চট্টগ্রামে সরকারি স্কুলে এবারও তিন দফায় ভর্তিযুদ্ধ ,অনলাইনে আবেদন শুরু ১ ডিসেম্বর পরীক্ষা ১৯, ২১ ও ২২ ডিসেম্বর

পোস্টকার্ড ডেস্ক ।।

চট্টগ্রামে সরকারি স্কুলে এবারও তিন দফায় ভর্তিযুদ্ধ ,অনলাইনে আবেদন শুরু ১ ডিসেম্বর পরীক্ষা ১৯, ২১ ও ২২ ডিসেম্বর

সরকারি ৯টি স্কুলে এবারও তিন দফায় নেয়া হবে ভর্তি পরীক্ষা। এর আগে দুই দফায় নেয়া হলেও ২০১৬ সাল থেকে ক্লাস্টার পদ্ধতিতে তিন দফায় (তিন দিন) পরীক্ষা নিয়ে আসছে চট্টগ্রাম জেলাপ্রশাসন। পরীক্ষা গ্রহণের সুবিধার্থে গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও স্কুলগুলোকে তিনটি ক্লাস্টারে (গ্রুপে) বিভক্ত করা হয়েছে। আর প্রতিটি ক্লাস্টারের জন্য একবার করে পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
জেলাপ্রশাসন সূত্রের তথ্য মতে, ৯টি সরকারি স্কুলে এবার মোট আসন সংখ্যা চার হাজারের কিছু বেশি। এর মধ্যে ৫ম-৮ম শ্রেণির প্রায় তিন হাজার শূন্য আসনে তিন দফায় ভর্তি যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে হবে ভর্তিচ্ছুদের। প্রতিটি শ্রেণিতে শিক্ষার্থীরা তিনবার ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগ পাচ্ছে। ভিন্ন ভিন্ন প্রশ্নপত্রেই প্রতি শ্রেণিতে তিনবার পরীক্ষা নেয়া হবে। অর্থাৎ তিন দফায় পরীক্ষা নেয়ার জন্য একটি শ্রেণির তিনটি আলাদা প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করা হবে। আর এই আলাদা আলাদা প্রশ্নপত্রেই একই শ্রেণিতে তিনবার পরীক্ষা নেয়া হবে। তবে নবম শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষার বদলে জেএসসি ও জেডিসির ফলাফলের ভিত্তিতে শিক্ষার্থী ভর্তির বিধান রয়েছে। তাই স্কুলগুলোর নবম শ্রেণির ১১৫০টি আসনে ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হবে না। গত ২১ নভেম্বর জেলাপ্রশাসকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সরকারি স্কুল ভর্তি সংক্রান্ত সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। অতিরিক্ত জেলাপ্রশাসকের (শিক্ষা ও আইসিটি) সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় ৯টি সরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।
ভর্তি সংক্রান্ত বৈঠকের তথ্য নিশ্চিত করে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলাপ্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. আবু হাসান সিদ্দিক আজাদীকে বলেন, বৈঠকে ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত প্রাথমিক (খসড়া) কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রয়োজন ও পরিস্থিতি বিবেচনায় এসব সিদ্ধান্তের কিছুটা পরিবর্তনও হতে পারে। আবার প্রাথমিকভাবে নেয়া সিদ্ধান্তগুলো বহালও থাকতে পারে। যদিও আজকালের মধ্যেই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে ভর্তি সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে বলে জানান সরকারি স্কুলের ভর্তি পরীক্ষা তদারকির দায়িত্বে থাকা প্রশাসনের এই কর্মকর্তা।
আবেদন ও পরীক্ষার সময়সূচি : সভার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ১৯, ২১ ও ২২ ডিসেম্বর তিন দফায় এ ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে ১ ডিসেম্বর থেকে অনলাইনে ও টেলিটকের মাধ্যমে আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হবে। আগামী ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত আবেদন করার সুযোগ পাবে ভর্তিচ্ছুরা। তবে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত টেলিটকের মাধ্যমে ফি পরিশোধের সুযোগ থাকবে।
আবেদন প্রক্রিয়া : এবারও কেবল অনলাইন ও টেলিটকের মাধ্যমেই আবেদন করতে হবে শিক্ষার্থীদের। ভর্তি সংক্রান্ত টেলিটকের ওয়েবসাইটে (http://www.gsa.teletalk.com.bd) গিয়ে সতর্কতার সঙ্গে আবেদন ফরম পূরণ করতে হবে। আবেদন ফরম পূরণ সংক্রান্ত নির্দেশনা সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে। খসড়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১ ডিসেম্বর থেকে আগামী ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত আবেদনের সুযোগ পাবে শিক্ষার্থীরা। অনলাইনে আবেদনের সময় সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন অতিরিক্ত জেলাপ্রশাসক মো. আবু হাসান সিদ্দিক। তিনি বলেন, আবেদনে ভুল হয়ে গেলে সেক্ষেত্রে আবেদনকারীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। তাই অনলাইনে আবেদন ফরম পূরণের সময় খুবই সতর্ক থাকতে হবে। অভিভাবকদের এ বিষয়ে বেশি সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
আবেদন ফি : সরকারি স্কুলে ভর্তির আবেদন ফি আগে ১৫০ টাকা নির্ধারিত থাকলেও ২০১৭ সালে এই ফি ১৭০ টাকা ধার্য করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সে হিসেবে এবারও আবেদন ফি বাবদ ১৭০ টাকা দিতে হবে ভর্তিচ্ছুদের। আর গতবারের ন্যায় এবারও টেলিটকের মাধ্যমেই এ ফি পরিশোধ করতে হবে।
স্কুল পছন্দ : গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও একটি আবেদনে একটি মাত্র স্কুল পছন্দ দিতে পারবে শিক্ষার্থীরা। সেক্ষেত্রে তিনটি ক্লাস্টারে পরীক্ষায় অংশ নিতে হলে আলাদাভাবে তিনবার আবেদন করতে হবে ছাত্রদের। একইভাবে তিনটি ক্লাস্টারে পরীক্ষায় বসতে তিনবার আবেদন করতে হবে ছাত্রীদেরও। আর প্রতিটি আবেদনে একটির বেশি স্কুল পছন্দ দেয়া যাবে না। আবার একই স্কুলে দুইবারও আবেদন করা যাবে না। একটি ক্লাস্টার (গ্রুপ) থেকে শুধু একটি স্কুল পছন্দ দিয়েই আবেদন করতে হবে শিক্ষার্থীদের।
ক্লাস্টার ভিত্তিক পরীক্ষার সময়সূচি : জেলাপ্রশাসনের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ৯টি সরকারি স্কুলকে এবার ক, খ ও গ (এই তিনটি) ক্লাস্টারে (গ্রুপে) বিভক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ‘ক’ গ্রুপে রয়েছে- চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল, বাকলিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (বালক শাখা) ও ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। এই তিনটি স্কুলের ৫ম ও ৬ষ্ঠ শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ১৯ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার)। ওই দিন সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত ৫ম শ্রেণির এবং দুপুর ২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত ৬ষ্ঠ শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ‘খ’ গ্রুপে রয়েছে- নাসিরাবাদ সরকারি (বালক) উচ্চ বিদ্যালয়, হাজী মুহাম্মদ মহসিন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও সিটি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। এই তিনটি স্কুলে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ২১ ডিসেম্বর (শনিবার)। ওই দিন সকাল দশটা থেকে ১২টা পর্যন্ত ৫ম ও ৮ম শ্রেণির এবং দুপুর ২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত ৬ষ্ঠ শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। আর ‘গ’ ক্লাস্টারে থাকা সরকারি মুসলিম হাই স্কুল, চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, চট্টগ্রাম সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও বাকলিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে (বালিকা শাখা) ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ২২ ডিসেম্বর (রোববার)। ওই দিন সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত ৫ম ও ৮ম শ্রেণির এবং দুপুর ২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত ৬ষ্ঠ শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
আসন সংখ্যা : নগরীর ৯টি সরকারি স্কুলে চার শ্রেণিতে (৫ম থেকে ৮ম) মোট ৩ হাজার ৯০টি শূন্য আসনের বিপরীতে এবার ভর্তি যুদ্ধে অবতীর্ণ হবে শিক্ষার্থীরা। তবে নবম শ্রেণির ১ হাজার ১৫০টি সহ স্কুলগুলোতে এবার মোট শূন্য আসন সংখ্যা ৪ হাজার ২৪০টি। এর মধ্যে ৫ম শ্রেণিতে ২ হাজার ৪০, ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ৭৩৫, অষ্টমে ৩১৫ এবং নবম শ্রেণিতে ১ হাজার ১৫০টি আসনে ভর্তির সুযোগ পাবে শিক্ষার্থীরা। অবশ্য, জেএসসি/জেডিসির ফলাফলের ভিত্তিতে নবম শ্রেণিতে ভর্তির নিয়ম রয়েছে। ফলে এ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য কোনো পরীক্ষা নেয়া হবে না।
অন্যদিকে, ২০১৭ সালে দুই স্কুলের (বাকলিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়) ৭ম শ্রেণিতে মোট ১৪০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হলেও গত বছর থেকে একজন শিক্ষার্থীও ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে না। অবশ্য, আসন সংখ্যার এই তালিকা এখনো খসড়া পর্যায়ে বলে জেলাপ্রশাসন সূত্র জানিয়েছে।

প্রশ্নপত্র প্রণয়ন : কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন হবে কেবল পাঠ্যপুস্তক থেকেই। পাঠ্যপুস্তকের বাইরে থেকে কোনো ধরনের প্রশ্ন করা যাবে না। শিক্ষামন্ত্রণালয় এ সিদ্ধান্ত নেয়। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ৫ম শ্রেণি ভর্তিতে ৪র্থ শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকের ভিতর থেকেই প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করতে হবে। একইভাবে অন্যান্য শ্রেণিতেও।

সুত্রঃ আজাদী ।