মিন্নিসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে রিফাত হত্যা মামলার অভিযোগপত্র দিল পুলিশ

নিজসব প্রতিবেদক ।।

মিন্নিসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে রিফাত হত্যা মামলার অভিযোগপত্র দিল পুলিশ
মিন্নিসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে রিফাত হত্যা মামলার অভিযোগপত্র দিল পুলিশ

আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে বরগুনায় রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দিয়েছে পুলিশ।

আজ রোববার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে জেলার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজীর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির।

পরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেন বরগুনার পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন।

অভিযোগপত্র থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় রিফাত হত্যা মামলার ১ নম্বর আসামি নয়ন বন্ডকে। পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ায় মামলা থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। অপর দিকে রোববারই উচ্চ আদালতে আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির জামিন স্থগিত চেয়ে আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।

রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মামলার মূল আসামি রিফাত ফরাজীসহ তার ভাই রিশান এই মামলায় অভিযুক্ত। তাদের সঙ্গে চন্দন সরকার, রাব্বি আকন, হাসান, অলি, টিকটক হৃদয়, সাগর, কামরুল ইসলাম সাইমুন, আরিয়ান শ্রাবণ, রাফিউল ইসলাম রাব্বি, তানভীর, নাজমুল হাসান, রাতুল সিকদার ও আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকেও অভিযুক্ত করা হয়েছে।

তবে মামলার এজাহারভুক্ত ৫ নম্বর আসামি মুসা বন্ড, ৭ নম্বর আসামি মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, ৮ নম্বর আসামি রায়হান এবং ১০ নম্বর আসামি রিফাত হাওলাদারকে এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এ মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ড গত ২ জুলাই পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন বিধায় মামলা থেকে তাকে অব্যহতি দেওয়া হয়।

গত ২২ আগস্ট আদালতে রিফাত হত্যা মামলার অভিযোগপত্র দাখিলের তারিখ ছিল। কিন্তু মামলার প্রতিবেদন তৈরি করতে না পারায় আদালতে সেদিন তা জমা দেওয়া হয়নি। আগামী মঙ্গলবার মামলার চার্জশিট দাখিলের দিন ধার্য করেন আদালত। এরই মধ্যে আজ তড়িঘড়ি করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ।

এর আগে গত ২৯ আগস্ট হাইকোর্টের বিচারপতি এম. এনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ দুই শর্তে মিন্নির জামিন মঞ্জুর করেন। তবুও আজ হাইকোর্টে জামিন পাওয়া রিফাতের স্ত্রী মিন্নির জামিন স্থগিত চেয়ে আপিল আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।

সেদিন বরগুনার পুলিশ সুপার (এসপি) মারুফ হোসেনের বিরুদ্ধে সময়মতো ব্যবস্থা নিতেও নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালনে সেদিন তার পর্যবেক্ষণে বলেন, রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় তার স্ত্রী মিন্নির দোষ স্বীকার মর্মে বরগুনার এসপি মারুফ হোসেন যে বক্তব্য দিয়েছেন, তার অযাচিত-অনাকাঙ্ক্ষিত। বিষয়টিকে ন্যায়-নীতি সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ তদন্তের পরিপন্থী বলেও মন্তব্য করেন আদালত।

বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ আরও বলেন, ‘বরগুণার আলোচিত এই হত্যা মামলাটি তদন্ত কার্য যেহেতু এখনো চলমান, সে কারণে এই মুহূর্তে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে আদালত বিরত থাকছে। তবে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক সময়মতো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।’

২৬ জুন স্ত্রী মিন্নির সামনে স্বামী রিফাতকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সে সময় স্বামীকে বাঁচাতে মিন্নির চেষ্টার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সারা দেশে আলোচনার সৃষ্টি হয়। পরের দিন রিফাত শরীফের বাবা দুলাল শরীফ ১২ জনকে আসামি করে যে মামলাটি করেন, তাতে মিন্নিকে প্রধান সাক্ষী করা হয়েছিল।

১৬ জুলাই মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বরগুনার মাইঠা এলাকার বাবার বাসা থেকে মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদ ও তার বক্তব্য রেকর্ড করতে বরগুনা পুলিশ লাইনসে নিয়ে যাওয়া হয়। দীর্ঘ ১১ ঘণ্টার জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রাত ৯টায় মিন্নিকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ।

পরদিন মিন্নিকে আদালতে হাজির করা হয়। আদালতে তার পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। আদালত মিন্নির পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেন আদালতের বিচারক মো. সিরাজুল ইসলাম গাজী।

এর পরদিন বরগুনার পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, মিন্নি তার স্বামী রিফাত শরীফ হত্যাকান্তে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। এ হত্যার পরিকল্পনার সঙ্গেও তিনি যুক্ত ছিলেন।

পরদিন বিকেলে মিন্নি একই আদালতে তার স্বামী রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে আদালত তাকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।