মা ইলিশ সংরক্ষণের জন্য ৯ থেকে ৩০ অক্টোবর ইলিশ ধরা ও ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ

পোস্টকার্ড প্রতিবেদক ।।

মা ইলিশ সংরক্ষণের জন্য ৯ থেকে ৩০ অক্টোবর ইলিশ ধরা ও ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ
মা ইলিশ সংরক্ষণের জন্য ৯ থেকে ৩০ অক্টোবর ইলিশ ধরা ও ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় মা ইলিশ সংরক্ষণের জন্য আগামি বুধবার (৯ অক্টোবর) থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন ইলিশ সারা দেশে ইলিশ-আহরণ, পরিবহন, মজুদ, বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রয় ও বিনিময় নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

সোমবার (৭ অক্টোবর) মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে ‘মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান ২০১৯’ উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু।

তিনি বলেন, মা ইলিশ এই সময় ৮০ শতাংশ ডিম পাড়ে। তারা ডিম পাড়ে মূলত মিঠাপানিতে। তাই আশ্বিনের পূর্ণিমার চারদিন আগে এবং পূর্ণিমার পর ১৮ দিন মোট ২২ দিন দেশের উপকূলীয় অঞ্চল, নদীর মোহনাসহ যেসব জেলা ও নদীতে ইলিশ পাওয়া যায়, সেখানে মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকবে। এ সময়ে ইলিশের ধরা, পরিবহন, মজুত, বাজারজাতকরণ ও ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ থাকবে।

মূলত স্বাচ্ছন্দ্যে ও বাধাহীনভাবে ইলিশের ডিম ছাড়ার মৌসুমকে গুরুত্ব দিয়ে সরকার এ সময়ে নদীতে সব ধরনের মাছ শিকারের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আশ্বিনের পূর্ণিমার আগে ও পরের সঠিক সময় নির্ধারণ করা খুবই জটিল বিষয়। আশ্বিনের ভরা পূর্ণিমার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়ায় অনেক সময় তারিখের হেরফের হয়। এ জন্য আগে ইলিশ ধরা সাত দিন বন্ধ থাকলেও পরে তা বাড়িয়ে ১৪ দিন এবং সর্বশেষ ২২ দিন করা হয়েছে। নিষিদ্ধ সময়ে ইলিশ পরিবহন, প্রদর্শন, গুদামজাতকরণ ও বাজারে বিক্রি করা যাবে না। করলে তা দণ্ডনীয় অপরাধ। এ সময় মৎস্য মন্ত্রণালয়, কোস্ট গার্ড ও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নদীতে অভিযান পরিচালনাসহ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এ সময় সাগর থেকে ইলিশ ডিম ছাড়ার জন্য নদীতে আসে। যদিও ইলিশ সারা বছরই ডিম ছেড়ে থাকে।
তবে উল্লিখিত সময়ে ৮০ শতাংশ মা ইলিশ মিঠাপানিতে ডিম ছাড়ে। আর তাই আশ্বিনের পূর্ণিমার চার দিন আগে এবং পূর্ণিমার পরে ১৮ দিন, এই ২২ দিন দেশের উপকূলীয় অঞ্চল ও নদীর মোহনাসহ যেসব জেলার নদীতে ইলিশ পাওয়া যায়, সেসব স্থানে মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকবে। বিশেষ করে ইলিশের অভয়ারণ্যগুলোয় এ নিষেধাজ্ঞা কড়াকড়িভাবে বহাল থাকবে।
অন্যদিকে ইলিশের জন্য মোট ছয়টি অভয়াশ্রম ঘোষণা করেছে সরকার। এগুলো হচ্ছে ভোলার চর ইলিশার মদনপুর থেকে চরপিয়াল পর্যন্ত মেঘনা নদীর ৯০ কিলোমিটার, ভোলার ভেদুরিয়া থেকে চররুস্তম পর্যন্ত তেঁতুলিয়া নদীর ১০০ কিলোমিটার, পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় আন্ধারমানিক নদীর ৪০ কিলোমিটার, চাঁদপুরের ষাটনল থেকে চর আলেকজান্ডার পর্যন্ত মেঘনার ১০০ কিলোমিটার, শরীয়তপুরের নড়িয়া থেকে ভেদরগঞ্জ পর্যন্ত পদ্মার ২০ কিলোমিটার, বরিশাল সদরের কালাবদর নদীর হবিনগর পয়েন্ট থেকে মেহেন্দীগঞ্জের বামনীরচর পয়েন্ট পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার, মেহেন্দীগঞ্জের গজারিয়া নদীর হাটপয়েন্ট থেকে হিজলা লঞ্চঘাট পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার এবং হিজলায় মেঘনার মৌলভীরহাট পয়েন্ট থেকে মেহেন্দীগঞ্জ সংলগ্ন মেঘনার দক্ষিণ-পশ্চিম জাঙ্গালিয়া পয়েন্ট পর্যন্ত ২৬ কিলোমিটার। এ ছাড়া আড়িয়াল খাঁ, নয়নভাঙ্গুলী ও কীর্তনখোলা নদীর আংশিক অভয়াশ্রমের অন্তর্ভুক্ত। বরিশালের আশপাশের ৮২ কিলোমিটার নদীপথ নিয়ে নতুন অভায়শ্রম ঘোষণা করেছে সরকার। এ ছয়টি অভয়াশ্রমের বাইরেও দেশের উল্লেখযোগ্য নদীগুলোয় এ সময় কেবল ইলিশের ডিম ছাড়ার জন্য মাছ ধরা বন্ধ থাকবে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কেউ ইলিশ ধরার চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ সময় কোস্ট গার্ডসহ নদীর তীরবর্তী জেলা প্রশাসন নদীগুলো কঠোরভাবে মনিটরিং করবে। এ ছাড়া মোবাইল কোর্টও পরিচালনা করবে জেলা প্রশাসন। নিষেধাজ্ঞার কারণে জেলেরা যত দিন মাছ ধরতে সাগরে যেতে পারছেন না, তত দিন সরকারের পক্ষ থেকে তাদের খাদ্য সহায়তা দেওয়া হবে। এ সময় তিন লাখ ৯৫ হাজার ৭০৯ জন কার্ডধারী জেলে প্রত্যেকে ২০ কেজি করে চাল পাবেন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের জিডিপিতে ইলিশের অবদান এক শতাংশ। গত কয়েক বছর ধরে পাঁচ লাখ টনের বেশি ইলিশ উৎপাদন করার রেকর্ড অব্যাহত রয়েছে। ইলিশ জাতীয় মাছ। বরাবরের মতো এবারও ইলিশের প্রজনন যাতে বাড়ে এবং সবাই যেন ইলিশ খেতে পারে, সে জন্য ডিম ছাড়ার সময় ইলিশ ধরা বন্ধ রাখা হবে।