্কে বাধ্য করার অভিযোগ ওঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়টির রেজিস্ট্রার আশরাফুল হক চৌধূরী ওরফে তানভীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে।

ভূক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী গত বছরের ২৮ অক্টোবর প্রথমে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন। তার অভিযোগ পেয়ে ডিবি পুলিশ ভিডিও ধারনকারী রেজিস্ট্রারের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএ) আমিনুলসহ রেজিষ্টার তানভীরকে ডেকে আনেন। আমিনুল ঘটনার সত্যতা সব স্বীকার করলে তানভীরকে তার মা (আশা ইউনিভার্সিটির মালিক) ভবিষ্যতে এমন কাজ করবে না মর্মে মুচলেকা দিয়ে ডিবি থেকে ছাড়িয়ে নেন। পরবর্তীতে ভূক্তভোগী ছাত্রী বাদী হয়ে ২৯ অক্টোবর মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। কিন্তু ভূক্তভোগী ছাত্রীর দাবি সেই মামলায় তানভীরকে বাদ দিয়ে শুধুমাত্র আমিনুলকে আসামি করে পুলিশ।

ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী বলেন, পারিবারিক ঝামেলার কারনে তার দুটি সেমিষ্টারে ড্রপ হয়। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৫ হাজার টাকা বকেয়া হয়। পরবর্তীতে টিউশন ফির ৭৫ হাজার টাকা জমা দিয়ে নাম নিবন্ধন করতে যাই। রেজিষ্ট্রার অফিস নানাভাবে আমাকে ঘুরাতে থাকে। একদিন রেজিষ্ট্রারের কাছে সাবজেক্টগুলো রেজিস্ট্রেশনের বিষয়ে কথা বলতে গেলে তিনি নাম নিবন্ধন করতে পারবেন না বলে জানান। তিনি (রেজিস্ট্রার) বলেন, আমার নাকি কি সমস্যা রয়েছে। এভাবে এরপর আরেকদিন গেলে রেজিষ্টারের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএ) আমিনুল ইসলাম আমাকে অফিসের বাহিরে এসে ডেকে বলেন, আপু একটু কথা বলবো নিরিবিলি জায়গায় আসেন। আমি তার কথামতো একপাশে গেলে আমাকে বলে, দেখেন আপনার নিবন্ধনের কাজটা করে দিতে পারি। তবে আপনাকে একটা কাজ করতে হবে। আমি তখন বলি কি কাজ আগে বলেন? তখন তিনি একটা অর্ধ নগ্ন ভিডিও দেখিয়ে বলে, দেখেন তো এটা আপনি না? তখন আমার মনে হলো, আমি আকাশ থেকে পরলাম। এ সময় তাকে আমি বলি, আপনি এটা কোথায় পেলেন? কিন্তু এটাতো বাথরুমের ভিডিও। এটা আপনার কাছে কিভাবে এলো? তখন তিনি বলেন, পরীক্ষার জন্য নাম নিবন্ধন করতে চাইলে রেজিষ্টার স্যারের সাথে একান্তে সময় কাটান একটু নিরিবিলি সময় ইনজয় করেন। তাহলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। না হলে এরকম অনেক ভিডিও আছে রেজিষ্ট্রার স্যারের কাছে। যদি বাহিরে কাউকে বলেন, ওসব ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হবে বলে হুমকি দেয়। এরপর আমি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ করি। অভিযোগ পেয়ে ডিবি পুলিশ আমিনুলসহ রেজিষ্টার তানভীরকে ডেকে আনেন। এ সময় ডিবি পুলিশের কাছে আমিনুল ঘটনার সত্যতা সব স্বীকার করেন। তখন তানভীর স্যারের (রেজিস্ট্রারের) মা (আশা ইউনিভার্সিটির মালিক) তানভীর স্যারকে মুচলেকা দিয়ে ডিবি থেকে ছাড়িয়ে নেন। এরপরদিন আমি ২৯ অক্টোবর মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করি। আমি এজাহারে আমিলুন ও রেজিস্ট্রারের দুজনের নামই উল্লেখ করেছি। কিন্তু কি কারনে রেজিষ্ট্রার তানভীরের নাম বাদ পড়লো তা জানি না। মামলার পর আমার গ্রামের বাড়িতে আশা এনজিও লোক পাঠিয়ে আমার পরিবারকে হুমকি দেওয়া হয়েছে। যখন দেখছে কোন হুমকি দিয়ে কাজ হচ্ছে না। তখন তারা আমাকে মামলাটি সমোঝতার জন্য তাদের এনজিওসহ তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্নভাবে চাকরির প্রলোভন দেখাচ্ছে। যেখানে আমার সার্টিফিকেট নিয়ে টালবাহানা করছে। আমি এখন আমার ফলাফল নিয়ে সংশয়ে রয়েছি। সেখানে চাকরির নামে হুমকি ছাড়া কিছু মনে করছি না আমি। তারা আমার গ্রামের বাড়িতে তাদের এনজিও এর লোক পাঠিয়ে হুমকি দিয়ে দেখালো যে, আমার গ্রামের বাড়ি পর্যন্ত তারা আসতে পেরেছে। প্রয়োজনে যে কোন সময় আমার ক্ষতি করতে পারে।

শিক্ষার্থী অভিযোগ করে আরো বলেন, আশা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাউন্ডার মরহুম শফিকুল ইসলামের (মালিক) ছেলে আশরাফুল হক চৌধুরী ওরফে তানভীর চৌধুরী। অর্থাৎ ওনি এখন একজন মালিক আবার তিনিই রেজিষ্টার। তার প্রভাব ও ক্ষমতার কারনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেনি। এ ঘটনার পর পারিবারিক ঝামেলায় আমি শ্বশুড়বাড়িতে চলে আসি। এরপর আমাকে আশা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ডেকেছিল। তখন বলা হয় আমি যেন কাউকে সাথে নিয়ে না আসি। কিন্তু আমি একা গিয়ে তাদের সাথে কথা বলতে নিরাপত্তার অভাব বোধ করায় আমি সেখানে যাইনি। এরপর পরিচিত এক স্যারকে আমার সাবজেক্টগুলো নিবন্ধনের বিষয়ে জানালে তিনি আমার সেমিষ্টার, নাম রোল সব জানিয়ে দিয়ে বলেন, আমি পারবো না। ওরা সব জায়গায় সমস্যা তৈরি করে রেখেছে। এখন হয়তো আমার রেজাল্টেও সমস্যা করবে বলে মনে হচ্ছে।

মামলার এজাহারে জানা যায়, মামলার পর পুলিশ ভিডিও ধারণ করা একটি ওয়ালটন প্রিমিও মোবাইল ফোন, দুইটি সিম, একটি মেমোরি কার্ড ও নগ্ন ভিডিও উদ্ধার করে। যা নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

আশা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রেজিষ্টারের এরকম অনৈতিক চরিত্র সকলের জানা আছে। এরপরেও কেউ মুখ খুলেন না। কারন তিনি একাধারে মালিক এবং রেজিষ্টার। তার আঙ্গুলের ইশারায় সবকিছু চলে। তিনি অনেক নারী শিক্ষার্থীর জীবন নষ্ট করে দিয়েছেন। ফলাফল আটকে রেখে অনৈতিক প্রস্তাব দিয়েছেন। তার লালসার শিকার অনেক ছাত্রী লোক লজ্জার ভয়ে আইনী ব্যবস্থা নেননি। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এসব জানার পরও কোনো দিন ব্যবস্থা নেয়নি।

অন্যদিকে ডিবি পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আমিনুল ইসলাম বিস্তারিত বর্ণনা করে বলেন, তিনি রেজিষ্টারের কথা মত এবং প্রতি ভিডিও বাবদ দুই থেকে তিন’শ টাকার বিনিময়ে এরকম কাজ করেছেন। একই সাথে তিনি এরকম ভূল কাজ আর কোনো দিন করবেন না বলে লিখিত দিয়ে আসেন। তিনি জানান, রেজিষ্টার স্যার বলতেন, চাকরি করতে হলে এরকম দু চারটা ভিডিও করতে হবে।

মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার এন্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের উপ পরিদর্শক (এসআই) মো. ছানোয়ার হোসেন বলেন, বর্তমানে মামলাটি ডিবি তদন্ত করছে। মামলায় যদিও রেজিষ্টারের নাম আসেনি। তবে সিআইডির ফরেনসিক প্রতিবেদন পেলে বোঝা যাবে রেজিষ্টার আসামি হবেন কিনা। 

খালেদ / পোস্টকার্ড ;