১৭ মার্চ থেকে শুরু হওয়া বছরব্যাপী মুজিব বর্ষের নানা আয়োজন

১৭ মার্চ থেকে শুরু হওয়া বছরব্যাপী মুজিব বর্ষের নানা আয়োজন

শাহনেওয়াজ।।

১৭ মার্চ জাতির পিতার জন্ম দিন । আর মাত্র ১৫ দিন। এরপরই শুরু হচ্ছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের জন্মশত বার্র্ষিকী । এই দিন থেকে মুজিব বর্ষের শুভ যাত্রা। এদিন কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ৩১ বার তোপধ্বনি। সকল সরকারি-বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন। দেশব্যাপী বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষনের হলোগ্রাফিক প্রজেকশন। টুঙ্গিপাড়ায় জাতীয় শিশু দিবসের অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকছে। ১৭ মার্চে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান হবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। বিকালে অনুষ্ঠেয় এই অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ছাড়াও বেশ কয়েকটি দেশের  সরকার প্রধান উপস্থিত থাকবেন বলে আভাস পাওয়া গেছে। এই অনুষ্ঠানে অন্তর্ভুক্ত থাকছে দেশি-বিদেশি শিল্পীদের সমন্বয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর ওপর নির্মিত বিভিন্ন প্রামাণ্যচিত্র ও ডকুমেন্টেশন দেখানো হবে। পুরো দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পোস্টার, ফেস্টুন, ব্যানার থাকবে। আরও থাকবে রাতে আলোকসজ্জা। এই আলোকসজ্জা সড়ক দ্বীপ থেকে শুরু করে একেবারে ফ্লাইওভার পর্যন্ত। এর পাশাপাশি এই দিনে মসজিদ, মন্দির, গির্জাসহ সকল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে মোনাজাত ও প্রার্থনার আয়োজন করা হবে। জেলা থেকে উপজেলা পর্যন্ত প্যারেড, প্রদশনী ও শিশু কিশোর সমাবেশের আয়োজন থাকবে। একই সঙ্গে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উৎসব মুখর পরিবেশে বিভিন্ন অনুষ্ঠান থাকছে। এই দিনটি ঘিরে কুইজ প্রতিযোগিতা, বির্তক প্রতিযোগিতাসহ কবিতা ও আনন্দ ভোজের আয়োজন থাকছে।

১৮ মার্চ জাতীয় সংসদের বিশেষ অধিবেশন। এই অধিবেশনে বিদেশি আমন্ত্রিত অতিথিরা অংশ গ্রহণের কথা রয়েছে।

২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস পালন করা হবে। ২৬ মার্চ যথারীতি মহান স্বাধীনতা দিবস পালন করা হবে। একই সঙ্গে জাতীয় দিবস পালন করা হবে। তবে এবারের এই দিবসটি অন্য মাত্রায় রূপ নেবে বলে আভাস পাওয়া গেছে।

১৭ এপ্রিল মুজিব নগর দিবস। মেহেরপুর জেলায় বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকছে। এই মাসে সুপ্রিমকোর্টে বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকীর অনুষ্ঠান করবে বলে জানা গেছে।

২৩ মে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তি দিবস উদযাপন করা হবে। জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় এই দিবসটি দেশি-বিদেশি অতিথিদের সমন্বয়ে পালন করা হবে।

৭ জুন ছয়দফা দিবসটি পালনের বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকছে। এই দিনে সেমিনার ও আলোচনা সভা অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে।

২৩ জুন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এই দিবসটি পালনের আয়োজন করা হতে পারে। কিংবা রোজ গার্ডেনে।

৮ আগস্ট বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিবের জন্মদিন পালন করা হবে।

১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস। জাতীয় পর্যায়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকছে। ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধু বাংলায় ভাষণ প্রদানের গুরুত্ব প্রদানের তাৎপর্য বিষয়ক আলোচনা থাকছে। এটি নিউইয়র্কেও হতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে।

প্রতি বছরের মতো যথারীতি ৩ নভেম্বর জেল হত্যা দিবস, ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস, বিজয় দিবস উদযাপন করা হবে। একই সঙ্গে ২০২১ সালে ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাবর্তন দিবস পালন করা হবে। তবে ২০২১ সালের শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ‘ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর অবদান ও ভূমিকা’ নিয়ে বিশেষ আলোচনার আয়োজন করা হবে।

২০২১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারিতে জাতির পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দেওয়া হবে। আর এই অনুষ্ঠানটি হবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। এর পাশাপাশি সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে।

৭ মার্চে সাত দিনব্যাপী সারা দেশে অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকবে বলে আভাস পাওয়া গেছে। এই দিনে আর্মি স্টেডিয়ামে জয়বাংলা কনসাটের আয়োজন থাকছে। একই সঙ্গে এ সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে একটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রবর্তন করা হবে।

মুজিব বর্ষে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড হিসেবে অন্তর্ভুক্তিকরণের বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে। একই সঙ্গেম লাখ লাখ হাতে মানব প্রতিকৃতি তৈরি করা হবে। মুজিব বর্ষের সমাপনী অনুষ্ঠানটিও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কিংবা সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় হবে।

অন্যান্য বিশেষ কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে বাংলা ও ইংরেজিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব জন্মশতবার্ষিকী স্মারক গ্রন্থ প্রকাশ, কফি টেবিল বই প্রকাশ, বায়োগ্রাফি প্রকাশ, অনুবাদ গ্রন্থ প্রকাশ, বঙ্গবন্ধুর নির্বাচিত ভাষণ, যেখানে ইংরেজি ছাড়াও ১২টি ভাষায় অনুবাদ করা হবে, মুজিব গ্রাফিক নভেলের এনিমেটেড ভার্সন প্রকাশ, বঙ্গবন্ধুর জীবনিভিত্তিক অ্যালবাম প্রকাশ, বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মভিত্তিক ১০০টি প্রকাশনা, ইউনেস্কোতে বঙ্গবন্ধুর নামে পুরস্কার প্রবর্তন, ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন ও বিশ^ভারতী বিশ^বিদ্যালয়সহ আরও পাঁচটি বঙ্গবন্ধু চেয়ার স্থাপনের উদ্যোগ, ইউনিভার্সিটি অব ক্যামব্রিজে বঙ্গবন্ধু সেন্টার স্থাপন, লন্ডনে মাদাম তুসো জাদুঘর ও জাতিসংঘ সদর দফতরে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন, বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন, নিউইয়কে মুজিব ফেলোশিপ অ্যান্ড ইন্টারশিফ প্রোগ্রাম চালু। এ ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের আলোচনা সভা, সেমিনারের আয়োজন থাকছে।

সবচেয়ে নতুন মাত্রা তৈরি হবে পৃথিবীর সকল দেশে ১০০টি করে গাছের চারা রোপণ করা হবে। আগামী বইমেলা (২০২১ সাল) উৎসর্গ করা হবে বঙ্গবন্ধুকে। একই সঙ্গে ঢাকা লিটারারি ফেস্টিভ্যাল উৎসর্গ করা হবে বঙ্গবন্ধুকে। বঙ্গবন্ধুর ওপর ১২টি প্রামাণ্য চিত্র, ২৪টি খণ্ড ভিডিও চিত্র, ১২টি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র, বঙ্গবন্ধুর নামে একটি আর্কাইভ স্থাপন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্তর্জাতিক গোল্ডকাপ ফুটবল, আন্তর্জাতিক সাফ ফুটবল চ্যাপি¥য়ন শিপ, ২টি আন্তর্জাতিক টি ২০ ক্রিকেট ম্যাচ, বিশ^ কাবাডি প্রতিযোগিতা, জাতীয় স্কুল কাবাডি, স্মারক ডাক টিকেট প্রকাশ, স্বাধীনতা ঘোষণার প্রস্তর ভাস্কর্য নির্মাণ, বিনামূল্যে চিকিৎসা, হালদা নদীকে বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ ঘোষণা, পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু চত্বর স্থাপন, প্রতিডোগিতার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু স্কলার নির্বাচনসহ আরও অনেক কর্মসূচি থাকছে বলে জানা গেছে।