সম্মেলন প্রস্তুতি শেষ আওয়ামী লীগের ,নেতৃত্বে এবার নজর

সম্মেলন প্রস্তুতি শেষ আওয়ামী লীগের ,নেতৃত্বে এবার নজর

হাবীব রহমান , ঢাকা ব্যুরো ।।
 

শুদ্ধি অভিযান, মুজিব বর্ষ ও আগামী নেতৃত্বের কথা সামনে রেখে আগামী শুক্র ও শনিবার আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনের সার্বিক প্রস্তুতি প্রায় শেষের দিকে। চলছে শেষ বেলার ঘষামাজা। তবে সবার দৃষ্টি নেতৃত্বের দিকে। এবার তারুণ্যের ছোঁয়া লাগবে আওয়ামী লীগে।
দলীয় সূত্র বলছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব ঠিক করতে এবার অপেক্ষাকৃত তরুণ কাউকে তার রানিংমেট হিসেবে বেছে নিতে পারেন। আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তরুণ ও আধুনিক এবং সারা দেশে জনপ্রিয় এমন কেউ হবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগকে নতুন করে সাজাতে চান। তবে দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা মনে করছেন, ওবায়দুল কাদের আবারও দলের সাধারণ সম্পাদক পদে আসীন হবেন।
তবে আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের বেশ কিছু সূত্র জানায়, সারা দেশে আওয়ামী লীগের বর্তমান নেতৃত্ব (সেটআপ) প্রধানমন্ত্রী নিজেই দেখভাল করছেন। এ সেটআপ চলমান অবস্থায় নতুন সেটআপের চিন্তা করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী এবার আরও বেশি তারুণ্যকে ধারণ করবেন। এবারের সম্মেলনে আগামী ২৫ বছরের জন্য (এক প্রজন্ম) আওয়ামী লীগের যোগ্য নেতৃত্ব তৈরি করতে চান তিনি।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও নৌপ্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী সময়ের আলোকে বলেন, নেতৃত্বের পরিবর্তন একটি সম্মেলনের বিবেচ্য বিষয় নয়। একটি রাজনৈতিক দল কীভাবে, আগামী দিনের জন্য কী নিয়ে আসছে, নতুন কী চিন্তা, দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি ও লক্ষ্যটা কী এবং পূর্ববর্তী লক্ষ্যের সঙ্গে আগামীর লক্ষ্যের কী ধরনের অ্যাডজাস্টমেন্ট হচ্ছে, সেই বিষয়গুলোই হচ্ছে মূল বিষয়। এদিকে এবারের সম্মেলনে সর্বকালের সর্ববৃহৎ জমায়েতের প্রস্তুতি নিচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ৫০ হাজারের বেশি নেতাকর্মী জমায়েত হবে বলে ধারণা করছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। আগামী ২০ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মেলনের উদ্বোধন এবং সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ইতোমধ্যেই সম্মেলনের প্রস্তুতি প্রায় চুড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলে জানিয়েছে দলীয় সূত্র। এ সম্মেলন সফল করতে ১১টি প্রস্তুতি উপকমিটি গঠন করা হয়। আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবারের সম্মেলনের ব্যয় ধরা হয়েছে চার কোটি টাকা। এ সম্মেলনে কাউন্সিলরের সংখ্যা সাড়ে সাত হাজার এবং ডেলিগেটস প্রায় ২০ হাজার হবে বলে জানায় তারা। সব মিলিয়ে ৫০ হাজারের বেশি নেতাকর্মী ও সমর্থক সম্মেলনে সমবেত হবে বলে তাদের ধারণা।
১৪ ডিসেম্বর প্রস্তুতি সভায় দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, এবারের সম্মেলনে কত লোক সমাগম হবে স্পষ্ট করে এখনই সেটা বলা যাচ্ছে না। তবে জমায়েত অন্যান্য সম্মেলনগুলো থেকে ছাড়িয়ে যাবে। জেলা, উপজেলা পর্যায়ে প্রস্তুতি দেখে সেটাই ধারণা করছি। সর্বকালের সর্ববৃহৎ জমায়েত হবে।
আওয়ামী লীগের এবারের সম্মেলনের মঞ্চ ও প্যান্ডেল করা হয়েছে পদ্মা সেতুর আদলে। এ যাবতকালে আওয়ামী লীগের সম্মেলনের সবচেয়ে বড় প্যান্ডেল হবে এটি। মঞ্চের উচ্চতা হবে ২৮ ফুট, দৈর্ঘ্য ১৫০ ফুট ও প্রস্থ ১৪০ ফুট হবে। পেছনে ব্যানার ছাড়া সম্পূর্ণ ডিজিটাল মঞ্চ করা হয়েছে। ডিজিটাল ডিসপ্লেতে পদ্মার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলা হবে। সম্মেলন ঘিরে ইতোমধ্যেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, এর আশপাশ, রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্ট, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও দলের সভাপতির ধানমন্ডির কার্যালয়ে সাজসজ্জার কাজ চলছে।
প্যান্ডেলে ২৮টি এলইডি পর্দায় সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান তুলে ধরা হবে। কাউন্সিলর, ডেলিগেটস ও আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য ৩০ হাজারসহ মোট ৫০ হাজারের মতো চেয়ারের ব্যবস্থা রাখা হবে মঞ্চের সামনের প্যান্ডেলে। সম্মেলনের শৃঙ্খলা রক্ষা ও সার্বিক সহযোগিতার জন্য আওয়ামী লীগের কর্মীদের নিয়ে গঠিত ‍দুই হাজার স্বেচ্ছাসেবক কাজ করবে।
সম্মেলনের প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, প্রস্তুতি প্রায় চ‚ড়ান্ত। কাউন্সিলরদের তালিকা আসছে, গঠনতন্ত্রের কাজ শেষ, সাজসজ্জার কাজও চুড়ান্ত প্রায়। সাড়ে সাত হাজার কাউন্সিলর এবং ২০ হাজারের মতো ডেলিগেটস এবারের সম্মেলনে অংশ নেবেন। এ ছাড়া দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও থাকবেন উদ্বোধনী অধিবেশনে। সব মিলিয়ে একটি উৎসবমুখর পরিবেশে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে বলে আমরা প্রত্যাশা করছি।