সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে সমাজে অস্থিরতা ছড়ালেই ব্যবস্থা , ২য় ধাপে প্রথম সারির অনলাইনগুলোর অনুমোদন: তথ্যমন্ত্রী

সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে সমাজে অস্থিরতা ছড়ালেই ব্যবস্থা , ২য় ধাপে প্রথম সারির অনলাইনগুলোর অনুমোদন: তথ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক।।

তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব বা অন্য সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে সমাজে অস্থিরতা ছড়ালে প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সঙ্গে গণমাধ্যমের স্বার্থে এগুলোকে ট্যাক্সেসনের আওতায় আনতে প্রয়োজন হলে আলোচনা করে নতুন আইন করা হবে বলেও জানান তিনি। বুধবার সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ঈদ পুনর্মিলনী সভায় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী এ কথা বলেন।

এ সময় মন্ত্রী বলেন, তদন্তসাপেক্ষে দ্বিতীয় ধাপে দেশের প্রথম সারির অনলাইনগুলোকে অনুমোদন দেওয়া হবে। যারা ভালো, যাদের বিষয়ে তদন্ত সংস্থা থেকে পজিটিভ রিপোর্ট আসবে, তারা সবাই নিবন্ধনের সুযোগ পাবে। এ নিয়ে উদ্বেগের কোনো কারণ নেই।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ইউরোপে ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব বা অন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ব্যবহার করে সমাজে অস্থিতরতা তৈরি, ফেক নিউজ করা, কারও চরিত্র হনন করলে এ ধরনের সার্ভিস প্রোভাইডারদের জরিমানা করার বিধান রয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের দেশের বিদ্যমান আইনে আমরা জরিমানা করতে পারি। প্রয়োজনে সে পদক্ষেপ নেব। আমরা আলাপ-আলোচনা করছি, প্রয়োজন হলে নতুন আইন করা হবে। তবে প্রচলিত আইনেই যারা সার্ভিস প্রোভাইডার হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যবসা করে নিয়ে যাবেন আর ডোমেইন ব্যবহার করে যা ইচ্ছা তা করবেন সেটার জবাবদিহিতা থাকবে না, সেটা তো হতে পারে না। পাশাপাশি সমাজে রাষ্ট্রের অস্থিরতা তৈরি করবে, একে অন্যের চরিত্র হনন করবে এবং তরুণ সমাজকে বিপথে পরিচালিত করবে। এজন্য যে ডোমেইন বা সার্ভিস দিচ্ছে তাদের দায় রয়েছে। সেজন্য প্রয়োজনে তাদেরও জরিমানা করা হবে।

টিকটক ও লাইকি নিয়ে সমাজে যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে সে বিষয়ে সরকার কী করছে জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিষয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি করে দিয়েছি। এগুলো কীভাবে আমাদের দেশে পরিচালিত হওয়া প্রয়োজন, কীভাবে ট্যাক্সেসনের আওতায় আনা যায়, আমাদের দেশের আইন-কানুন-সংস্কৃতি এগুলো যাতে মেনে চলে সেজন্য কী করণীয় সে বিষয়গুলো খতিয়ে দেখে একটি রিপোর্ট পেশ করবে। সেই রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে এগুলোকে নিয়মনীতির মধ্যে আনা। ইতোমধ্যে ব্যবহারকারীদের ট্যাক্সেসনের আওতায় আনা হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে যারা ব্যবহার করে তারা ট্যাক্স দিচ্ছে; কিন্তু তারা যে আমাদের দেশকে ব্যবহার করে টাকা উপার্জন করে নিয়ে যাচ্ছে সেজন্য ইনকাম ট্যাক্স দিচ্ছে না। সেটা দেওয়া প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে বিভিন্ন দেশে আইন হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, গণমাধ্যমের স্বার্থে এগুলোকে ট্যাক্সেসনের আওতায় আনা প্রয়োজন। আমিও মনে করি, মূলধারার গণমাধ্যমগুলোকে ট্যাক্সেসনের আওতায় আনা প্রয়োজন।

শেখ কামালের ৭১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তিনি বলেন, আজ বঙ্গবন্ধুর প্রথম পুত্র ও দ্বিতীয় সন্তান শহীদ শেখ কামালের ৭১তম জন্মদিন। তিনি বাংলাদেশের এমন একজন ক্রীড়া সংগঠক ছিলেন, যিনি আবাহনী ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই ক্লাবের মাধ্যমে আধুনিক ফুটবলের প্রবর্তন করেছিলেন বাংলাদেশে। তাকে ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সপরিবারে হত্যা করা হয়। তাকে হত্যার মধ্য দিয়ে একজন প্রকৃত ক্রীড়াবিদ ও সংগঠকে হারিয়েছে বাংলাদেশ।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রশাসক নিয়োগের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি চট্টগ্রামের মানুষ হিসেবে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি একজন মাঠের রাজনীতিবিদকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রশাসক নিয়োগ করেছেন। সুজন তরুণ বয়স থেকে ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি মাঠের কর্মী। সবসময় মাঠে ছিলেন, সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে তার পরিচিতি রয়েছে। আমি মনে করি, তিনি সিটি করপোরেশনকে এই ক্রান্তিকালে নেতৃত্ব দিতে পারবেন। তার মতো একজন রাজনীতিবিদের মূল্যায়ন করেছেন প্রধানমন্ত্রী।

তথ্যমন্ত্রী জানান, অনলাইন নিবন্ধন একটি চলমান প্রক্রিয়া। আমরা বলেছিলাম, ঈদের আগে যেসব অনলাইন পোর্টাল যোগ্য বলে বিবেচিত হবে, সেগুলোর তালিকা প্রকাশ করব। কয়েকটি তদন্ত সংস্থার তদন্তের ভিত্তিতে ৪৪টি অনলাইন পোর্টালের বিষয়ে অনাপত্তি পেয়েছি। তার মধ্যে ১০টি দৈনিক পত্রিকার অনলাইন সংস্করণ ছিল। যেহেতু দৈনিক পত্রিকার অনেকগুলোর নাম আসেনি, তাই আমরা ঠিক করেছি দৈনিক পত্রিকার অনলাইন সংস্করণগুলোর নাম আমরা পরে একযোগে প্রকাশ করব।

এ প্রসঙ্গে হাছান মাহমুদ আরও বলেন, প্রকাশিত তালিকায় দেশে প্রতিষ্ঠিত অনেক পত্রিকার নাম আসেনি। তদন্তের কারণসহ নানা কারণে নাম আসেনি। আমরা আবারও তাগাদা দিয়েছি, দ্বিতীয় ধাপে চেষ্টা করব দেশের সব মানসম্পন্ন অনলাইনগুলোকে যেন অনুমোদন দিয়ে দিতে পারি। যাতে কেউ উদ্বিগ্ন না হয়, সেজন্য ৩৪টির তালিকা প্রকাশের পাশাপাশি আমরা একটি বিজ্ঞপ্তিও দিয়েছিলাম, যে এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া, এতে কারও হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। কোনো অনলাইনের বিরুদ্ধে নেগেটিভ রিপোর্ট এলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তালিকায় আসা অনেক অনলাইনের ডোমেইনই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, এমন প্রশ্নের জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, সেটা হতে পারে। আমরা তো তদন্ত করিনি, তদন্ত সংস্থাগুলো করেছে। সে প্রশ্নটা তদন্ত সংস্থাগুলোকে করতে পারেন। আসলে ৪ হাজার অনলাইন অনুমোদনের জন্য আবেদন করেছে।