সীতাকুণ্ডে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী , শয্যা অপ্রতুল

সীতাকুণ্ডে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী , শয্যা অপ্রতুল
সীতাকুণ্ডে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী , শয্যা অপ্রতুল

মেজবাহ খালেদ ।।

সীতাকুণ্ডের লতিফপুর এলাকার মসিউর রহমান । রোববার সকাল থেকে শরীরে প্রচণ্ড কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে। দুপুরের পর তাপমাত্রা ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট হয়ে যায়। সেই সাথে পেটব্যথা ও বমি হচ্ছিল । স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শে রক্ত পরীক্ষার পর তাঁর ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। এরপর তিনি স্থানীয় বিআইটিআইডি হাসপাতালে ভর্তি হন।

শুধু মসিউর না, তাঁর মতো গত চার দিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত ৫৩ রোগী ভর্তি হয়েছেন সীতাকুণ্ডের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকসাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) হাসপাতালে। তাদের মধ্যে মঙ্গলবার এক দিনে শরীরে র‍্যাশ (লালচে দাগ) নিয়ে ভর্তি হয়েছে ১০ নতুন রোগী । সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছে ১২ জন।

ভর্তি হওয়া এসব রোগীর অধিকাংশ সীতাকুণ্ডের কুমিরার বাসিন্দা। তবে কিছু রোগী এসেছে নগরীর হালিশহর ও কাট্টলী এলাকা থেকে। হাসপাতালের চিকিৎসা শয্যার চেয়ে দ্বিগুণ রোগী ভর্তি করতে অনেকটাই হিমশিম অবস্থায় পড়তে হচ্ছে চিকিৎসকদের।

চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে হাসপাতালে যেসব ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছে, আগের আক্রান্ত রোগীর তুলনায় তাদের শারীরিক অবস্থা কিছুটা জটিল। আক্রান্ত অধিকাংশ রোগীর শরীরে র‍্যাশ দেখা দিয়েছে। তাছাড়া অধিকাংশ রোগীর রক্তে প্লাটিলেট স্বাভাবিকের তুলনায় কমে যাচ্ছে। হঠাৎ এ ধরনের উপসর্গ নিয়ে রোগী ভর্তি হওয়ায় কিছুটা অপ্রস্তুত চিকিৎসকরা । তবে সঠিকভাবে চিকিৎসা দিয়ে আক্রান্তদের সারিয়ে তুলতে কাজ করছেন তাঁরা।

হাসপাতাল সুত্রে জানা যায় , ২০ শয্যার ডেঙ্গু ইউনিটে চলতি বছরের চলতি অক্টোবর মাসের ২৬ দিনে প্রায় ২০০ রোগী ভর্তি হয়েছে। সেপ্টেম্বরে ১০৫ ও আগস্টে ২০ রোগী ভর্তি হয়েছিল ।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আরও জানিয়েছে, ১২০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালটিতে করোনা ইউনিটে ৫০ শয্যা ও ডেঙ্গু ইউনিটে ২০ শয্যা। ডায়রিয়া ও প্রাণীর কামড়ের রোগীদের জন্য বাকি ৫০ শয্যা রাখা হয়েছে।

হাসপাতালের বিভিন্ন ইউনিটে দেখা যায়,  নির্দিষ্ট শয্যার পাশাপাশি হাসপাতালের অন্য ইউনিটেও ডেঙ্গু রোগীদের ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তবে ভর্তিকৃত রোগীর অধিকাংশ শয্যায় মশারি টাঙানো নেই। চিকিৎসকেরা মশারি টানাতে বললেও অনীহা রোগীদের।

চিকিৎসা নিতে আসা সীতাকুণ্ডের কুমিরা জেলেপাড়ার রমেন দাশ (৩৫) বলেন, চার-পাঁচ দিন ধরে তার জ্বর, পেটব্যথা ও বমি হচ্ছিল। স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শে রক্ত পরীক্ষার পর ডেঙ্গু শনাক্ত হলে সে বিআইটিআইডি হাসপাতালে ভর্তি হন। এখানে চিকিৎসার পর বর্তমানে জ্বর থাকলেও বমি ও পেটব্যথা অনেকটাই কমেছে।

এ সময় হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসক জুবুরিয়া শারমিন চৌধুরী’র সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, নির্দিষ্ট শয্যার বেশি রোগী ভর্তি হওয়ায় চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আক্রান্ত রোগীদের শরীরে র‍্যাশের পাশাপাশি তীব্র ব্যথা ও জ্বর রয়েছে। আক্রান্তদের শরীরের তাপমাত্রা ১০৫ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠে যায়, পাশাপাশি বমি ও তীব্র পেটব্যথা রয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের দ্রুত সুস্থ করতে সাধ্যমতো চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন তাঁরা।

তিনি বলেন, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীরা মশারি ব্যবহারের ক্ষেত্রে একেবারেই উদাসীন। ধমক দিলে মশারি টানায়, চিকিৎসক বা নার্সরা চলে গেলেই মশারি খুলে রেখে দিচ্ছে।

এসময় বিআইটিআইডি এর সহযোগী অধ্যাপক মামুনুর রশিদ বলেন, চলতি বছরে হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে বেশির ভাগ সীতাকুণ্ডের কুমিরা ইউনিয়ন থেকে এসেছে। এলাকাটি বর্তমানে সীতাকুণ্ডের ডেঙ্গুর হট স্পট হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। চলতি মাসে কুমিরা ইউনিয়নের রহমতপুর গ্রামে প্রতিটি পরিবারের কেউ না কেউ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। অনেকে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়েছে। যাদের অবস্থা কিছুটা খারাপ তারা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। গত ২৬ দিনে হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত যত রোগী ভর্তি হয়েছে, তাদের ৮০ শতাংশ রোগী সীতাকুণ্ডের কুমিরার বাসিন্দা। এই এলাকায় মশার লার্ভা নিধনে জনপ্রতিনিধিরা কাজ না করলে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকবে। এখানে অবশ্য চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহর, উত্তর কাট্টলী থেকেও হাসপাতালটিতে রোগী ভর্তি হচ্ছে।

তিনি বলেন,  সবচেয়ে ভয়ের বিষয় হচ্ছে দুই সপ্তাহ ধরে আসা রোগীদের ২৫ শতাংশ রোগীর গায়ে র‍্যাশ রয়েছে। মোট রোগীর বেশির ভাগের রক্তে প্লাটিলেট ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ নিয়ে ভর্তি হচ্ছে। যেখানে স্বাভাবিক মানুষের রক্তে প্লাটিলেট থাকার কথা ১ লাখ ৫০ হাজার ইউনিট। কোনো কোনো রোগীর রক্তের প্লাটিলেট ৫০ হাজারের কম দেখা গেছে। কোনো রোগীর প্লাটিলেট ১০ হাজার ইউনিটের নিচে নেমে গেলে রোগীর অবস্থা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ধরা হয়। সে ক্ষেত্রে রোগীকে রক্ত দিতে হয়। তবে এখন পর্যন্ত কোনো রোগীকে নতুন করে প্লাটিলেট দিতে হয়নি।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;