আজ বিভীষিকাময় ২১ আগস্ট ,তারেকের রেড অ্যালার্ট স্থগিত!

কায়কোবাদের নামও স্থগিতের তালিকায় আছে

আজ বিভীষিকাময় ২১ আগস্ট ,তারেকের রেড  অ্যালার্ট স্থগিত!

আলমগীর হোসেন ।।

ইতিহাসের বিভীষিকাময় একুশ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদÐপ্রাপ্ত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও বিএনপির সাবেক এমপি শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থায় (ইন্টারপোল) রেড অ্যালার্ট জারি হয়েছিল। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই ইন্টারপোলের রুলস এবং ‘আন্তর্জাতিক লবিং’ কাজে লাগিয়ে সে রেড অ্যালার্ট স্থগিত করিয়ে নেন তারা!

তবে এ গ্রেনেড হামলার ঘটনায় বর্তমানে ইন্টারপোলের ‘রেড অ্যালার্ট ওয়ান্টেড পারসন্স’ তালিকায় ঝুলছেÑ সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব যাবজ্জীবন কারাদÐপ্রাপ্ত হারিছ চৌধুরী, রাতুল আহমেদ বাবু ওরফে বাবু রাতুল ও মৃত্যুদÐপ্রাপ্ত বিএনপি নেতা ও হানিফ বাসের মালিক মোহাম্মদ হানিফ ও জঙ্গি নেতা মাওলানা  তাজউদ্দিনের নাম ও ছবি। বাকি পলাতক আরও ১০ জন সাজাপ্রাপ্ত আসামির নামেও ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইন্টারপোলের সহায়তায় পলাতক সব আসামিকে দেশে ফিরিয়ে আনতে নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ।

২০০৪ সালে ২১ আগস্ট রাজধানীর গুলিস্তানে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন নিহত এবং তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আহত হন তিন শতাধিক নেতাকর্মী। বীভৎস এ হামলা মামলায় মোট ৪৯ জন আসামি ছিলেন। যাদের মধ্যে ১৯ জনকে যাবজ্জীবন এবং ১৯ জনকে মৃত্যুদÐ দেওয়া হয়েছে। বাকিদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদÐ দেন আদালত। আসামিদের মধ্যে লুৎফুজ্জামান বাবর এবং আব্দুস সালাম পিন্টুসহ ৩১ জন বর্তমানে কারাগারে আছেন। এ ছাড়া তারেক রহমান এবং হারিছ চৌধুরীসহ ১৮ জনকে মামলার নথিতে পলাতক দেখানো হয়। যদিও বর্তমানে ১৬ জন পলাতক বলে জানিয়েছে পুলিশ সদর দফতর। সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে যুদ্ধাপরাধী আলী আহসান মোহাম্মদ মোজাহিদ ও জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নানসহ তিনজনের অন্য মামলায় ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় গ্রেনেড হামলা মামলা থেকে তাদের বাদ দেওয়া হয়েছে। পলাতকরা বর্তমানে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে আত্মগোপনে বা নানা কৌশলে অবস্থান করছে। তবে এসব পলাতক আসামিকে দ্রæত দেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকরের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ সরকার তথা সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো।

পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) মো. সোহেল রানা জানান, একুশ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ৪৯ আসামির মধ্যে ৩৩ জনকে এ পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছে। বর্তমানে ১৬ আসামি বিভিন্ন দেশে পলাতক আছে। পলাতকদের দেশে ফিরিয়ে আনতে ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। এ বিষয়ে কার্যক্রম চলছে।

ইন্টারপোলের বাংলাদেশ সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (এনসিবি) মহিউল আলম জানান, একুশ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় ইতোমধ্যেই মোট ছয় আসামির বিষয়ে রেড অ্যালার্ট জারি করেছিল ইন্টারপোল। তারা হলোÑ তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরী, শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, মাওলানা তাজউদ্দিন, মোহাম্মদ হানিফ ও রাতুল আহমেদ বাবু। তবে কিছুদিন আগে তারেক রহমান ও কায়কোবাদের বিরুদ্ধে জারিকৃত রেড অ্যালার্ট স্থগিত করেছে ইন্টারপোল। বাকি চার জনের নামে এখনও রেড অ্যালার্ট জারি রয়েছে। এ ছাড়া গ্রেনেড হামলা মামলার পলাতক আরও ১০ জন আসামির বিষয়েও রেড অ্যালার্ট জারির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করা হচ্ছে। এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী সংস্থা সিআইডির সহায়তা নিয়ে দ্রæতই সেটি সম্পন্ন করা হবে।

তারেক  রহমান ও কায়কোবাদের রেড অ্যালার্ট স্থগিত প্রসঙ্গে এআইজি মহিউল আলম বলেন, ইন্টারপোলের রুলস এবং বিভিন্ন লবিং কাজে লাগিয়ে তারা এ সুযোগ নিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে পুনরায় ইন্টারপোলে যোগাযোগ করেছি, তারা (ইন্টারপোল) যেসব প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চেয়েছে সেগুলো দ্রæতই সরবরাহ করা হবে বলে জানান তিনি।

দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ইন্টারপোলে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে রেড অ্যালার্ট বা লাল নোটিস জারি হয় ২০১৫ সালের ১৩ এপ্রিল। একই বছরের ১২ নভেম্বর জারি হয় কায়কোবাদ ও হারিছ চৌধুরীর বিরুদ্ধে। এ ছাড়া তাজউদ্দিনের বিরুদ্ধে রেড অ্যালার্ট জারি হয় ২০০৮ সালের ৫ ফেব্রæয়ারি, ২০১৭ সালে রাতুলের নামে এবং পরের বছরে মোহাম্মদ হানিফের বিরুদ্ধে নোটিস জারি করে ইন্টারপোল।

বৃহস্পতিবার ইন্টারপোলের ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছেÑ ইন্টারপোলের রেড নোটিসের ‘ওয়ান্টেড পারসন্স’ শাখায় হারিছ চৌধুরী, মাওলানা তাজউদ্দিন ও মোহাম্মদ হানিফের ছবি, নাম ও জাতীয়তা (বাংলাদেশি) উল্লেখ ছিল। তবে রাতুলের নামসহ অন্যান্য তথ্য থাকলেও ছবি ছিল না।

সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামিরা কে কোথায় : পলাতক ১৬ আসামির মধ্যে তারেকসহ কয়েকজনের স্পষ্ট অবস্থান জানা গেলেও বেশির ভাগেরই নিশ্চিত অবস্থান শনাক্ত করা যায়নি। তবে অধিকাংশের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য অবস্থান জানা গেছে বলে দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

পলাতকদের মধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রায় এক যুগ ধরে সপরিবারে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে অবস্থান করছে। গ্রেনেড হামলা মামলায় তাকে যাবজ্জীবন কারাদÐ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগপত্রে তাকে ‘পলাতক’ হিসেবে দেখানো হয়েছে। এ ছাড়া অর্থ পাচার এবং দুর্নীতির মামলাতেও এরই মধ্যে তার সাজা ঘোষণা হয়েছে। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত অন্য আসামি হারিছ চৌধুরী, যে বিএনপি সরকারের সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব ছিল। তৎকালীন বিএনপি সরকারের প্রভাবশালী হারিছ চৌধুরী ২০০৭ সালে সেনা-সমর্থিত তত্ত¡াবধায়ক সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। বর্তমানে তার অবস্থান সম্পর্কে কেউ নিশ্চিত না হলেও যুক্তরাষ্ট্র্র ও যুক্তরাজ্যসহ একাধিক দেশে আসা-যাওয়া রয়েছে বলে জানিয়েছেন তদন্তসংশ্লিষ্টরা। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আরেক আসামি কুমিল্লার মুরাদনগরের সাবেক বিএনপির সংসদ সদস্য শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ সৌদি আরবে পালিয়ে আছে বলে জানা যায়।

অন্যদিকে গ্রেনেড হামলা মামলায় ফাঁসির দÐপ্রাপ্ত জঙ্গি নেতা মাওলানা তাজউদ্দিন বিএনপি সরকারের সময়ের শিক্ষা উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুর ভাই। গ্রেনেড হামলার পর তাকে ভুয়া পাসপোর্টের মাধ্যমে বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বর্তমানে সে দক্ষিণ আফ্রিকায় আছে বলে জানা যায়। মৃত্যুদÐপ্রাপ্ত অন্য বিএনপি নেতা ও হানিফ এন্টারপ্রাইজের মালিক মোহাম্মদ হানিফ দুবাই বা যুক্তরাজ্যে পালিয়ে আছে বলে ধারণা করা হয়। এ ছাড়া সাজাপ্রাপ্ত সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এটিএম আমিন বর্তমানে আমেরিকায় আছে বলে জানা গেছে। বিএনপি সরকারের সময় সে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার (ডিজিএফআই) দ্বিতীয় শীর্ষ ব্যক্তি ছিল। পরবর্তী সময়ে সেনা-সমর্থিত তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সময় সে ডিজিএফআইয়ের প্রধান হয়েছিল। সে সরকারের মেয়াদ শেষ হলে সে আমেরিকায় চলে যায়। অন্য সাজাপ্রাপ্ত লে. কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম বর্তমানে কানাডায় অবস্থান করছে বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়েছে। এর বাইরে মৃত্যুদÐপ্রাপ্ত আসামি আবদুল মাজেদ ভাট ওরফে মো. ইউসুফ ভাটসহ একাধিক আসামির অবস্থান নিশ্চিত হওয়া যায়নি। অন্যদিকে যাবজ্জীবন দÐপ্রাপ্তদের মধ্যে মহিবুল মোত্তাকিন ওরফে মুত্তাকিন, মুরছালিন, মাওলানা লিটন ও রাতুল বাবুসহ একাধিক আসামির অবস্থান এখনও অস্পষ্ট বলে জানা যায়।