সবজিতে বদলে যাচ্ছে চট্টগ্রাম , চন্দনাইশ ও সীতাকুন্ডে উৎপাদন হয় প্রচুর সবজি

সবজিতে বদলে যাচ্ছে চট্টগ্রাম , চন্দনাইশ ও সীতাকুন্ডে উৎপাদন হয় প্রচুর সবজি
সবজিতে বদলে যাচ্ছে চট্টগ্রাম , চন্দনাইশ ও সীতাকুন্ডে উৎপাদন হয় প্রচুর সবজি

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন।।

চট্টগ্রামের সবজির চাহিদার বেশির ভাগই ৪-৫ বছর আগেও মেটানো হত উত্তর বঙ্গ থেকে সরবরাহ করা সবজি দিয়ে। সেই চিত্র বদলে দিয়েছে কৃষক। এখনকার উৎপাদিত সবজি দিয়ে পূরণ করা হচ্ছে বেশির ভাগ চাহিদা।

কৃষি বিভাগে তথ্যে দেখা যায়, গত ৫ বছরে সবজি উৎপাদন বেড়েই চলেছে। ২০১০-১১ সালে উৎপাদন ছিল পৌনে তিন লাখ টন। বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ টনের বেশি। উচ্চ ফলনশীল জাতের বীজ ব্যবহারে সবজি উৎপাদন বাড়ছে। ধানের চেয়ে সবজি চাষে লাভ বেশি পাওয়ায় কৃষকেরা এখন সবজি চাষে ঝুঁকে পড়ছেন। ১০ বছরে সবজি উৎপাদন দ্বিগুনের কাছাকাছি বেড়েছে।

জেলার চন্দনাইশ ও সীতাকুন্ড উপজেলাকে সবজি ভাণ্ডার বলা হয়। এই দুই উপজেলায় প্রচুর সবজি উৎপাদন হয়।

এছাড়াও বাঁশখালী, পটিয়া, মিরসরাই, রাঙ্গুনীয়া উপজেলাও বাণিজ্যিকভাবে ব্যাপক সবজি চাষাবাদ হচ্ছে। উপজেলা ছাড়াও নগরীর বৃহত্তর হালিশহর ও পতেঙ্গা এলাকায় বঙ্গোপসাগরের কূল ঘেঁষে সবজি চাষ করা হয়। এসব অঞ্চলে উৎপাদিত সবজি চট্টগ্রামের বড় চাহিদা পূরণ করছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আখতারুজ্জামান পূর্বকোণকে বলেন, ‘২৭ হাজার হেক্টর জমিতে সবজি চাষ করা হয়েছে। চট্টগ্রামে অনেক পতিত জমি রয়েছে। চাষাবাদ বাড়ানোর আরও সুযোগ রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সবজির দাম ভালো থাকায় কৃষক সবজি চাষে উৎসাহিত হচ্ছে। এছাড়াও প্রণোদনার মাধ্যমে নতুন নতুন সবজি উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করছি আমরা।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, ধানের চেয়ে সবজিতে ভালো মূল্য পাওয়ায় সবজি চাষ বাড়ছে। নতুন নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার ও কৃষি বিভাগে সাপোর্ট পেয়ে কৃষক উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। এতে সবজি উৎপাদন বেড়েই চলেছে।

কৃষি বিভাগের তথ্য বলছে, ২০১০-১১ সালে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল পৌনে তিন লাখ টন। পরের বছর থেকে ধীরে ধীরে বাড়ছে। ১৪-১৫ মৌসুমে উৎপাদন দাঁড়ায় তিন লাখ ৬৪ হাজার ৭৮৮ টন। সেই থেকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সবজি উৎপাদন থর থর করে বেড়ে চলছে। ২০১৯-২০২০ মৌসুমে উৎপাদন হয় ৫ লাখ এক হাজার ৭৬৮ টন।

সীতাকুন্ড পৌরসভা এলাকার কৃষক রেজাউল করিম বলেন, ১০ শতক জমিতে ফুল-বাধাকপি, ১০ শতক জমিতে শিম চাষ করেছি। ৫ বছর আগে জমির পরিমাণ অর্ধেক ছিল। উৎপাদন ও লাভ ভালো হওয়ায় বছরপ্রতি জমির পরিমাণও বাড়িয়েছে। চন্দনাইশের এখলাছ উদ্দিন বলেন, ৬৫ শতক জমিতে সবজি চাষ করেছি। প্রতি হাটে ৪০-৫০ হাজার টাকার সবজি বিক্রি করি। চলতি মৌসুমের শুরুতে সবজির দাম ভালো পেয়েছি। কয়েক বছর ধরে দাম ভালো পাওয়ায় জমির পরিমাণও অনেকটা বেড়েছে।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দু-এক বছর বৃষ্টি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ক্ষেতের সবজি নষ্ট হয়েছে। চাষীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারপরও ঘুরে দাঁড়িয়েছে চাষীরা। হাইব্রিড বীজে চাষাবাদ করা হয়।

চাষীরা জানান, এক মৌসুমে দুই-তিন বার ফসল উৎপাদন করা যায়। এতে ধানের চেয়ে সবজিতে লাভ ভালো হয়। তাদের অভিমত, ধান চাষে খরচ বেশি। লোকসান গুনতে হয়। সবজিতে সেই শঙ্কা থাকে না। লাভ বেশি হওয়ায় চাষীরা কয়েক বছর ধরে সবজি চাষে মনোযোগী বেশি হচ্ছেন।

দেখা যায় পৌষের কনকনে শীত উপেক্ষা করে সবজি ক্ষেতে ব্যস্ত কৃষকেরা। কেউ ক্ষেত থেকে তুলছেন মুলা, বেগুন, ফুলকপি, বাধাকপিসহ নানা সবজি। কেউ করছেন নিড়ানি। কেউ ভার করে নিচ্ছেন বাজারে। ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কৃষকেরা। এমন দৃশ্য দেখা যায় গ্রামাঞ্চলে।

কৃষি বিভাগ জানায়, পতিত জমি কমিয়ে আনা হচ্ছে। লাভ ভালো হওয়ায় সবজি উৎপাদনে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে কৃষক। সরকারও উৎপাদন বাড়াতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে। চলতি বছর ছয় হাজার ৮০ জনকে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে।

চাষীরা জানান, এক মৌসুমে দুই-তিন বার ফসল উৎপাদন করা যায়। এতে ধানের চেয়ে সবজিতে লাভ ভালো হয়। তাদের অভিমত, ধান চাষে খরচ বেশি। লোকসান গুনতে হয়। সবজিতে সেই শঙ্কা থাকে না। লাভ বেশি হওয়ায় চাষীরা কয়েক বছর ধরে সবজি চাষে মনোযোগী বেশি হচ্ছেন।

কৃষক, আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা জানান, কৃষক পর্যায় থেকে কয়েক হাত ঘুরে এসব সবজি বাজারে আনা হয়। এতে বড় লাভ লুটে নিচ্ছেন ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা। কৃষক পর্যায়ে সরাসরি সবজি বিক্রির উদ্যোগ নিতে পারলে কৃষকেরা আরও বেশি লাভবান হতেন। কৃষি বিভাগ বা সরকার এই বিষয়ে উদ্যোগ নিলে চট্টগ্রামে সবজি উৎপাদন আরও কয়েক গুণ বৃদ্ধি পাবে।