যৌনতা থাকবে না প্রেমের ছবিতে , এটা আশা করা ভুল : মধুমিতা

যৌনতা থাকবে না প্রেমের ছবিতে , এটা আশা করা ভুল : মধুমিতা
বিনোদন ডেস্ক ।।

মধুমিতা সরকার ছোট পর্দার চেনা মুখ । বড় পর্দায় প্রথম ছবির ট্রেলারেই করেছেন বাজিমাত। ১৪ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পাচ্ছে 'লভ আজ কাল পরশু'। ছবি মুক্তির আগে ব্যক্তিগত জীবন থেকে কেরিয়ার নিয়ে ভারতীয় পত্রিকা আনন্দবাজারকে খোলামেলা সাক্ষাৎকার দিয়েছেন অভিনেত্রী।

সাক্ষাৎকারটি পোস্টকার্ডবিডি. কম পাঠকদের জন্য হুবুহু তুলে ধরা হলো-

আপনার ছবির কথা পরে শুনব। আগে বলুন তো, ইনস্টাগ্রামে প্রায় চার লাখ স্পর্শ করবে আপনার ফলোয়ারের সংখ্যা। আপনি এত জনপ্রিয় শুধুই ধারাবাহিক করে?

ধারাবাহিক ছাড়া তো আমি আর কিছু করিনি। আজও লোকে আমায় ‘বোঝে না সে বোঝে না’-র ‘পাখি’ বলে জানে। সেই ‘কেয়ার করি না’ থেকেই লোকে আমায় ভালোবাসে। ‘কুসুমদোলা’-র ইমনকে নিয়ে লোকে আজও পাগল।

ধারাবাহিক থেকে এত জনপ্রিয়তা পেয়েও সিনেমায় চলে গেলেন?

একজন অভিনেত্রী সারা জীবনই কি ‘পাখি’ বা ‘ইমন’ শাড়ি, সালোয়ার কামিজ, সাধারণ মেয়ে, এভাবেই থেকে যাবে তা কি হয়? সে তো নিজেকে ভাঙবে!

ভাঙতে গিয়ে সে একেবারে প্রেম আর যৌনদৃশ্যে পৌঁছে গেল?

প্রসঙ্গটা তুলে ভালোই করেছেন। এখানে আমি কিছু বলতে চাই। ২০২০-তে দাঁড়িয়ে প্রেমের ছবিতে কোনও যৌনতা থাকবে না এটা আশা করাটাই তো ভুল। আপনি ভাবুন, প্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়ে যদি বন্ধু হয়, তারা একান্তে কোনও জায়গায় তিন-চার ঘণ্টা সময় কাটাতে পারে, তাহলে তারা কিস করবে না?

আমরা বাঙালিরা সব করব। ইংরেজি ছবিতে অবাধ যৌন দৃশ্য দেখব। বিদেশিদের অজস্রবার চুমু খেতে দেখব। এখন এখানেও পার্কে আমরা তরুণ-তরুণীকে চুমু খেতে দেখি। তার জন্য নেটফ্লিক্সেও যেতে হবে না। কিন্তু সেটা বাংলা ছবিতে দেখতে পেলেই একেবারে রে রে করে উঠব! এ রকম আর কত দিন চলবে বলুন তো? আসলে প্রপার সেক্স এডুকেশনের অভাব।

আমি অস্ট্রেলিয়াতে তো যা খুশি পরে ঘুরে বেড়াতে পারি। কিন্তু যেই এখানে আসি আমাকে দেখতে ভাল লাগলেও চট করে সব রকমের পোশাক পরতে পারি না।

প্রথম সিনেমায় কিসিং সিনে কতটা স্বাচ্ছন্দ্য ছিলেন আপনি?

আমার কাছে কোনও দিন ছেলে-মেয়ে বলে আলাদা ইনহিবিশন ছিল না।আমি দামিনী বসুর ওয়ার্কশপ করেছি। আজ যেখানে বসে আপনার সঙ্গে কথা বলছি সেখানেই প্রতীমদা আমায় এই ‘লাভ আজ কাল পরশু’র চিত্রনাট্য পড়তে বলে। আমিও পড়তে পড়তেই চিত্রনাট্যের লোভে পড়ে যাই। যাই হোক, প্রথমেই এত বড় সুযোগ। প্রতীমদার ছবি। সঙ্গে অর্জুন আর পাওলিদি।

সত্যি কথা বলতে কি, ভেবেছিলাম কিসিং সিনটা কেমন হবে? প্রতীমদাকে বলেছিলাম, এই বাড়ির বউ দেখা আমাকে অন্তরঙ্গ দৃশ্যে দেখলে দর্শক কী ভাববে? তখন কি ইউনিটের সবাই থাকবে? নাকি অন্য কিছু হবে? তারপর দেখলাম, শুট করতে করতে জাস্ট হয়ে গেল। অন্য আর একটা সিনের মতোই।

অর্জুনকে কেমন লাগল?

দুর্ধর্ষ!

কী রকম?

দেখুন, আপনি আবার বিষয়টাকে অন্য রকম করে দেখবেন না।

মানে?

‘লাভ আজ কাল পরশু’র টিজার বেরনোর পর আমার আর অর্জুনের অন্তরঙ্গ দৃশ্য দেখে মিডিয়ায় যেভাবে সেটাকে তুলে ধরেছিল! কিছু বলার নেই। অর্জুন এত ট্যালেন্টেড একজন মানুষ। ওর একটা হ্যাপি ফ্যামিলি আছে। বাচ্চা আছে। ওর বউকে শুদ্ধু টেনে এনে...

সব মিডিয়ার দোষ? আপনি কী বলেন?

দেখুন আমি সেই গত চার বছর ধরে মরছি।

মানে!

মানে, খবরে প্রত্যেক বছরে আমাকে মারা হয়। ইউটিউবে যাবেন, দেখবেন ডেথ লিস্টে আছি আমি। আমার মা কত বার ফোন করে বলেছে, তুই হসপিটালে? আমি নাকি প্রত্যেক বছর সুইসাইড করি। এমনকি আমি যে ধারাবাহিকে কাজ করেছি সেখানকার এক অভিনেত্রী আত্মহত্যা করেছিল। আমার ছবি দিয়ে সেই খবর বেরিয়েছিল। আমার ডিভোর্স হল। মিডিয়া বলতে শুরু করল, আমার অন্য পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক আছে। তাই ডিভোর্স। মানে অন্য কোনও কারণ থাকতেই পারে না।

আমি মানছি সব দোষ মিডিয়ার নয়। মানুষ যা পড়তে চাইছে। যে ছবি যে গসিপের লাইক ভিউ বেশি মিডিয়া সেই স্টোরি করতে বাধ্য হচ্ছে। কিন্তু এক জন আফিম খেতে ভালোবাসলেই রোজ আমি তাকে আফিমই খাওয়াব? মিডিয়াই তো পারে মানুষকে তৈরি করা স্টোরি না দিয়ে বিকল্প স্টোরির অভ্যেস করাতে? মিডিয়ায় শিক্ষিত মানুষ আছেন তারাই পারবেন মোড় ঘোরাতে।

ধারাবাহিকের নায়িকা হয়ে সিনেমা করতে এসে আপনি কোন বিকল্প পথ ধরলেন?

আমি অর্জুনের সঙ্গে এ ছবিতে অভিনয় করব। তাই অর্জুনের সব ছবি দেখেছি। ও কোথায় কেমন রিঅ্যাকশন দেয় সেটা বোঝার চেষ্টা করেছি। প্রতীমদা কিছু বিদেশি ফিল্ম দেখতে বলেছিল। সেগুলো মন দিয়ে দেখেছি। খুব বড় চ্যালেঞ্জ ছিল এই ছবিটা আমার জন্য। এখানে তিনটে লাভ ফর্ম আছে। সেটা এক সুতোয় বাঁধা। আমার অভিনয়ে একটু লাউড চলে এলে তা হলে খুব ক্ষতি হয়ে যাবে। অর্জুন পাওলিদি প্রতীমদা মনেই হতে দেয়নি, এটা আমার প্রথম ছবি! কিন্তু আমার এখনও একটা ভয় থেকে যাচ্ছে।

ভয়?

আমার ফ্যান যারা তারা ধারাবাহিকে আমায় দেখে অভ্যস্থ। তারা এই আরবান ছবিকে কেমন করে নেবে? আমায় কেমন করে নেবে? আমি জানি তারা এখন হইচই দেখছে। তাদেরও স্বাদ বদলেছে। কিন্তু তারা এই ছবিতে পাখিকে দেখতে চাইলে খুব মুশকিল হবে।

আপনি সেটে নাকি মনিটর দেখতেন?

হ্যাঁ। আমি বসে থাকতে পারি না। পাওলিদিকে দেখতাম। প্রত্যেক ফ্রেমে পাওলিদি আলাদা। এত শক্তিশালী অভিনেত্রী। আমিও চেষ্টা করেছি অভিজ্ঞতা দিয়ে চরিত্র তৈরি করার।

জীবনের ভাঙনের জায়গা নিশ্চয়ই অভিনয়ে এসেছে?

হ্যাঁ, ভাঙতে গিয়ে দেখেছি সব কিছু ম্যাজিকাল নয়। স্বপ্নের মতো সফল নয়। জীবনে যেকোনও ধরনের শকের জন্য আমি প্রস্তুত।

শক কোথায়, নতুন বছর তো উল্লেখযোগ্য কাজ দিয়ে শুরু হচ্ছে?

উনিশটায় বেশ স্ট্রেসের মধ্যে কাটিয়েছি। এখন লাইফে কাজ আর ঘোরা।

মৈনাক ভৌমিকের ছবি করছেন না?

হ্যাঁ। ‘চিনি’ ক’দিনের মধ্যেই শুট শুরু হবে।