রোহিঙ্গারা নিয়ন্ত্রণে করছে ইয়াবা ব্যবসা,শরণার্থী ক্যাম্পে শক্ত সিন্ডিকেট

রোহিঙ্গারা নিয়ন্ত্রণে করছে ইয়াবা ব্যবসা,শরণার্থী ক্যাম্পে শক্ত সিন্ডিকেট
রোহিঙ্গারা নিয়ন্ত্রণে করছে ইয়াবা ব্যবসা,শরণার্থী ক্যাম্পে শক্ত সিন্ডিকেট

কক্সবাজার প্রতিনিধি ।।

ইয়াবা ব্যবসার ৯৫ ভাগ নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে রোহিঙ্গারা। বাংলাদেশিরা এখন কেবল ইয়াবা বহন করছে। বর্তমানে ইয়াবার যেসব বড় বড় চালান আটক হচ্ছে বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখকে ফাঁকি দিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যাচ্ছে— তার বেশিরভাগ চালানের সাথে রোহিঙ্গা সিন্ডিকেট জড়িত বলে দাবি করেছে কক্সবাজার জেলা পুলিশ।

জেলা পুলিশের তথ্যমতে, করোনার দুর্যোগ চলাকালে গত চার মাসে কক্সবাজারে ইয়াবা উদ্ধার হয়েছে ৩৫ লাখ ২১ হাজার। মামলা হয়েছে ৫৩৩টি। গ্রেপ্তার হয়েছে ৭৪৭ জন। অভিযান, গ্রেফতার ও মামলা তদন্তে বেরিয়ে এসেছে বেশিরভাগ মাদক চালানের মূল হোতা রোহিঙ্গা। বাংলাদেশিরা কেবল বহনকারী ও খুচরা ব্যবসায়ী হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। পাশাপাশি ইয়াবার ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো থেকেই।

সূত্র মতে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পভিত্তিক শক্তিশালী ইয়াবা চোরাচালান চক্র গড়ে ওঠেছে। পাশাপাশি ক্যাম্পের বাইরে গহীন পাহাড়ি এলাকায় বসতবাড়ি তৈরি করে রোহিঙ্গারা ইয়াবা ব্যবসার পাশাপাশি ডাকাতি ও অপহরণের মত ঘটনারও জন্ম দিচ্ছে। আর এই অপকর্মে জড়িত বেশিরভাগই পুরাতন রোহিঙ্গা। সাথে যুক্ত হয়েছে নতুন রোহিঙ্গারাও। তবে নতুন রোহিঙ্গারা আসার পর শক্তিশালী হয়ে ওঠেছে রোহিঙ্গা চোরাচালান সিন্ডিকেট।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিয়ানমার থেকে নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা আগে সেখানে অনেকেই ছিলেন ‘ইয়াবা ডন’। সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আসার পর কিছুদিন চুপচাপ থাকলেও বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে তাদের সেই সিন্ডিকেট ফের সক্রিয় হয়ে ওঠেছে।

ক্যাম্পের কয়েকজন রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পে ইয়াবা পাচারের সাথে জড়িত অন্তত দুই শতাধিক রোহিঙ্গা। তাদের সঙ্গে মিয়ানমারের রাখাইন সম্প্রদায়ের ইয়াবা গডফাদারের সাথে যোগাযোগ রয়েছে।

সূত্রটি আরও বলছে, মিয়ানমার থেকে রাতের আঁধারে ইয়াবা ও মাদকের চালান সীমান্তের কাঁটাতারের পাশে বয়ে নিয়ে আসে ওপারের সিন্ডিকেট সদস্যরা। পরে বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা সীমান্ত থেকে মাদকের চালান বয়ে নিয়ে আসে। এভাবে প্রতিনিয়ত কোটি কোটি টাকার ইয়াবা ঢুকছে উখিয়া-টেকনাফের সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। পরে ইয়াবার চালান সুযোগ বুঝে চিহ্নিত সিন্ডিকেট সদস্যরা দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করে দিচ্ছে। তবে সিন্ডিকেটের গডফাদাররা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।

রোহিঙ্গাদের মধ্যে আলোচিত এক রোহিঙ্গা ইয়াবা গডফাদার হলেন কুতুপালং ক্যাম্পের জিয়াবুল হক। তিনি আইনশৃংখলা বাহিনীর কাছে ধরা পড়লেও তার অবর্তমানে ইয়াবার রাজত্ব দখলে নিয়েছেন ভগ্নিপতি ছব্বির আহমদ। জিয়াবুলের রয়েছে বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি ও দখল করা প্রচুর সরকারি জমি। জিয়াবুলের মত ইয়াবার সাম্রাজ্য বানিয়েছেন লম্বাশিয়ার রোহিঙ্গা মাস্টার মুন্না, খাইরুল আমিন ও টেকনাফ জাহালিয়া পাড়ার আবদুল হামিদসহ অনেকেই।

এ বিষয়ে কক্সবাজার পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বলেন, ইয়াবা ব্যবসার ৯৫ ভাগ নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে রোহিঙ্গারা। বাংলাদেশিরা এখন কেবল ইয়াবা বহন করছে। আর খুচরা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। উখিয়া টেকনাফের ক্যাম্পে ঢুকে গেছে বেশিরভাগ ইয়াবা ব্যবসা। সেখান থেকেই মালবাহী গাড়ি করে পাচার হচ্ছে। সম্প্রতি আটক অভিযানে তার সত্যতাও পাওয়া গেছে।

পুলিশ সুপার আরও বলেন, নতুন ও পুরাতন রোহিঙ্গারা মিলে উখিয়া-টেকনাফের সীমান্ত এলাকাসহ ঘুমধুম, তুমব্রু বর্ডার, গর্জনিয়া ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি দিয়ে ইয়াবার নতুন রোড সৃষ্টি করেছে। পাশাপাশি এই জেলার মতো বর্তমানে সিলেট, কুড়িগ্রাম, ফেনী, কুমিল্লা, সাতক্ষীরা, ভোলা ও পটুয়াখালীসহ আরও কয়েক জেলাকে আয়ত্বে নিয়েছে ইয়াবার গডফাদাররা। সম্প্রতি যেসব ইয়াবা ব্যবসায়ী ধরা পড়েছে তাদের জবানবন্দিতে এই তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে বলে তিনি জানান।