পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হতে সময় লাগবে আরো দেড় বছর

রফিকুল ইসলাম সবুজ ।।

পদ্মা সেতুর কাজ শেষ  হতে সময় লাগবে আরো দেড় বছর
আর মাত্র দেড় বছর পর পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হবে

পদ্মা সেতুর নির্মাণ প্রকল্পের মেয়াদ আরও দেড় বছর বাড়িয়ে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত করা হচ্ছে।সেতুর কাজ চলতি বছরের ডিসেম্বরে শেষ হচ্ছে না। আর বিদেশি ঠিকাদার ও পরামর্শক কাজের ভ্যাট ও আয়কর বৃদ্ধির কারণে প্রকল্পের খরচ বাড়ছে আরও প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। পদ্মা সেতু প্রকল্প কার্যালয়ের পক্ষ থেকে সম্প্রতি খরচ বাড়ানো সংক্রান্ত প্রস্তাব সেতু বিভাগে পাঠানো হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। এ নিয়ে চতুর্থবার পদ্মা সেতু প্রকল্পের ব্যয় বাড়ছে। তবে প্রকল্পের ব্যয় বাড়লেও মূল সেতু নির্মাণে ব্যয় বাড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন সেতু বিভাগের সিনিয়র সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
পদ্মা সেতু নির্মাণে প্রথমে মোট ব্যয় ধরা হয় ১০ হাজার ১৬১ কোটি টাকা। এরপর ব্যয় বেড়ে হয় ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৮ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। বর্তমান অনুমোদিত ব্যয় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৮ লাখ ৭৬ হাজার টাকা।

সেতুর মূল নির্মাতা প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ। নদীশাসন করছে সিনোহাইড্রো করপোরেশন। এ ছাড়া দেশি-বিদেশি বেশ কয়েকটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান যুক্ত নির্মাণকাজে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাজেটে ঠিকাদারের ভ্যাট ও আয়কর ৪ শতাংশ বেড়েছে। বিদেশি পরামর্শকদের ভ্যাট ও কর বেড়েছে ১০ শতাংশ। দেশীয় পরামর্শকদের ভ্যাট ও কর বেড়েছে ২ শতাংশ। এই তিন খাতে ভ্যাট ও কর বাবদ ব্যয় বৃদ্ধির পরিমাণ ৬৮৬ কোটি টাকা। চুক্তির অতিরিক্ত কাজ করার দাবিতে ইতোমধ্যে মূল সেতু ও নদীশাসনের ঠিকাদার প্রায় ১৬০ কোটি টাকার বাড়তি বিল দাবি করেছে। এ ছাড়া জাজিরা প্রান্তে ফেরিঘাট সরাতে প্রায় ২০০ কোটি টাকা লাগতে পারে। তাই সব মিলিয়ে প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধির পরিমাণ প্রায় এক হাজার কোটি টাকা হতে পারে বলে সূত্র জানিয়েছে।
নিজস্ব অর্থায়নে প্রতিটি ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যরে মোট ৪১টি স্প্যান ৪২টি পিয়ারের ওপর বসিয়ে তৈরি হচ্ছে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু। মূল সেতুর সবকটি পাইল ড্রাইভিংয়ের কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। মূল সেতুর ৪২টি পিয়ারের মধ্যে ৩১টির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি ১১টির কাজ চলমান আছে যা আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করছে কর্তৃপক্ষ। সেতুর সংযোগ সড়কপথের জন্য মোট দুই হাজার ৯১৭টি প্রি-কাস্ট রোডওয়ে ডেকস্ল্যাবের প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে এক হাজার ২৬৯টি স্ল্যাব তৈরির কাজ শেষ হয়েছে এবং বাকি স্ল্যাব  তৈরির কাজ চলমান রয়েছে। দ্বিতল এই সেতুতে থাকছে রেল চলাচলের ব্যবস্থা। রেললাইনের জন্য মোট ২ হাজার ৯৫৯টি প্রি-কাস্টস্ল্যাবের প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে ২ হাজার ৭৫৪টি স্ল্যাব তৈরির কাজ শেষ হয়েছে এবং বাকি স্ল্যাব  তৈরির কাজ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষকে ২৯ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে সরকার। এ ঋণ ৩৫ বছরে শোধ করবে সেতু কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার সকালে সচিবালয়ে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পে সরকার প্রদত্ত ঋণ পরিশোধের বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় ও সেতু কর্তৃপক্ষের মধ্যে ঋণচুক্তি স্বাক্ষর হয়। ঋণের শর্ত অনুযায়ী ২০২১-২০২২ অর্থবছর থেকে বাংলাদেশ সরকারকে ঋণ পরিশোধ শুরু করবে সেতু কর্তৃপক্ষ। ৩৫ বছর মেয়াদে এ ঋণ পরিশোধে সুদহার হবে ১ শতাংশ। ঋণ পরিশোধের শিডিউল অনুযায়ী, প্রতিবছর ৮২৬ কোটি টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে। সেতু কর্তৃপক্ষের পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) মো. মনিরুজ্জামান এবং অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. এখলাছুর রহমান চুক্তিতে সই করেন। পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের পর প্রাপ্ত আয় থেকে পর্যায়ক্রমে সেতু কর্তৃপক্ষ সরকারকে সুদাসলসহ অর্থ ফেরত দেবে। মূল সেতু কাজের চুক্তিমূল্য ১২ হাজার ১৩৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা এবং এ পর্যন্ত ৮ হাজার ৭৩২ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন পদ্মা সেতু ২০২১ সালের জুনের মধ্যে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ২০২০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে আশাবাদী। এরপর চালু করতে করতে হয়তো আরও ৩ থেকে ৪ মাস সময় লাগবে। সর্বশেষ ২০২১ সালের জুনের মধ্যে পদ্মা সেতুতে যানবাহন চলাচল করবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন আমরা এ প্রত্যাশাই করছি। সেতুমন্ত্রী জানান, মূল সেতুর বাস্তব কাজের অগ্রগতি ৮৩ শতাংশ, আর্থিক অগ্রগতি ৭২ শতাংশ। পদ্মা সেতু প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৭৩ শতাংশ জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, সংযোগ সড়কের কাজ শেষ হয়েছে। মাওয়া অংশে এ পর্যন্ত ট্রাস (স্প্যান) এসেছে ২৭টি, এর মধ্যে ১৪টি স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া অবশিষ্ট স্প্যানগুলোর কাজ চীনে প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এ ছাড়া নদীশাসন কাজের বাস্তব অগ্রগতি ৬২ শতাংশ।
পদ্মা সেতুতে ব্যয় বাড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই জানিয়ে সেতু বিভাগের সিনিয়র সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, আমরা প্রজেক্টের প্রায় শেষ পর্যায়ে, এখন পর্যন্ত যে মূল সেতুর ব্যয় ১২ হাজার ১০০ কোটি টাকা, এটা বাড়ার কোনো ইঙ্গিত আমরা পাচ্ছি না। নদীশাসনেও ৮ হাজার ৭০০ কোটি টাকার বেশি হবে না বলে জানান সচিব। তিনি বলেন, যেহেতু জমির দাম তিনগুণ হয়ে গেছে, আর কিছু কিছু ট্যাক্স বৃদ্ধি হয়েছে। যেগুলোকে চার্জ এক্সপেনডিচার বলে। প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি হয়েছে সেই কারণে ।