আজ মহান বিজয় দিবস

আজ মহান বিজয় দিবস

পোস্টকার্ড ডেস্ক।। ​​​​​​ 

১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস। বাঙালি জাতির হাজার বছরের শৌর্যবীর্য এবং বীরত্বের এক অবিস্মরণীয় দিন। বীরের জাতি হিসেবে পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন ভূখণ্ডের নাম জানান দেওয়ার দিন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ৯ মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের এই দিনে বিকালে রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে) হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। বিশে^র মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের। এ বছর উদযাপিত হচ্ছে বিজয়ের ৪৯তম বার্ষিকী। আগামী ২৬ মার্চ থেকে শুরু হবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। বিজয়ের ৫০ বছরে দাঁড়িয়ে আজকের বাংলাদেশ মাথাপিছু আয় ও গড় আয়ুসহ বিভিন্ন সূচকে প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তান থেকে অনেক এগিয়ে। বিজয়ের অদম্য অগ্রযাত্রায় এ যেন এক বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। এবারে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যেও যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস-২০২০ উদযাপনের লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। করোনার কারণে এ বছর বিজয় দিবস কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হবে না। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে প্রত্যুষে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে। এরপর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে উপস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। দিনটি সরকারি ছুটির দিন। সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে এবং গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনাসমূহ আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হবে। ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপসমূহ জাতীয় পতাকা ও অন্যান্য পতাকায় সাজানো হবে। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বাণী দিয়েছেন। দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে সংবাদপত্রসমূহ বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করছে। এ উপলক্ষে ইলেকট্রনিক মিডিয়াসমূহ মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা প্রচার করবে। এ ছাড়াও বিজয় দিবস উপলক্ষে ভার্চুয়াালি ‘জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ ও ডিজিটাল প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে জাতীয় সমৃদ্ধি অর্জন’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। মহামুক্তির আনন্দের এই দিনে এক নতুন উল্লাস জাতির প্রাণসঞ্চার করে সজীবতা এনে দেয়। যুগ যুগ ধরে শোষিত বঞ্চিত বাঙালি চোখে আনন্দ অশ্রু আর ইস্পাত কঠিন দৃঢ়তা নিয়ে এগিয়ে যায় সামনে। বিন্দু বিন্দু স্বপ্নের অবশেষে মিলিত হয় জীবনের মোহনায়। বাঙালি যেন খুঁজে পায় তার আপন সত্তাকে। আদি বাঙালির সাংস্কৃতিক ও আর্থ-সামাজিক জীবন এবং ক্রমবিকাশের চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে বাঙালির শৌর্য-বীর্য যেন আর একবার দপ করে জ্বলে ওঠে। প্রথম আগুন জ্বলে ’৫২-এর একুশে ফেব্রুয়ারি। ভাষার জন্য প্রথম বলিদান বিশ^বাসী অবাক বিস্ময়ে লক্ষ করে। পাকিস্তানিদের সঙ্গে হিসাব-নিকাশের হালখাতার শুরুতেই রক্তের আঁচড় দিয়ে বাঙালি শুরু করে তার অস্তিত্বের লড়াই। ’৫২-তে জ্বলে ওঠা আগুন ছড়িয়ে পড়ে সবখানে। অবশেষে নিকষ কালো আঁধার থেকে জেগে ওঠে হিরন্ময় হাতিয়ার। ৭ মার্চ একাত্তরের বিশাল জনসমুদ্র থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা দেন ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। রক্ত যখন দিয়েছি তখন আরও দেব, তবু এদেশকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাল্লাহ।’ এই একটি মাত্র উচ্চারণে বাঙালি সত্যিকার দিকনির্দেশনা পেয়ে যায়। নিতে থাকে চূড়ান্ত লড়াইয়ের প্রস্তুতি। অন্য দিকে ওঁৎ পেতে থাকে মানুষরূপী পাকিস্তানি হায়েনারাও। পুরো জাতিকে স্তব্ধ করার লক্ষ্যে মারাত্মক মারণাস্ত্র নিয়ে ২৫ মার্চ ঘুমন্ত জাতির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তারা। শুরু হয় বাঙালি নিধন যজ্ঞ। মুক্তিপাগল বাংলার দামাল ছেলেরাও স্বাধীনতার রক্ত সূর্যকে ছিনিয়ে আনবে বলে অস্ত্র কাঁধে তুলে নেয়। ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, কৃষক, শ্রমিক সবাই শরিক হয় এ লড়াইয়ে। অবশেষে ৯ মাসের দুঃস্বপ্নের অবসান ঘটিয়ে বাঙালি জাতির জীবনে আসে নতুন প্রভাত। এ বিজয়ের মধ্য দিয়ে আসে হাজার বছরের কাক্সিক্ষত স্বাধীনতা। ১৬ ডিসেম্বর সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সূচিত হয় মুক্তিযুদ্ধের অনিবার্য বিজয়। বাঙালি জাতি এদিন অর্জন করে তার ভাগ্য নিয়ন্ত্রণের অধিকার। ত্রিশ লাখ শহীদের রক্ত আর লাখ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে বিজয়ের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা ধরা দেয় বাঙালির জীবনে।

আওয়ামী লীগের কর্মসূচি : মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- সূর্যোদয়ের মুহূর্তে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে, বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী সংগঠনের কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল ৯টায় সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন। ১০টায় ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে রক্ষিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন। সকাল সাড়ে ৯টায় টুঙ্গিপাড়ায় চিরনিদ্রায় শায়িত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, জিয়ারত, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল। এদিকে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভা বেলা ৩টায় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হবে। আলোচনা সভায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বক্তব্য রাখবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জাতীয় পার্টি : জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের সকাল ৭টায় জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুস্পস্তবক অর্পণ করবেন। বেলা ১১টায় পার্টির চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয় মিলনায়তনে জাতীয় সাংস্কৃতিক পার্টি আয়োজিত আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। বেলা ৩টায় একই স্থানে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা পার্টির আয়োজনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।

বিএনপি : আজ ভোরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। সকাল সাড়ে ৮টায় সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে দলের উদ্যোগে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হবে। সেখান থেকে ফিরে শেরেবাংলা নগরে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবে। বেলা সাড়ে ৩টায় অনুষ্ঠিত হবে ভার্চুয়াল আলোচনা সভা।